লালবাজার। —ফাইল চিত্র।
লালবাজারের তরফে শহরের সমস্ত থানা ও ট্র্যাফিক গার্ড-সহ কলকাতা পুলিশের সমস্ত শাখায় একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা ঘিরে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে (আর ও টি পি মেমো নম্বর ২৫২) জানানো হয়েছে, তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত যে পুলিশকর্মীরা দৃষ্টান্তমূলক কাজ করেছেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করে লালবাজারে পাঠাতে হবে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ওই তালিকা তৈরি করে ১২ ফেব্রুয়ারি, দুপুর বারোটার মধ্যে লালবাজারে পাঠানোর কথা ছিল সংশ্লিষ্ট থানা ও ট্র্যাফিক গার্ডের ওসিদের। লালবাজার সূত্রের খবর, তফসিলি জনজাতির অন্তর্ভুক্ত কলকাতা পুলিশের যে কর্মীরা বিশেষ নজির রেখেছেন, তাঁদের পুরস্কৃত করা হবে। বৃহস্পতিবার শহরের বিভিন্ন থানা ও ট্র্যাফিক গার্ডে ওই বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, এখনও কয়েকটি থানা, ট্র্যাফিক গার্ড ওই বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে অবগত নয়। সেখান থেকে জানানো
হয়েছে, ই-মেল দেখা হয়নি। তবে বেশির ভাগ থানা ও ট্র্যাফিক গার্ডের ওসিরা জানান, ওই বিজ্ঞপ্তি তাঁরা পেয়েছেন। সেই মতো নামের তালিকাও পাঠিয়ে দিয়েছেন লালবাজারে।
সম্প্রতি রাজ্য বাজেটে ‘বন্ধু’ এবং ‘জয় জহার’ নামাঙ্কিত প্রকল্পে তফসিলি জাতি ও জনজাতি সম্প্রদায়ের প্রবীণ মানুষদের জন্য ১০০০ টাকা করে মাসিক পেনশন দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে।
একটি সম্প্রদায়ের জন্য এক গুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা করার পিছনে একটি সুচিন্তিত রাজনৈতিক পদক্ষেপ রয়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। তাঁদের ধারণা, গত লোকসভা নির্বাচনে এই সম্প্রদায়ের ভোট হাতছাড়া
হওয়ায় প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁদের ফের টেনে আনতে চাইছে রাজ্যের শাসকদল। বাজেটের পরে
কলকাতা পুলিশের তরফে এই বিজ্ঞপ্তি জারির পিছনে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছেন প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার। তিনি বলেন, ‘‘চাকরি পাওয়ার পরে যে কোনও পুলিশকর্মীকে সমান চোখে দেখা উচিত। কেউ ভাল কাজ করলে জাতপাত না দেখে কাজকেই গুরুত্ব দেওয়া দরকার। শুধু তফসিলি জনজাতির কর্মীদের তালিকা চেয়ে পাঠানোয় অন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।’’ তাঁরা সাফ কথা, ‘‘আমার কর্মজীবনে এমন বিজ্ঞপ্তির কথা জানা নেই। এর ফলে পুলিশ বাহিনীর ঐক্যে চিড় ধরার আশঙ্কা রয়েছে।’’ কলকাতার এক ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি-র কথায়, ‘‘এমন অদ্ভুত বিজ্ঞপ্তি আমার কর্মজীবনে কখনও দেখিনি। কেবল তফসিলি জনজাতির কর্মীদেরই বা কেন বাছা হচ্ছে, তা-ও আমার অজানা।’’
কেবল তফসিলি জনজাতির পুলিশকর্মীদের জন্য এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হল কেন? উত্তরে
কলকাতা পুলিশের বিশেষ কমিশনার জাভেদ শামিম বলেন, ‘‘এই রকম কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। কোনও পুরস্কারও দেওয়া হচ্ছে না।’’ যদিও কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিষয়টি প্রকাশ করতে চাই না।’’