অগ্নিযোগ: কুমোরটুলিতে বার্নার জ্বালিয়ে চলছে মাটির মুখ শুকোনোর কাজ। নিজস্ব চিত্র
পুজোর বাকি আর মাত্র ১৭ দিন। কিন্তু কর্মব্যস্ত কুমোরটুলিতে কেরোসিনের অভাবে কপালে ভাঁজ মৃৎশিল্পীদের। সরকারি তরফে এখনও পর্যন্ত কেরোসিন না পাওয়ায় সঙ্কটে ভুগছেন তাঁরা।
প্রতিমা শুকোনো, প্রাকৃতিক রং তৈরি, কর্মীদের রান্নাবান্না থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে এই সময়ে কুমোরটুলিতে কেরোসিনের চাহিদা তুঙ্গে। সরকারের থেকে কেরোসিন পেলে বর্তমানে
লিটারপিছু তার দাম পড়ে ৩০ টাকা। অথচ খোলা বাজার থেকে কিনলে কেরোসিনের দাম পড়ে প্রায় দ্বিগুণ। তাই পুজোর মুখে এখনও সরকার কেরোসিন না দেওয়ায় প্রতিমা তৈরির খরচ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী অখিল পালের অভিযোগ,
‘‘বাইরে থেকে চড়া দামে কেরোসিন কিনতে হচ্ছে। তাতে সমস্যা হচ্ছে।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক শিল্পীর খেদ, ‘‘গত বছরে জিএসটির জন্য প্রতিমা তৈরির সরঞ্জামের দাম বেড়ে গিয়েছে। তার উপরে কেরোসিন না পাওয়ায় আমরা আর্থিক কষ্টে ভুগছি।’’
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সাল পর্যন্ত পুজোর মরসুমে (দুর্গাপুজো থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো পর্যন্ত) সরকারের পক্ষ থেকে মাথাপিছু প্রায় ৩০ লিটার কেরোসিন দেওয়া হত।
কিন্তু গত তিন বছর ধরে কেরোসিনের আকাল ভাবিয়ে তুলেছে কুমোরটুলিকে। গত বছর খাদ্য সরবরাহ দফতরের তরফে শিল্পীপিছু দু’লিটার করে কেরোসিন তেল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ওই পরিমাণ কেরোসিন প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্যমাত্র। তাই সেই তেল নেননি কুমোরটুলির শিল্পীরা।
কিন্তু কুমোরটুলি পর্যাপ্ত কেরোসিন তেল পাচ্ছে না কেন?
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দুষছেন কেন্দ্রীয় সরকারকেই। তাঁর ব্যাখ্যা, ২০১৪ সাল পর্যন্ত কেন্দ্র রাজ্যকে বছরে ৯০ হাজার কিলোলিটার তেল দিত। কিন্তু তার পরে সেই পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫৫ হাজার কিলোলিটারে। খাদ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন রাজ্যবাসীরা। বছরে ৩৫ হাজার কিলোলিটার কেরোসিন তেল সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার কারণে কুমোরটুলির শিল্পীদের বরাদ্দও কমানো হয়েছে। আগের মতো শিল্পীপিছু ৩০ লিটার তেল দিতে হলে অন্য জেলার বরাদ্দ কমাতে হয়। সেটাও অসম্ভব।’’ কুমোরটুলির শিল্পীদের কথায় মাথায় রেখে এ বছরে তাই শিল্পীপিছু ৪ লিটার করে কেরোসিন তেল দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু।
তবে এতে অবশ্য মন গলছে না মৃৎশিল্পীদের। কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সাংস্কৃতিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিৎ সরকার
বলছেন, ‘‘মাত্র চার লিটার তেল নিয়ে আমাদের কী হবে? শিল্পীদের কাছে এখন কেরোসিনের ভীষণ চাহিদা রয়েছে। তাই কেরোসিনের জন্য স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী শশী পাঁজাকে আগে থেকে জানিয়েছিলাম। তাতেও লাভ হয়নি।’’