লালবাজার। —ফাইল চিত্র।
বছরের অন্তিম মাস জুড়ে যে উৎসব চলে, সেই উৎসব ঘিরে বিধিভঙ্গ ও দুর্ঘটনার সংখ্যা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে লালবাজারের। গত বছরের ডিসেম্বরেও শহরে কার্যত লাফ দিয়েছিল দুর্ঘটনার সংখ্যা। এ বছর তাই সেই সংখ্যাটা কমানোকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন লালবাজারের ট্র্যাফিক-কর্তারা। উৎসবকে কেন্দ্র করে বিধিভঙ্গ এবং দুর্ঘটনা ঠেকাতে নেওয়া হচ্ছে আগাম প্রস্তুতিও। কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, উৎসবের কয়েক দিনে ‘নরম’ পুলিশি ব্যবস্থায় দুর্ঘটনা এবং মৃত্যু আটকানো যাবে তো?
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কলকাতা পুলিশ এলাকায় নথিভুক্ত দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ১৮৪। ওই সব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন ১৭৪ জন। তাঁদের মধ্যে ৯৩ জনের আঘাত গুরুতর বলে জানিয়েছিল লালবাজার। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ১১ জনের। লালবাজার সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, গোটা ডিসেম্বরে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা অন্যান্য মাসের তুলনায় কম হলেও নথিভুক্ত ছোট-বড় দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল দ্বিতীয়
সর্বাধিক। তবে, ২০২১ সালে করোনা অতিমারির কারণে একাধিক বিধিনিষেধ থাকায় ডিসেম্বরে নথিভুক্ত দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল তুলনামূলক ভাবে বেশ কম। ওই বছর ১৪৩টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছিল গোটা মাসে। আহতের সংখ্যাও ছিল ২০২২-এর তুলনায় অনেক কম, ১৩৩ জন। কিন্তু গত বছর কোনও বিধিনিষেধ না থাকায় এক ধাক্কায় বাড়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা। এ বছর তাই দুর্ঘটনা এবং আহতের সংখ্যা কমাতে চাইছেন কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা।
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, এমনিতেই যে কোনও উৎসব ঘিরে শহরে পথের বিধিভঙ্গের নানা অভিযোগ ওঠে। যে ‘রোগ’ থেকে বাদ যায় না বছর শেষের উৎসবও। বরং মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বা বেপরোয়া ভাবে রাস্তায় নেমে গতির ঝড় তোলার অভিযোগ আসে বার বার। মোটরবাইকের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ সব চেয়ে বেশি আসে বলে পুলিশের একাংশের দাবি। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্মী বলেন, ‘‘ঝড়ের গতিতে গাড়ি ছুটতে থাকে। কে মত্ত অবস্থায় আছেন আর কে স্বাভাবিক, দাঁড় করিয়ে যে পরীক্ষা করা হবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার উপায় থাকে না। পরিস্থিতি এমন হয় যে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডিউটি করতেই ভয় লাগে।’’
প্রাথমিক ভাবে কলকাতা পুলিশের কর্তারা বছর শেষে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পিছনে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোকেই দায়ী করছেন। বড়দিন এবং বর্ষবরণ-সহ নানা অনুষ্ঠান থাকায় রাতের দিকে বিধি ভাঙার প্রবণতাও থাকে বেশি। রোগের ‘দাওয়াই’ হিসেবে রাস্তায় নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার দিয়ে পরীক্ষা বাড়ানোর পরিকল্পনাও করা হচ্ছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। সেই সঙ্গে, শহরে গোটা মাস জুড়ে নাকা-তল্লাশির ব্যবস্থা আরও বাড়ানো যায় কি না, তা-ও বিবেচনা করা হচ্ছে। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘শহরে দুর্ঘটনা কমানো যায় কী ভাবে, তা নিয়ে সারা বছর ধরেই নানা পরিকল্পনা থাকে। উৎসব বা বর্ষবরণের সময়েও দুর্ঘটনা কমাতে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। দ্রুত ট্র্যাফিক র্ডগুলিকে এই সংক্রান্ত নির্দেশও দেওয়া হবে।’’