আর জি কর এর ঘটনার প্রতিবাদে হাওড়া ময়দান থেকে মন্দিরতলা পর্যন্ত বিভিন্ন্ কলেজের ছাত্র ছাত্রীও এলাকার সাধারণ মানুষরা এক প্রতিবাদী মিছিল করে। ছবি দীপঙ্কর মজুমদার
কলকাতা বা রাজ্যেরই শুধু নয়, আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে জনমানসে ভুয়ো তথ্য ছড়াতে সক্রিয় পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের একাধিক সমাজমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট। সেগুলি চিহ্নিত করে এ বার সমন পাঠাচ্ছে লালবাজার। জানা গিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৮০ জনকে সমন পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে ৩০টিরও বেশি অ্যাকাউন্ট পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের বলে লালবাজার সূত্রের খবর। একাধিক ভুয়ো অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেখান থেকেও ভুয়ো তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তাই সেগুলিকেও চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে বলে লালবাজার সূত্রে জানানো হয়েছে।
আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে আন্দোলনের তেজ যত বেড়েছে, ততই তার উত্তাপ ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে। সেখানে প্রতিবাদের পাশাপাশি নানা ভুয়ো তথ্য এমন ভাবে ছড়িয়েছে যে, ক্রমশ বেড়েছে বিভ্রান্তি। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে গেলেও এ সংক্রান্ত ভুয়ো তথ্য ছড়ানো ঠেকাতে সক্রিয় হয়েছে লালবাজার। তাদের তরফে শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করার কাজ ও সমন পাঠানো। লালবাজার সূত্রের খবর, প্রায় ৩০টি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অ্যাকাউন্ট মিলেছে। কয়েকটি অ্যাকাউন্ট থেকে মূলত ইচ্ছাকৃত ভাবে বিভ্রান্তি ছড়াতেই ওই ভুয়ো তথ্য ছড়ানো হয়েছিল। এ ছাড়া উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের একাধিক অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করে তাঁদেরও সমন পাঠানো হয়েছে।
এ দিকে, আর জি কর-কাণ্ডের নির্যাতিতার ছবি সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে তালতলা ও বেলেঘাটা থানার পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে নির্যাতিতার ছবি প্রকাশ্যে আনার পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রীর নামে কুরুচিকর মন্তব্য করার অভিযোগও ছিল। বিষয়টি নজরে আসতেই তালতলা ও বেলেঘাটা থানা দু’টি পৃথক মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে। এর পরেই গ্রেফতার করা হয় ওই দু’জনকে। যদিও সোমবার তাঁদের জামিন দিয়েছে আদালত। এ ছাড়াও ভুয়ো তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে দুই চিকিৎসক কুণাল সরকার এবং সুবর্ণ গোস্বামীকে সোমবার তলব করেছিল লালবাজার। এ দিন দুপুরে তাঁরা লালবাজারে পৌঁছলে পুলিশকর্তারা তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন।
পাশাপাশি, রবিবার সল্টলেকে ডার্বি সমর্থকদের মিছিলে গোলমাল পাকানোর পরিকল্পনা করার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া গত ১৪ অগস্ট মধ্যরাতে, মেয়েদের রাত দখলের সময়ে আর জি করে ঢুকে হামলা, ভাঙচুর চালানোর ঘটনায় ধরপাকড় অব্যাহত। নতুন করে আরও ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে লালবাজার। এই নিয়ে ওই ঘটনায় ধৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৭। ধৃতদের মধ্যে তিন জনকে এ দিন শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে তাঁদের আগামী ২৪ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
লালবাজার সূত্রের খবর, ওই হামলার ঘটনায় প্রায় এক
হাজার জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের ভূমিকা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তাঁরা এ-ও জানতে পেরেছেন, বেশ কয়েক জন ইতিমধ্যেই ভিন্ রাজ্যে পালিয়েছেন। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘হামলার সময়ের ভিডিয়ো দেখে প্রত্যেকের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভিডিয়োয় ভাঙচুর করার প্রমাণ পেলে তবেই তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এখনও বেশ কয়েক জন অধরা রয়েছেন। তাঁদের খোঁজ চলছে।’’