মর্মান্তিক: জেসিবি মেশিন এনে পাইপ ভেঙে উদ্ধার করা হয় সাহিনের দেহ। শনিবার, বানতলা চর্মনগরীতে। নিজস্ব চিত্র
নবনির্মিত ট্রিটমেন্ট প্লান্টের নিকাশি নালার ভিতরে রং করতে নেমে মৃত্যু হল এক শ্রমিকের। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন আরও দুই শ্রমিক। শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার বানতলা চর্মনগরীতে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সাহিন গাজি (২০)। অসুস্থ দুই শ্রমিকের নাম সাবির কয়াল ও নাসির মোল্লা। সাহিন ও নাসিরের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ থানার কুমারজোল গ্রামে। সাবির উত্তর ২৪ পরগনার ন্যাজাট থানার মঠবাড়ির বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বানতলা চর্মনগরীতে পুরনো জল পরিশোধন প্লান্টের পাশাপাশি আরও একটি নতুন জল পরিশোধন প্লান্ট তৈরি করছে কেএমডিএ। মূলত বিভিন্ন কারখানার চামড়া শোধন করার নোংরা জল পাইপলাইনের মাধ্যমে ওই পরিশোধন প্লান্টে জমা হবে। সেখানে ওই জল পরিশোধিত হয়ে ফের বিভিন্ন কারখানায় সরবরাহ করা হবে চামড়া শোধনের জন্য। প্লান্টের জন্য কেএমডিএ বানতলা চর্মনগরীর তিন নম্বর গেটের কাছে বেশ কিছু দিন ধরে ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন বসানোর কাজ করছে।
এ দিন পাইপলাইনের সঙ্গে যুক্ত ম্যানহোলগুলিতে রং করার কাজ করছিলেন কয়েক জন শ্রমিক। সেই সময়ে চর্মনগরীর মূল গেটের বাইরে পাইপের ভিতরে রং করতে নেমে অসুস্থ বোধ করতে থাকেন সাবির ও নাসির। তাঁরা উপরে ওঠার জন্য চিৎকার করতে শুরু করেন। তাঁদের বাঁচাতে ভিতরে নামেন সাহিন। সাবির ও নাসিরকে কোনও রকমে উপরে তুলে দিতে পারলেও নিজে ভিতরেই আটকে পড়েন তিনি। অন্য শ্রমিকেরা চেষ্টা করলেও সাহিনকে তুলে আনতে পারেননি। সঙ্কটজনক অবস্থায় সাবির ও নাসিরকে কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। খবর দেওয়া হয় কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানায়। পুলিশও চেষ্টা করে সাহিনকে তুলতে ব্যর্থ হয়। পরে খবর দেওয়া হয় দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে। কিন্তু পাইপের ভিতরে আটকে পড়া সাহিনকে উদ্ধার করতে গিয়ে রীতিমতো বেগ পেতে হয় তাদের। পরে একটি জেসিবি মেশিন নিয়ে এসে ভেঙে ফেলা হয় নিকাশি নালার পাইপ ও ম্যানহোল। আটকে পড়ার দীর্ঘক্ষণ পরে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সাহিনকে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে।
কর্মরত শ্রমিকদের অভিযোগ, ঝুঁকিপূর্ণ ওই কাজে তাঁদের ন্যূনতম নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি ঠিকাদার সংস্থার পক্ষ থেকে। পরিশোধন প্লান্টের ভিতরে নেমে কাজ করতে গেলে কী কী সতর্কতামূলক ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন জানতে চাইলে এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, ‘‘সাধারণত যাঁরা পরিশোধন প্লান্টের ভিতরে নেমে কাজ করেন, তাঁদের জন্য অক্সিজেন মাস্ক, সেফটি বেল্ট, চোখে ওয়াটারপ্রুফ চশমা, মাথায় হেলমেট-সহ অন্যান্য ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।’’ এ দিন বানতলা চর্মনগরীর নতুন জল পরিশোধন প্লান্টে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য এ সবের কিছুই ছিল না বলে অভিযোগ। তদন্তকারী আধিকারিকেরা জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, শ্রমিকদের এই সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়নি। কর্তৃপক্ষের একাংশের গাফিলতির কারণেই দুর্ঘটনা ঘটল বলে দাবি করেছেন শ্রমিকেরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঠিকাদার সংস্থার আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
মৃত সাহিন গাজির দাদু অহেদ আলি গাজি এ দিন বলেন, ‘‘দুই সহকর্মীর প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে ছেলেটা নিজে অকালে চলে গেল। অথচ ওকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে এল না।’’