থমকে: বেলগাছিয়া সেতুতে যানজট। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
শহরের যান চলাচল ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের সুনাম রয়েছে দেশ জুড়ে। সে পুজোর শহর হোক বা কোনও রাজনৈতিক সমাবেশ— সবটাই কলকাতার ট্র্যাফিক পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে ভাল ভাবে সামলে এসেছে। কিন্তু গত বছর মাঝেরহাট সেতুর বিপর্যয় এবং এ বারে টালা সেতু বন্ধ— দু’টি ক্ষেত্রেই পুজো তথা উৎসবের সময়ে স্থানীয় এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি আমার সহকর্মীদের কাছে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
গত বছর এই সময়ে মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে বেলি ব্রিজ এবং বিকল্প বেশ কয়েকটি রাস্তা খুলে দিয়ে অবস্থা সামলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন পুলিশকর্মীরা। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি পুরোটা স্বাভাবিক করা যায়নি। বেহালা-নিউ আলিপুরের বাসিন্দাদের এখনও কী ভোগান্তির মধ্যে যাতায়াত করতে হচ্ছে তা সকলেই জানেন। আমার সহকর্মীরাও সেটা জানেন। এর মধ্যেই টালা সেতু বন্ধ হয়েছে। প্রায় ৫০টি রুটের বাস ওই সেতু দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করত। সহ-নাগরিকদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য শুনলাম বেশির ভাগ বাস বেলগাছিয়া সেতু দিয়ে চলাচল করানো হচ্ছে। আর তা করতে গিয়ে আর জি কর রোড, যশোর রোড, ইন্দ্র বিশ্বাস রোড-সহ আশপাশের সব রাস্তাতেই যানজট হচ্ছে। দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে সামান্য রাস্তা পার করতে। প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করায় পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে ঠিকই। তবে পুজোর পরে যানজটের আশঙ্কা কিন্তু থাকছেই।
প্রাক্তন সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে উত্তর কলকাতা এবং শহরতলির মধ্যে যোগাযোগের জন্য বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা না করতে পারলে শ্যামবাজার, বেলগাছিয়া রোড, টালা কিংবা দমদমের যানজট কমবে না। প্রশাসনের উচিত টালা সেতুর দুই প্রান্ত পর্যন্ত বাস চলতে দেওয়া। ওই পর্যন্ত বাস গেলে নিত্যযাত্রীরা হেঁটে সেতু পার করে ফের বাস ধরে গন্তব্যে যেতে পারবেন। যদি তা সম্ভব না হয়, তা হলে রেল স্টেশন বা মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত টালা ব্রিজের কাছ থেকে অটো চলতে দেওয়া হোক। একই সঙ্গে চিৎপুর লক গেট সেতু দিয়ে বাস চালানো যায় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হোক। চিৎপুর সেতুর অবস্থাও ভাল নয়। সেখানে ভারী যান চলাচল বন্ধ আছে। ওই সেতুর অবস্থার উন্নতি করে কিংবা পাশে নতুন সেতু করা যায় কি না, তা-ও দেখা হোক।
আমি কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ট্র্যাফিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমার মনে হয়, বিকল্প রাস্তা পেলে পুলিশ দ্রুত অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে। তার জন্য কর্তাদের উচিত ক্যানাল ইস্ট ও ওয়েস্ট রোডের দু’পাশের রাস্তায় বাস চালানো যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা। তাতে বেলগাছিয়া সেতুর উপরে চাপ কমবে বলেই মনে হয়। আবার কাশীপুর এবং চিৎপুর রেল ইয়ার্ডের মধ্য দিয়ে টালা সেতুর বিকল্প কোনও লেভেল ক্রসিং করার কথাও ভাবা উচিত। অবশ্য আমার মনে হয় সব সম্ভবনা নিয়েই বর্তমান পুলিশকর্তারা ভাবছেন।
তবে টালা সেতু ছাড়াও শহরে ভারী যান চলাচলের ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানো হোক। শহরের বিভিন্ন সেতু দিয়েই ভারী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জানি হঠাৎ করে নতুন সেতু তৈরি সম্ভব নয়। রাতে একই সময়ে শহরে পণ্যবাহী ভারী গাড়ির ঢোকা এবং বেরোনো বন্ধ করা গেলে সমস্যার খানিকটা সমাধান হতে পারে। ভিআইপি রোড ছাড়াও বিদ্যাসাগর সেতু একমাত্র লরি ঢোকার রাস্তা এখন। যার ফলে বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে রাতে স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে ট্র্যাফিকের অবস্থা সামাল দিতে ইতিমধ্যেই কয়েকটি সেতু তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু তা যাতে ছোট গাড়ির চালকেরা ব্যবহার করেন, সে দিকে নজর দিতে হবে। মূল বড় রাস্তা বাদ দিয়ে ওই সব রাস্তা দিয়ে ছোট গাড়িকে যেতে পুলিশকে বাধ্য করতে হবে। রাস্তার দু’দিক থেকে তুলে দিতে হবে পার্কিং। মূল রাস্তার উপরে চাপ কমলে শহরের যান চলাচলের উন্নতি ঘটবে বলেই আমার মনে হয়।
(লেখক কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার)