drug addiction

Christmas: বড়দিনে মাদক ধরতে নজরে সিট বেল্ট, জুতোর হিল আর খোঁপাও

উৎসব এবং বর্ষশেষের আগের এই সময়ের জন্য আলাদা করে মাদক দমন পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৫২
Share:

প্রতীকী চিত্র।

মাদকের খোঁজে পুলিশের তল্লাশি চলছে। অথচ কানের উপর থেকে ঢাউস হেডফোনটা নামাচ্ছেন না ডিজে! পুলিশের নির্দেশ মেনে আর পাঁচ জনের মতোই তিনিও বহু ক্ষণ এক জায়গায় জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে। এ দিকে ঘণ্টাখানেক তল্লাশির পরেও কিছু না পেয়ে হাল ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম তদন্তকারীদের। কিন্তু মাদক তদন্তে তো সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হলে এগোনো হয় না! পুলিশকর্তারা বলেন, ‘‘কারও কাছে মাদক আছে কি না, নিশ্চিত না হয়ে আমরা তাঁকে ছুঁয়েও দেখি না। হোমওয়ার্ক ছাড়া এক পা-ও চলা বারণ।’’ তা হলে কি হোমওয়ার্কেই ভুল হয়েছে?

Advertisement

এই ভাবনাচিন্তার মধ্যেই হঠাৎ এক পুলিশকর্মীর নজর গেল ডিজে-র হেডফোনের দিকে। বলে বসলেন, ‘‘এখনও কি গান চলছে? হেডফোনটা খোলো ভাই!’’ কথাটা শুনেই যেন আরও বেশি জড়োসড়ো ডিজে। এর পরে যত বার তাঁকে হেডফোন খুলতে বলা হচ্ছে, তিনি তত বারই না করছেন! শেষে জোর করে খোলাতেই কান এবং হেডফোনের মাঝের অংশ থেকে বেরিয়ে এল দু’টি প্লাস্টিকের প্যাকেটে মোড়া রঙিন ট্যাবলেট। যা আদতে নিষিদ্ধ মাদক এমডিএমএ!

গত বছর মধ্য কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলের ডিস্কোথেক-এ হানা দিয়ে এ ভাবেই মাদক ধরার অভিজ্ঞতার গল্প শোনাচ্ছিলেন লালবাজারের মাদক দমন শাখার এক পুলিশকর্মী। হেডফোনের পরে ডিজে-র সিডি-র বক্স, সাউন্ড মিক্সারের মতো একাধিক যন্ত্র থেকেও সে দিন মাদক উদ্ধার হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন তিনি। ওই বছর বিমানবন্দরেও পার্টি ফেরত এক অভিনেত্রীর খোঁপা থেকে উদ্ধার হয়েছিল মাদক।

Advertisement

সেই সব অভিজ্ঞতা মনে রেখে চলতি বছরেও বড়দিনের উৎসব এবং বর্ষশেষের আগের এই সময়ের জন্য আলাদা করে মাদক দমন পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। এ জন্য বেশি নজরদারি চালানো হচ্ছে শহরের হোটেল, পাব, বার এবং ডিস্কোথেক-এ। শুধুমাত্র ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রিট এবং মধ্য কলকাতার হোটেল এবং বারগুলির জন্যই বড়দিনের রাতে প্রায় সাড়ে চারশো পুলিশকর্মী রাখা হচ্ছে সাদা পোশাকে। পার্টি বেশি হয়, শহরের এমন এলাকায় আগামী দু’সপ্তাহ থাকছে পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল। এর সঙ্গেই যৌথ ভাবে কাজ করার কথা নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরোর (এনসিবি) অফিসারদের। এনসিবি-র এক কর্তা জানান, তাঁরা বিভিন্ন সময়ে খবর পান যে, শহরের অনেক ব্যক্তিগত পার্টিতে অবাধে বিকোচ্ছে এমডিএমএ-র মতো মাদক। শুধু ব্যক্তিগত পার্টি নয়, ডিস্কোথেক-এও যে পার্টি-ড্রাগের রমরমা, তা স্বীকার করে নেন ওই কর্তা। তিনি বলেন, “এই ধরনের পার্টিতে বহু ক্ষেত্রেই সেলব্রিটিরা হাজির থাকেন। আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত নই যে, সেলেবরা নিজেরা পার্টি-ড্রাগ ব্যবহার করছেন কি না। তবে ওই সব পার্টির সঙ্গে সংযুক্ত অনেকেই মাদকের কারবারে যুক্ত।”

তদন্তকারীদের দাবি, এই মুহূর্তে মাদকের কারবার চলছে একাধিক গোপন পদ্ধতিতে। গত কয়েক বছরে ‘কুরিয়র’ পরিষেবা যত উন্নত হয়েছে, ততই ওই পথে বিদেশ থেকে শহরে মাদক আনানো বেড়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। কখনও তা এসেছে প্লাস্টিকের পুতুলের পেটে, কখনও বা জুতোর হিলে লুকিয়ে। কখনও আবার মেক-আপের পাউডার ফেলে সেই বাক্সেই প্রসাধনী সামগ্রীর মতো করে সাজিয়ে মাদক আসছে।

সাইবার বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এ জন্য দেদার ব্যবহার হচ্ছে ‘ডার্ক ওয়েব’। মাদক কারবারিদের বেশির ভাগই টর ব্রাউজ়ার দিয়ে ডার্ক ওয়েবে ঢুকছে। সেটি এক ধরনের গোপন ইন্টারনেট ব্যবস্থা। টর ব্রাউজ়ারে ব্যবহারকারীর আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) অ্যাড্রেস গোপন থাকে। এই পদ্ধতিতে ডার্ক ওয়েবে ঢুকলেই হাতে চলে আসে মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র, নিষিদ্ধ পর্নোগ্রাফির মতো একাধিক জিনিস। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘ডার্ক ওয়েবে বিটকয়েনের মাধ্যমে চলতে থাকে লেনদেন। বিটকয়েন এক ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি। যার দাম ওঠানামা করে। কখনও প্রতি কয়েনের মূল্য ভারতীয় টাকায় কয়েক লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। এত টাকা দিয়ে আনা মাদক বহু হাত ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছয়। ডার্ক ওয়েব থেকে ধরা যেমন কঠিন, তেমনই কঠিন কুরিয়র ধরা। কারণ, কোনও কুরিয়র সংস্থাই ভিতরে কী রয়েছে, খাম খুলে দেখে না।’’

তা হলে উপায় কী? তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সাদা পোশাকে নজরদারি আর চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত তল্লাশি চালানোই মাদক ধরার পথ। তল্লাশি থেকে বাদ দেওয়া যাবে না গাড়ির স্টিয়ারিং কভার বা সিট বেল্টের মতো আপাত নিরীহ বস্তুকেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement