Kolkata

কলকাতার কড়চা: দুই প্রতিভার শতবর্ষ

দুই নায়িকার বন্ধুত্ব কখনও ভোলেননি তিনি। আমরা কি মনে রেখেছি তাঁকে? গতকাল, ২৪ সেপ্টেম্বর, শতবর্ষে পা দিলেন তিনি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:২৭
Share:

তানিক ছিল তাঁর নামও। প্রথম বাংলা ছবি চলাচল-এর পর পঞ্চতপা-র প্রস্তুতিপর্বে হঠাৎ তাঁর দেখা বিমল রায়ের সঙ্গে। তত দিনে অন্য মানিকের পথের পাঁচালী-তে বিশ্বজয় সারা। বিমল রায় বম্বেতে তখন প্রায় প্রতিষ্ঠান, কাবুলিওয়ালা দেখে তপন সিংহকে বুকে জড়িয়ে যখন বলছেন “এমন কিছু কর যাতে বম্বেতে বসে আমরা বাঙালিরা মাথা তুলে বলতে পারি, দেখ কলকাতায় কী দুর্দান্ত ছবি হচ্ছে,” শুনছেন পাশে দাঁড়ানো মানিক ওরফে অসিত সেনও (১৯২২-২০০১)। কথাগুলি ‘আমার মনে খুব দাগ কেটেছিল’, জানিয়েছেন তাঁর আত্মকথন স্মৃতির সোনালি রেখা-য় (দে’জ পাবলিশিং)। পঞ্চতপা বিমল রায় নিজ উদ্যোগে দেখানোর ব্যবস্থা করেন বোম্বেতে, দেখেন রাজ কপূর ও আনাড়ি ছবির প্রযোজক লছমনজিও, কলকাতায় এক আড্ডায় তিনি শুধোন অসিতবাবুকে, “বোম্বাইতে ছবি করবে?” জীবনতৃষ্ণা-য় লতার গান রেকর্ড করতে বম্বে গেলেন অসিতবাবু, স্বয়ং লতা গান ট্রান্সফারের সময় ছুটির দিনে কোডাক-এর অফিস খুলিয়ে ফিল্ম আনানোর বন্দোবস্ত করে দিলেন, কলকাতার বাঙালি শুনে রেকর্ডিংয়ে দারুণ সাহায্য করলেন টেকনিশিয়ানরা। বম্বের এই ‘আগ-বাড়িয়ে সাহায্যের হাত’-এর বিনিময়েই বোধহয় তিনিও উপহার দিলেন মমতা, খামোশী, সফর-এর মতো ছবি। আগেই সুচিত্রা সেনকে নিয়ে করেছেন দীপ জ্বেলে যাই আর উত্তর ফাল্গুনী, আজও যে ছবি ভোলেনি বাঙালি। তবে অরুন্ধতী দেবী আগ্রহী হয়ে এগিয়ে না এলে তাঁর চলাচল (বাঁ দিকের ছবি) বা পরিচালক হওয়া, কিছুই হত না, অসিতবাবুর স্বীকারোক্তি। এই দুই নায়িকার বন্ধুত্ব কখনও ভোলেননি তিনি। আমরা কি মনে রেখেছি তাঁকে? গতকাল, ২৪ সেপ্টেম্বর, শতবর্ষে পা দিলেন তিনি।

Advertisement

আর আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শতবর্ষে পা দেবেন তাঁর বন্ধুও, হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায় (১৯২২-২০০৬)। তাঁকে ভোলা বাঙালির পক্ষে শক্ত। পঞ্চাশের দশকে বিমল রায়ের শিষ্য ও সঙ্গী হিসেবে কলকাতা থেকে বম্বে পাড়ি, ফিল্ম এডিটর থেকে ডিরেক্টর, প্রায় গল্পকথার মতো জীবন। অনুরাধা, অনুপমা, আনন্দ, গুড্ডি (ডান দিকের ছবি), বাওয়র্চি, অভিমান, নমক হারাম, মিলি, চুপকে চুপকে, অর্জুন পণ্ডিত, গোলমাল, খুবসুরত, তাঁর স্নিগ্ধ হিন্দি ছবিগুলিতে নিজেকেই যেন খুঁজে পেত বাঙালি। “জাঁকজমক দিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার কায়দাকে উনি এড়িয়ে চলতেন বরাবর। ওঁর লক্ষ হল মানুষের হৃদয়।” আত্মস্মৃতিতে (সিনেমাপাড়া দিয়ে) লিখেছেন তরুণ মজুমদার, “যে যে সমস্যাগুলো... দারুণ জটিল— উনি তা এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিতে পারতেন দাবার চাল দিতে দিতেই।” বম্বেতে তাঁর বাংলো, জমাটি আড্ডা, সবই আজ শরতের গোধূলি। ছবি সৌজন্য: শৌনক চক্রবর্তী

অদ্বিতীয়া

Advertisement

‘হরগৌরী’, বলতেন সলিল চৌধুরী। পুজো আসছে, কিন্তু গৌরী কোথায়? গোরাবাজারে একাকী জুটিভাঙা পার্থ। আবৃত্তি শেখানো যায় না, স্পষ্ট মত ছিল গৌরী ঘোষের, কদাপি শেখাননি। অকপট স্বীকার, দৃপ্তকণ্ঠ দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন আকাশবাণী-পর্বে তাঁর প্রধান শিক্ষক। বাসে-ট্রামে তাঁতের শাড়ির চলাফেরা, শ্যামপুকুরের মেয়েটির আদর্শ ছিলেন ‘মেজদা’, গায়ক-নায়ক রবীন মজুমদার, যাঁর অবিস্মরণীয় কবি চলচ্চিত্রের বৈঠকি পুনরভিনয় মঞ্চস্থ করা ছিল তাঁর শেষ ইচ্ছে। গত বছর জানুয়ারিতে পূর্ণ হয়েছিল সে সাধ। নিরাভরণ গৌরীর আবৃত্তিও ছিল সহজ, আবহহীন। সাহিত্যচিন্তা, সৎ প্রযোজনা, পরোপকার, আতিথেয়তায় অনন্যা গৌরী ঘোষকে নিয়ে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার সন্ধে ছ’টায় অনুষ্ঠান ‘এমন তরণী বাওয়া’, মধুসূদন মঞ্চে— ব্রততী পরম্পরা, শঙ্খমালা ও আবৃত্তিলোক-এর উদ্যোগে। সে দিনই জন্মদিন গৌরীর।

মরমিয়া

আছে শ্যাম অঙ্গে রাই অঙ্গ... গানে তন্ময়, সঙ্গী একতারার টং, ডুবকি, নুপূরের ছন্দ। এ ভাবেই শ্রোতাকে মগ্ন করেন পার্বতী বাউল। সনাতন দাস ঠাকুর, শশাঙ্ক গোঁসাইয়ের এই শিষ্যার গানে মিশে থাকে মরমিয়া বোধ ও সাধন। আজ, ‘ইমামি আর্ট’-এর একতলায় বিকেল ৫টা থেকে তাঁর বাউল গান। গ্যালারির ‘লোকাস ইন ফোকাস’ উদ্যোগের এই আসরে বিশেষ প্রণিধান সুফি, ফকির, বাউল ঐতিহ্যপুষ্ট বাংলার লোকগানে। এসে শুনতে নাম নথিভুক্তি জরুরি, তবে অনুষ্ঠানটি লাইভ দেখা যাবে ইমামি আর্ট-এর ফেসবুক পেজেও।

গান পূজা

দুর্গাপুজোয় পুজো আছে, উৎসবও, কিন্তু তার ক্রিয়াকলাপে মিশে থাকা প্রকৃতির সব উপাদানের, বা অন্তঃস্থ অধ্যাত্মবোধের খোঁজ রাখি না আমরা। পূজার মন্ত্রে যাতে প্রকৃত প্রবেশ ঘটে, পুজো করার অহঙ্কারে নয়, সমর্পণে সমবেত হয়ে যাতে মাতৃ-আরাধনা করা যায়, সে লক্ষ্যেই দুর্গাপূজার বোধন থেকে বিসর্জনের সমগ্রতাকে সঙ্গীতে ধরেছেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। বিভিন্ন ভাবের ২৭টি গান রেকর্ড করা ছিল আগেই, ভিডিয়ো হয়েছে এ বার, চিত্রপরিচালক গৌতম হালদারের রূপায়ণে সুদৃশ্য সেটে, প্রতিমার সামনে, মন্ত্র-ক্রিয়া-আচারের সনিষ্ঠ পালনে। বেলুড় মঠেও রেকর্ড করা হয়েছে একটি গান। ‘গানে গানে দুর্গাপুজো’-র টিজ়ার আসছে মহালয়ায়, ভিডিয়োগুলি পুজোর ক’দিনে, শিল্পীর ইউটিউব চ্যানেলে। সঙ্গীতে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, চন্দনা চক্রবর্তী ও কৌশিকী চক্রবর্তী, সহযোগী সমগ্র ‘শ্রুতিনন্দন’ পরিবার।

পারঙ্গমা

ঘরে বাইরে লিঙ্গবৈষম্যের সঙ্গে লড়ছেন মেয়েরা, ডিজিটাল অসাম্যের সঙ্গেও। স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের সুবিধা থাকলেও অনেকেই, বিশেষত বয়স্কারা ডিজিটাল মাধ্যমের প্রাথমিক ব্যবহারের সময় পরনির্ভর। অথচ একটু দেখিয়ে দিলেই ইমেল, পিডিএফ, স্ক্যানে সড়গড় হন তাঁরা। ছুটন্ত পৃথিবীতে সেই সময় ও মরমি মন কই? মেয়েরা যাতে নিজেরাই ইন্টারনেট আয়ত্তে আনতে পারেন, এড়াতে পারেন সাইবার জালিয়াতির ফাঁদ, সেই লক্ষ্যে ‘অ্যাসোসিয়েশন স্ন্যাপ’ ও ‘এবং আলাপ’ করছে মেয়েদের ডিজিটাল সক্ষমতার কর্মশালা, অক্টোবর-নভেম্বর জুড়ে। ৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় তারই সূচনায় ফেসবুকে আলোচনা ‘ডিজিটাল বৈষম্য ও জেন্ডার’ নিয়ে। স্মার্টফোন, হোয়াটসঅ্যাপে সাপ্তাহিক অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে কর্মশালায় যোগ দিতে পারবেন পঁয়ত্রিশ বা তদূর্ধ্ব মেয়েরা।

মণি-মানিক

চিত্রভাষ-এর প্রথম সংখ্যাতেই একটি ইংরেজি প্রবন্ধ লিখেছিলেন সত্যজিৎ, দ্য সায়লেন্ট এরা (১৯৬৬) নামে, এত দিন অগ্রন্থিত ছিল তা। ‘নর্থ ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি’-র মুখপত্র চিত্রভাষ, ১৯৬৫-তে সোসাইটি প্রতিষ্ঠার পর ফিল্ম দেখানো শুরুই হয়েছিল পথের পাঁচালী দিয়ে। শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছিলেন সত্যজিৎ। সেই সংযোগ আজও অটুট। জন্মশতবর্ষের শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে সদ্য প্রকাশিত হল চিত্রভাষ বিশেষ সংখ্যা অগ্রন্থিত সত্যজিৎ, তাতে মুদ্রিত প্রথম সংখ্যার সেই ইংরেজি রচনা। সত্যজিতের এ রকম আরও অনেক অপঠিত-অগ্রন্থিত ছোট-বড়-মাঝারি বাংলা ও ইংরেজি রচনায় ভরা সংখ্যাটি (আমন্ত্রিত সম্পাদক: দেবাশিস মুখোপাধ্যায় ও ঋদ্ধি গোস্বামী)। “ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অপরিহার্য,” হাতে পেয়ে বললেন সন্দীপ রায়।

ঐতিহ্যের টানে

দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে কলকাতায় শিল্প চর্চার যে বিরাট পরিসর, তার উৎস সন্ধানে নিশ্চিত ভাবেই উঠে আসে শোভাজারের নবকৃষ্ণ দেবের পুজোর কথা। ঐতিহ্যের টানেই আজও পুজোয় নবকৃষ্ণ স্ট্রিটে দেব বাড়ির ঠাকুরদালান দু’টি অমোঘ গন্তব্য। ২৬৩ বছরের পুরনো সেই ইতিহাসের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ আবারও, পুজোর আগেই। প্রাচীন এ পুজোর কিছু বিশেষ মুহূর্তকে কেন্দ্রে রেখে পরিবারের সদস্য, শিল্পী প্রবীর কৃষ্ণ দেবের আঁকা একগুচ্ছ ছবি (নীচে তারই একটি) নিয়ে একটি গ্রন্থনির্মাণের প্রাথমিক চিন্তা থেকে যে পরিকল্পনার শুরু, তা-ই রূপ পেয়েছে দুর্গাপূজা অ্যাট শোভাবাজা রাজবাড়ি: আ ট্রিস্ট উইথ হিস্ট্রি অ্যান্ড হেরিটেজ নামের প্রদর্শনী ও উৎসবে— ‘ঋতবাক’ প্রকাশনীর প্রত্যক্ষ ভাবনায়, শিল্প সংস্থা ‘কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি’ (কেসিসি)-র রূপায়ণে। ছবি ও ছবির গল্প দিয়ে সাজানো সুদৃশ্য বই শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপূজা প্রকাশ করেছে ‘ঋতবাক’। প্রদর্শনীতে দেখা যাবে মূল অলঙ্করণগুলি, পাশাপাশি এক গুচ্ছ অনুষ্ঠান: চণ্ডীপাঠ, আলোচনা, বৈঠকি আড্ডা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রান্না। উৎসব শুরু আজ, ২৫ সেপ্টেম্বর, বিকেল ৪টায়। কেসিসি-তে প্রদর্শনী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত, কোভিডবিধি মেনে রোজ সকাল ১১টা থেকে সন্ধে ছ’টা।

ফ্যাসিবিরোধী

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিস্ট শক্তির পরাজয়ের তিরিশ বছর পূর্তিতে, ১৯৭৫ সালে কলকাতায় এক বর্ণাঢ্য মিছিল আয়োজিত হয়েছিল। তাতে পা মেলান দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবেশ রায়, অরুণ সেন, অভ্র ঘোষেরা। সেই বছরই দীপেন্দ্রনাথ ও তরুণ সান্যালের সম্পাদনায় এই বিষয়ের উপরে প্রকাশিত হয় পরিচয় পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা। রমাঁ রলাঁ, জঁ-পল সার্ত্র, চার্লস চ্যাপলিন, পাবলো পিকাসো, ম্যাক্সিম গোর্কি, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে— বিশ্ব জুড়ে ফ্যাসিবিরোধী লেখক-শিল্পীদের অনেকগুলি রচনা ছিল সেখানে, বঙ্গানুবাদে। ছিল গোপাল হালদার, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, সুশোভন সরকার, বুদ্ধদেব বসু প্রমুখের প্রবন্ধও। পরিচয়-এর ৯০ বছর পূর্তিতে এ বার গ্রন্থাকারে প্রকাশ পেল সেই মূল্যবান ও জরুরি সংখ্যাটির ফ্যাকসিমিলি সংস্করণ, ফ্যাসিস্টবিরোধী সংকলন নামে। ছবিতে তারই প্রচ্ছদ।

পার্বণ

দশ দিন ধরে চলবে, নাম তাই ‘দশের বইমেলা’। আবার দশের জন্য, বইপ্রেমী সবার জন্য মেলা, সে দিক থেকেও সার্থকনামা। কলেজ স্ট্রিটের বিদ্যাসাগর টাওয়ারের এক তলায় দে’জ পাবলিশিং-এর বইবাজার দারুণ জমেছিল অগস্টে, সেখানেই এ বার বইমেলা শুরু হল দে’জ-এর উদ্যোগে, গতকাল— কলকাতার একগুচ্ছ প্রকাশনীর বই নিয়ে। থাকছে বাংলাদেশের বইও। আলাদা আকর্ষণ শঙ্খ ঘোষ ও বুদ্ধদেব গুহকে নিয়ে প্রদর্শনী। ৩ অক্টোবর পর্যন্ত, দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা এই বই-পার্বণ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement