ফাইল চিত্র।
রাতের নিয়ন্ত্রণ-বিধি আরও কঠোর ভাবে বলবৎ করার বার্তা দিল রাজ্য সরকার। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী মঙ্গলবার কলকাতা-সহ প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে এই নির্দেশ দিয়েছেন। যার মূল বক্তব্য, বিধি মানায় কোনও রকম শিথিলতা দেখা দিলে পদক্ষেপ করতে হবে প্রশাসনকে।
রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত যে নিয়ন্ত্রণ-বিধি চালু রয়েছে, তা অনেক জায়গাতেই ঠিকমতো মানা হচ্ছে না বলে জানতে পেরেছে নবান্ন। এ দিন তাই মুখ্যসচিবের নির্দেশ, রাতের নিয়ন্ত্রণ-বিধি কঠোর ভাবে পালন করাতে হবে। দরকারে বাড়াতে হবে নাকা তল্লাশি। বিধি লঙ্ঘিত হলে কঠোর পদক্ষেপ করার বার্তাও দিয়েছেন তিনি।
কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা রুখতে যথাসম্ভব প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য সরকার। নিয়ন্ত্রণ-বিধি বলবৎ থাকলেও তা যে যথাযথ ভাবে মানা হচ্ছে না, সেই অভিযোগ বার বারই উঠছে। এই প্রবণতা চলতে থাকলে সরকারের উদ্যোগ ধাক্কা খাবে। তাই নাকা তল্লাশির পাশাপাশি প্রয়োজনে এলাকায় ঘুরে ঘুরে পরিস্থিতি দেখতে বলা হয়েছে প্রশাসনের কর্তাদের।
জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেরই বক্তব্য, এ কাজে জরুরি পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়। সেই ঘাটতি কাটানোর বার্তাও মুখ্যসচিবের নির্দেশের মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
ইতিমধ্যেই অবশ্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বাজার কমিটিগুলির সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা প্রশাসনগুলি। বাজার ও দোকানের ব্যবসায়ীরা যাতে সরকারি বিধি মেনে চলেন, তার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও পর্যায়ক্রমে বাজার দোকান খোলা বা বন্ধ রাখার ব্যবস্থাও হচ্ছে।
এ দিকে, নবান্নের নির্দেশ পাওয়ার পরেই রাতের নিয়ন্ত্রণ-বিধি আরও কঠোর ভাবে বলবৎ করার জন্য নির্দেশিকা জারি করেছে লালবাজার। সূত্রের খবর, ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, শহরের বড় বড় রাস্তা এবং সেগুলির সংযোগকারী প্রতিটি রাস্তায় নজরদারি বাড়াতে হবে। চালাতে হবে নাকা তল্লাশিও।
করোনা রুখতে রাতে বিধিনিষেধ চালু থাকলেও সাধারণ মানুষ থেকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তা লঙ্ঘন করছে বলে বার বারই অভিযোগ উঠছে। কলকাতার একাধিক এলাকায় রাতের দিকে নিয়ম ভেঙে বিভিন্ন হোটেল, রেস্তরাঁ ও পানশালা খোলা থাকছে বলেও অভিযোগ। পুলিশ জানিয়েছে, এর জন্য আবগারি দফতরকে সঙ্গে নিয়ে স্কোয়াড তৈরি করে নাকা তল্লাশি চালাতে বলা হয়েছে থানাগুলিকে। সেই সঙ্গে ওসিদের বলা হয়েছে, নিজেদের এলাকায় ঘুরে তাঁরাও যেন দেখেন, কোথাও করোনা-বিধি ভাঙা হচ্ছে কি না। তেমনটা হতে দেখলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে লালবাজার।
পুলিশের এক কর্তা জানান, এ দিনের ওই নির্দেশে এটাও বলা হয়েছে যে, এখনই সতর্ক না হলে করোনা পরিস্থিতি আবার হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। সে কথা মাথায় রেখে করোনা-বিধি বলবৎ করতে বাজার কমিটিগুলির সঙ্গেও পর্যালোচনা বৈঠক করতে বলা হয়েছে।
লালবাজার জানিয়েছে, নৈশ কারফিউ কার্যকর করতে ট্র্যাফিক পুলিশ এবং থানাগুলি প্ৰতি রাতে দফায় দফায় নাকা তল্লাশি চালাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাস্তায় বেরিয়ে ধরা পড়লেই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনে কয়েক হাজার এমন গাড়ি আটকে মালিক বা চালকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে। পুলিশের এই নজরদারি চলা সত্ত্বেও বিভিন্ন এলাকায় রাত ৯টার পরে হোটেল-রেস্তরাঁ, এমনকি সাধারণ দোকান খোলা থাকার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি, ওই সময়ে রাস্তায় কিছু গণপরিবহণেরও দেখা মিলছে বলে অভিযোগ।
পুলিশের একাংশের দাবি, গত বারের চেয়ে এ বারের পরিস্থিতি আলাদা। এখন সারা দিন সব কিছু খোলা। তাই নজরদারিও সব সময়ে এক রকম থাকে না। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে রাতেও ব্যবসা চালিয়ে যেতে চাইছেন অনেকে।