কলকাতার কড়চা: বিচিত্রকর্মা ভাস্কর-চিত্রী

জন্ম রংপুরের তাজহাটে, মাতামহ মহারাজা গোবিন্দলাল রায়ের বাড়িতে। ঠাকুর্দা হরিপ্রসাদ ছিলেন ডায়মন্ডহারবারের কাছে মুড়াগাছার জমিদার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯ ০০:৩৫
Share:

কলকাতা থেকে আসবার সময় স্বর্গীয় সার্‌ আশুতোষের মূর্তি গঠনের ভার পাই। কাজটি মাদ্রাজেই করতে হয়েছিল। অতিকায় মূর্তি, কলকাতায় চৌরঙ্গীর শেষে, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউর গোড়াতে রাখা আছে। কাজটি সন্তোষের মহারাজা আইএফএ-এর তরফ থেকে দিয়েছিলেন। মূর্তির অতিকায় রূপ, তার সঙ্গে পঁাচ অঙ্কের মজুরি এখানে অনেকের গাত্রদাহের কারণ হয়ে উঠল।...’’ এ লেখা স্বয়ং ভাস্কর দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীর (১৮৯৯-১৯৭৫), আত্মজীবনীমূলক ‘নিজের কথা’য়। (সঙ্গে নিজের স্টুডিয়োতে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তির পাশে দেবীপ্রসাদ)। জন্ম রংপুরের তাজহাটে, মাতামহ মহারাজা গোবিন্দলাল রায়ের বাড়িতে। ঠাকুর্দা হরিপ্রসাদ ছিলেন ডায়মন্ডহারবারের কাছে মুড়াগাছার জমিদার। দেবীপ্রসাদ ছোটবেলায় অসম্ভব দুরন্ত ছিলেন, কোনও স্কুল তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি। স্কুল পালিয়ে সার্কাসে সাইকেলের খেলা দেখিয়েছেন। ভবানীপুরে সাউথ সুবার্বান স্কুলে ‘মোটা কব্জাওয়ালা প্রকাণ্ড দরজা’ গায়ের জোরে ভেঙে ফেলায় সে পাট শেষ হয়। ছবি আঁকার শুরু নিজের খেয়ালখুশিতে। অবনীন্দ্রনাথের কাছে ছবির রহস্য বুঝতে না বুঝতেই ইটালীয় ভাস্কর-শিল্পী ইভাঞ্জেলিনো বইস-এর কাছে কিছু দিন কাজ শেখেন। ভাস্কর্যে দীক্ষা হিরণ্ময় রায়চৌধুরীর কাছে। মাদ্রাজ আর্ট স্কুলের দায়িত্ব নিয়ে তাঁর শিল্পীজীবনের বড় অংশ কাটে (১৯২৮-’৫৭)। ছাত্ররা অনেকেই পরে খ্যাতিমান হয়েছেন। মল্লযোদ্ধা ও শিকারি হিসেবেও তিনি ছিলেন সুপরিচিত। সজনীকান্ত দাস তাঁকে ‘শনিবারের চিঠি’র লেখকগোষ্ঠীতে নিয়ে আসেন, এখানেই ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘নিজের কথা’। সমসাময়িক আরও নানা পত্রিকায় গল্প-উপন্যাস লিখেছেন তিনি, এঁকেছেন ব্যঙ্গচিত্রও। কলকাতায় প্রকাশ্যে স্থাপিত তাঁর প্রথম ভাস্কর্য স্যর আশুতোষের মূর্তিটি (১৯৩৪), পরে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৪১) ও মহাত্মা গাঁধীর মূর্তি (১৯৫৮)। দেবীপ্রসাদের স্ত্রী চারুলতা (১৮৯৮-১৯৮৭) ‘দ্য মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকায় লেখেন ‘লাইফ উইথ অ্যান আর্টিস্ট’ (১৯৬২)। কল্যাণাক্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় তা অনুবাদ করেন ‘মাসিক বসুমতী’র জন্য। এ বার প্রশান্ত দাঁ’র সম্পাদনায় পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি থেকে দু’টি লেখা গ্রন্থবদ্ধ করে প্রকাশিত হয়েছে নিজের কথা ও শিল্পীর জীবনসঙ্গিনী। আছে প্রচুর দুর্লভ ছবি। বিচিত্রকর্মা এই বাঙালিকে স্মরণে আনা সত্যিই জরুরি ছিল।

Advertisement

মানবী অবয়ব

কিউরেটর অনুপা মেহতা মনে করেন বিশাখাপত্তনমের ভাস্কর-শিল্পী জি রবিন্দর রেড্ডির শিল্পের দিনযাপন প্রচলিতের সঙ্গে আধুনিকতার বন্ধনে। বিশেষত, মানুষের অবয়ব নিয়ে কাজ করতে ভালবাসেন তিনি। ওঁর ধাতু বা তন্তু-ভাস্কর্যে ধরা পড়ে বিভিন্ন মানবী অবয়ব, কখনও বা বিশালাকৃতিতে। ওঁর কাজে থাকে উজ্জ্বল রং, সঙ্গে তামা অথবা স্বর্ণাভ রঙের ছোঁয়া। নজর কাড়ে অবশ্যই। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছেন গুণী এই শিল্পী। এ শহরে আগে দলগত প্রদর্শনীতে তাঁর কাজের দেখা মিললেও এই প্রথম একটি একক প্রদর্শনীর আয়োজন। ১৯৮৯ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে করা শিল্পীর কাজগুলি দেখা যাবে এখানে। ইমামি আর্ট, কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটিতে ‘রস’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীর সূচনা হবে ৮ জুন, চলবে ৮ অগস্ট পর্যন্ত, ১১-৭ টা। সঙ্গের ছবি প্রদর্শনী থেকে।

Advertisement

সুন্দর কন্যা

ইচ্ছে থাকলে কি না হয়? তিরাশিতে এসেও কিছু করে দেখানো যায়। হ্যাঁ, করে দেখালেন অশীতিপর লোকসঙ্গীত শিল্পী অনুভা গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর গাওয়া দশটি লোকগানের একটি অ্যালবাম ‘সুন্দর কন্যা’ (ভাবনা) প্রকাশিত হবে ৭ জুন, বিকেল ৪টেয় কলকাতা প্রেস ক্লাবে। এটিই তাঁর প্রথম রেকর্ড। ছোটবেলা থেকেই অনুভা ছিলেন গানপাগল। তিনি প্রথম নাড়া বাঁধেন কৃষ্ণচন্দ্র দে-র কাছে। তার পর যামিনী গঙ্গোপাধ্যায়, দুর্গা সেনের কাছেও তালিম পান। সঙ্গীতের আকর্ষণেই অনুভা গণনাট্য সঙ্ঘের সংস্পর্শে আসেন। এখানে পরিচয় হয় নির্মলেন্দু চৌধুরীর সঙ্গে এবং আকৃষ্ট হন লোকসঙ্গীতে। নির্মলেন্দু চৌধুরীর প্রথম ছাত্রীও ছিলেন তিনি। অ্যালবামটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করবেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।

মাটির কাছে

ওদের জীবনে আছে শুধু সাদা আর কালো। নেই কোনও ধূসর জমি। ওরা চোখে চোখ রেখে দৃষ্টি বিনিময়ে অক্ষম। কেউ শেখে খুবই ধীর লয়ে। আর পাঁচ জন ছেলেমেয়ের মতোই ওরা মেতে উঠতে ভালবাসে মাটি জল আকাশ বাতাস আর প্রকৃতির দীপ্তিতে। সম্প্রতি ‘শাম্পান ফাউন্ডেশন’-এর উদ্যোগে অটিজ়ম এবং লার্নিং ডিসেবিলিটিতে আক্রান্ত ছেলেমেয়েদের নিয়ে ‘আ স্পেশাল এডুটেনমেন্ট ওয়ার্কশপ’ ‘সবাই মিলে মাটির কাছে’ শীর্ষকে ওদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কুমোরটুলি, কাশী মিত্তির ঘাটে। কথক কৌশিক চট্টোপাধ্যায় শোনালেন গঙ্গার গল্প, মাটির গল্প। কেমন করে সেই মাটি আসে পাশের কুমোরটুলিতে, তাও। মৃৎশিল্পী ইন্দ্রজিৎ পাল ওদের শোনালেন প্রতিমা গড়ার গল্প। তাঁর স্টুডিয়োতে এক কর্মশালায় ওরাও মাটি দিয়ে রূপ দিল নিজেদের কল্পনাকে।

স্থানমাহাত্ম্য

সুখচরে গঙ্গার পাড়ে ১৩৮ বছরের পুরনো এক মন্দির, সামনে বাঁধানো চাতাল ছেয়ে আছে আরও পুরনো বট গাছের পাতায়, নদীর ছলাৎ ছলাৎ শব্দে এক অপরূপ পরিবেশ। কলকাতার কাছে এই জায়গায় একটা নতুন থিয়েটারের স্পেস আবিষ্কার করে বছর দেড়েক কাজ করছে বেলঘরিয়া হাতেখড়ি। ইতিমধ্যে দু’টি নাট্যোৎসবে ৩০টির বেশি নাট্যদল এখানে নাটক করেছে। এখানেই এ বার হাতেখড়ির নবতম প্রযোজনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিসর্জন’। এই স্থাননির্ভর নাট্য নির্মাণের নির্দেশক দেবাশীষ ঘোষ দস্তিদার, মূল নাটকের সম্পাদনা করেছেন হিমাদ্রি শেখর দে। সায়াহ্নে জোয়ারের শব্দে সূচনা হবে অন্য নাট্যের এই সন্ধান, যা এই সময় কালের বিচ্ছিন্নতা, হিংস্রতার বিরুদ্ধে এক সজীব নির্মাণ। যে উচ্চারণ হাতেখড়ি পৌঁছে দেবে গঙ্গার সামনে প্রকৃতির খণ্ড উপত্যকায় দাঁড়িয়ে, তাই কথিত মঞ্চের ঘেরাটোপ ছেড়ে আসার এই প্রয়াস। ১৫ জুন সন্ধে ৬ টায় সুখচর পাইন ঠাকুরবাড়ি।

গড়ের মাঠ

কলকাতার ফুসফুস। কলকাতার প্রাণভোমরা। কত বিশেষণ তার। শুধু কি পরিবেশ রক্ষায় তার ভূমিকা? লন্ডনের হাইড পার্ক কি নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের মতো কলকাতা শহরের ময়দানে কি সত্যিই শহরের বোধ দানা বাঁধে? আজকের শহর-জীবনে তার গুরুত্ব কতটুকু? সহনাগরিকরা অনেকেই মনে করছেন, ফুসফুস আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে পড়ছে, টান পড়ছে শহরের প্রাণশক্তিতে। তাই নিজেদের বাঁচার তাগিদেই ময়দান নিয়ে জোরদার চর্চা শুরু হওয়া দরকার যা তার ইতিহাস ঐতিহ্য আবেগ সংযোগ ও স্মৃতির আবরণ খুলে দেবে। গত ১৮ এপ্রিল বিশ্ব ঐতিহ্য দিবসে কলকাতা আইকমস, ভারতীয় সংগ্রহশালার সহায়তায় এ বিষয়ে আলোচনার সূচনা করে। এ বার ৪ জুন বিকেল ৪-৭টা, বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রাক্কালে ভারতীয় সংগ্রহশালার আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী সভাকক্ষে ‘গড়ের মাঠ— ময়দান/ ক্যালকাটার অতীত কলকাতার ভবিষ্যৎ’ নিয়ে এক খোলামন আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে।

অন্য ধারায়

ছোটবেলা থেকে জামা কাপড়ের দোকানে ম্যানিকিন অর্থাৎ মানব পুতুলের গায়ে জড়ানো সুন্দর পোশাক দেখে চোখ অভ্যস্ত হয়েছিল। তখন থেকেই ইচ্ছা ছিল কলকাতায় কেবল ম্যানিকিন নিয়ে প্রদর্শনী করার, বলছিলেন শিল্পী জয়ন্ত খান। ২০১২-য় দিল্লিতে প্রথম ম্যানিকিন নিয়ে প্রদর্শনী করেন। এ বার সঙ্গে পেলেন বাংলাদেশের তৌফিকুল ইসলাম ভুইঞা ও শর্মিলা কাদের সোমা, কলকাতার অরূপরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, অনুপম দাস, অন্বেষা দে, মালদহের সুমিত দাস ও প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, কাকদ্বীপের তাপস দে-কে। সম্প্রতি ‘এক্সপ্রেশন’-এর পঞ্চদশ বার্ষিক প্রদর্শনীতে পনেরোটি ম্যানিকিন (সঙ্গে তারই একটি), সঙ্গে সত্তরটি পেন্টিং ও বিধান বিশ্বাসের একক ছ’টি আলপনায় সাজল বিড়লা অ্যাকাডেমির তৃতীয় তল।

সঙ্গীতের সেতু

রবীন্দ্রনাথ প্রয়াত হন ১৯৪১-এ। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হল বিশ্বভারতী অনুমোদিত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষায়তন ‘গীতবিতান’। এরই অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য শুভ গুহঠাকুরতা ১৯৪৮-এ একক ভাবে শুরু করলেন ‘দক্ষিণী’। ১৯৫১-য় শান্তিনিকেতনে সঙ্গীত ভবনের পাঠ শেষ করে প্রসাদ সেন, শুভবাবুর ইচ্ছায় দক্ষিণীতে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ছাত্র তালিকায় তখন অমল নাগ, ঋতু গুহ, কৃষ্ণা গুহঠাকুরতা, বুদ্ধদেব গুহ, শর্মিলা ঠাকুর-সহ অনেকেই। পঞ্চাশের দশকেই আচার্য শৈলজারঞ্জনের নির্দেশে নীলিমা সেন ও প্রসাদ সেন ‘সুরঙ্গমা’ প্রতিষ্ঠা করলেন। ১৯৭০-এ প্রসাদ সেন বাড়ির ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ‘সোহিনী’ সংস্থা গড়লেন। জীবনের শেষ অধ্যায়েও ভোলেননি দক্ষিণীতে প্রথম শিক্ষকতার স্মৃতি। আজ প্রসাদ সেন নেই, নেই শুভ গুহঠাকুরতা। দক্ষিণী বহু দিনই শুভ-পুত্র সুদেব গুহঠাকুরতার পরিচালনায়। ‘সোহিনী’র প্রাক্‌-সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে, প্রসাদ সেনের ৮৮তম জন্মবার্ষিকীতে স্মারক বক্তৃতার আয়োজন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিগুণা সেন মঞ্চে ৫ জুন বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। ‘রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রসারে প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা: দক্ষিণীর কথা’ বলবেন সুদেব গুহঠাকুরতা।

লীলাবতীর পর

দু’বছর হতে চলল তিনি নেই। লেখালিখিই ছিল তাঁর জীবন, জীবনের টুকরো টুকরো অংশে সাজানো বেশ কিছু খাতা শুধু রয়ে গিয়েছিল। তাই দিয়ে এ বার সাজানো হল অদ্রীশ বিশ্বাসের লীলাবতী-র পরের বই পদদেশে নেই জন্মভূমি (৯ঋকাল বুকস)। এই বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণও অদ্রীশই করে রেখে গিয়েছিলেন। এটির প্রকাশ ৮ জুন সন্ধে ৬টায় রোটারি সদনে। সে দিন প্রথম অদ্রীশ বিশ্বাস স্মারক বক্তৃতা দেবেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয় ‘সংস্কৃতির রাজনীতি’। আয়োজনে অদ্রীশ বিশ্বাস স্মৃতিরক্ষা কমিটি। এখানেই প্রকাশিত হবে আরও একটি বই, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে দুটো একটা কথা যা আমরা জানি।

সাগ্নিকের ফেলুদা

অবশেষে মুক্তি পেতে চলেছে ‘ফেলুদা, ফিফটি ইয়ার্স অব রে’জ় ডিটেকটিভ’। পরিচালক সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়। তথ্যচিত্র হলেও একে ‘জার্নি ফিল্ম’ বললেই ঠিক হয়। সত্যজিৎ রায়ের গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদার আত্মপ্রকাশ ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় ১৯৬৫ সালে। ২০১৫-য় পঞ্চাশে পা দেয় ফেলুদা। তার পঞ্চাশ বছরের জার্নিকে ধরে রাখতে ছবি তৈরির পরিকল্পনা করেন সাগ্নিক। বাংলা সাহিত্যের কোনও জনপ্রিয় চরিত্রকে নিয়ে এই ধরনের কাজ আগে হয়নি। প্রচুর বাধা কাটিয়ে শেষ পর্বে আর্থিক সমস্যা মেটাতে উইশবেরি ক্রাউড ফান্ডিং-এর সাহায্য নিতে হয়। বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত ছবিটি ৭ জুন মুক্তি পাবে নন্দন ও প্রিয়া-য়।

শৈশবের দিন

‘‘ঘরের কথা বাইরে বলতে, অর্থাৎ হাটে হাঁড়ি ভাঙতে আমি আমার বাবারই যোগ্য সন্তান।’’ লিখছেন নবনীতা দেব সেন। পুপে-তোতা অতসী বলছেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কথা, বাসবী ঘটক লিখছেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা, কাকলি চক্রবর্তী সন্তোষকুমার ঘোষের কথা, এমন আরও কত। ‘শ্রীচরণেষু’ পত্রিকায় (সম্পা: অ্যাঞ্জেলিকা ভট্টাচার্য)। পত্রিকা প্রকাশ উপলক্ষে ৮ জুন সন্ধে সাড়ে ৬টায় অবনীন্দ্র সভাগৃহে শৈশবের দিনগুলি নিয়ে এক আড্ডায় থাকবেন মনোজ মিত্র ভগীরথ মিশ্র অমর মিত্র নলিনী বেরা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচেত গুপ্ত সুধাংশুশেখর দে।

কাঁদনাগীত

গ্রাম আমাকে টানে’, বলছিলেন গবেষক বেবি সাউ। ঝাড়গ্রামের পাইক আম্বি গ্রামে জন্ম। নয়া বসান জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পর জামশেদপুর উইমেন্স কলেজ থেকে স্নাতক। নিজের বিষয়ে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন। কলম অবশ্য ধরেছেন অনেক আগেই। ইতিমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ। বর্তমানে তিনি জামশেদপুর আকাশবাণীতে কর্মরত। সেই কোন ছোটবেলায় ঠাকুমার মুখে ব্রতের সুর ভাঁজা, পুরাণ বা রূপকথা, লোককথা আর করুণ সুরের গুঞ্জনে জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে বা শোকের গান শোনা। এই ছিল শুরু, কিন্তু তখন বোঝার মতো বয়স হয়নি।‘পরে জেনেছি এই করুণ রসের মধ্যে দিয়েই এখানকার মানুষ তাঁদের মনের ভাব ব্যক্ত করেন। আর এটাই এই অঞ্চলে কাঁদনাগীত বা কাঁদনাগীতি নামে পরিচিত।’’ পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জনজীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এই করুণ রসের গান, কালের নিয়মে যা ক্রমে অবলুপ্ত হচ্ছে। ‘কাজগুলি হারিয়ে যাচ্ছে, শুরু করতে পারিস’, ২০১৬-য় বাবার এই অনুরোধে বেবি শুরু করেছিলেন ওঁর গবেষণার কাজ। তবে, সকালে গিয়ে যদি বলা হয়, ‘মাউসি, গটায় কাঁদনাগীত শুনাও, শুনমু।’ সে কিন্তু হওয়ার জো নেই। এই গানের জন্য চাই বিশেষ আবহ। বিয়ের পর কন্যার বিদায়, প্রিয়জনের মৃত্যু এমনকি নির্যাতন বা বঞ্চনার কথা উঠে আসে এই গানে। রুদালি-র থেকে আলাদা এই শোকের গান। অতএব, ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় গান শোনার জন্য হাজির হওয়া এই দুরূহ কাজটি তিনি সম্পন্ন করেছেন দীর্ঘ সময় ধরে। প্রকাশ পেয়েছে বই। ১৪ জুন বিকেল সাড়ে ৪টেয় বই-চিত্র সভাঘরে সৃষ্টিসুখ-এর আয়োজনে কাঁদনাগীত: সংগ্রহ ও ইতিবৃত্ত বিষয়ে আলোচনা করবেন বেবি সাউ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement