—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
লেক গার্ডেন্সের হোটেলে গুলি চালানোর আগে খাবার অর্ডার করেছিলেন রাকেশকুমার শাহ। তিনি মত্ত অবস্থায় ছিলেন বলে তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে পুলিশ। রাকেশের লেখা সুইসাইড নোট নিয়ে এখনও কাটেনি জট। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘দু’জন মিলে আত্মহত্যা করতে চলেছি।’’ পুলিশ মনে করছে, ভুল পথে চালিত করার জন্যই এ সব করা হয়েছিল। যাতে সকলে ভাবেন, দু’জনেই আত্মহত্যা করেছেন।
পুলিশ মনে করছে, রাকেশের সঙ্গিনীও ‘ভুল’ তথ্য দিচ্ছেন। তিনি কিছু গোপন করার চেষ্টা করছেন। তরুণী কী কাজ করতেন, সেটাও সঠিক ভাবে বলছেন না। পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, তরুণীকে নিজেদের যুগল ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করছিলেন যুবক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, রাকেশকুমার শাহ নামের তরুণ ওই তরুণীকে শেষ বার দেখা করার কথা বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, তার পরে পরে আর কখনও কিছু বলবেন না। সে কারণেই তরুণী লেক গার্ডেন্সের হোটেলে দেখা করতে গিয়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। রাকেশের কাছ থেকে পাঁচ পাতার সুইসাইড নোট মিলেছে। রোমান হরফে বাংলায় লেখা রয়েছে সেই নোট। সেখানে এমন অনেক কথা রয়েছে, যার সঙ্গে বাস্তবের মিল পাচ্ছেন না তদন্তকারীরা।
বুধবার বিকেলে লেক গার্ডেন্সের একটি অতিথিশালায় সঙ্গিনীর পেটে গুলি চালিয়ে নিজের মাথায় গুলি চালান রাকেশ। গুরুতর জখম অবস্থায় ওই তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে সেখানে গিয়ে তরুণীর সঙ্গে কথা বলে দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্বের কথা জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। একই সঙ্গে তাঁরা এ-ও জেনেছেন যে, ওই তরুণীকে লেক গার্ডেন্সে আসার জন্য এক রকম জোর করেছিলেন রাকেশ। তাঁদের সম্পর্কে দূরত্ব কেন তৈরি হল, কেনই বা জোর করে প্রেমিকাকে ডেকে পাঠিয়ে গুলি করলেন রাকেশ, সেই সব প্রশ্নের জবাব খুঁজছিল পুলিশ। অবশেষে ওই ঘটনার ‘মিসিং লিঙ্ক’ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। দু’জনের সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি টের পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। তাঁর কারণেই সঙ্গিনীর সঙ্গে দূরত্ব বৃদ্ধি পেয়েছিল রাকেশের। ‘সুইসাইড নোট’ থেকে বিভিন্ন সূত্র জোড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই তরুণীর সঙ্গে সম্প্রতি অন্য এক যুবকের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল। যা পছন্দ করছিলেন না রাকেশ। দু’জনের দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। এমনকি, রাকেশ এ-ও আশঙ্কা করছিলেন যে, ওই তৃতীয় ব্যক্তির জন্য তাঁর সঙ্গিনী তাঁকে ছেড়ে চলে যেতে পারেন। পুলিশের ধারণা, ওই আশঙ্কা থেকেই বুধবার প্রেমিকাকে ডেকে সরাসরি কথা বলেন রাকেশ। যা গড়ায় বচসায়। পুলিশ সূত্রে খবর, যে ‘সুইসাইড নোট’টি তদন্তকারীরা উদ্ধার করেছেন, সেটি ছিল রাকেশের ব্যাগের মধ্যে। যা থেকে পুলিশের ধারণা, পূর্বপরিকল্পনা করেই ওই ‘সুইসাইড নোট’ লিখে লেক গার্ডেন্সের ওই হোটেলে অস্ত্র নিয়ে পৌঁছেছিলেন রাকেশ। পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ তেমনই বলছে। কারণ, প্রেমিকাকে গুলি করার কিছু ক্ষণের মধ্যেই নিজের মাথায় গুলি করে আত্মঘাতী হন রাকেশ। ওই সময়ের মধ্যে ‘সুইসাইড নোট’ লিখে নিজের ব্যাগে রাখা সম্ভব নয় বলেই মত তদন্তকারীদের। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।