কলকাতায় বাতাস দিল্লির থেকে ভাল। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এমন দাবি করলেন পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। দাবির সপক্ষে রাজ্য দূষণ পর্ষদের তথ্য তুলে ধরলেন। সেই তথ্যে এ দিন কলকাতার বাতাসের হাল স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কারণ, ওই তালিকায় দেখা গিয়েছে, গত ১৫ দিন ধরে কলকাতার বায়ুদূষণের সূচক ধারাবাহিক ভাবে ৩০০-র উপরে। যার অর্থ মারাত্মক খারাপ!
পরিবেশকর্মীদের অনেকেই বলছেন, কলকাতায় শ্বাস নেওয়া যে দুরূহ হয়ে উঠছে, সে দিকে হুঁশ নেই রাজ্যের পরিবেশকর্তাদের। তাঁরা দিল্লির সঙ্গে তুলনাতেই ব্যস্ত। কেউ কেউ বলছেন, বাম জমানায় অপরাধ দমনে বিহারের থেকে এগিয়ে থাকার কথা বলতেন মন্ত্রীরা। এ বার দূষণের ক্ষেত্রেও তেমনটাই সাফাই দিতে চাইছেন শোভনবাবু। তাঁদের অভিযোগ, বাস্তব পরিস্থিতি থেকে মুখ লুকোতে চাইছে সরকার। পরিবেশমন্ত্রী এ দিন অবশ্য বলেছেন, ‘‘কলকাতায় দূষণ হয় না এমন নয়। কিন্তু আমি মনে করি না এখানে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।’’
এ দিন কলকাতার মার্কিন দূতাবাসকেও বিঁধেছেন মন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, মার্কিন দূতাবাস শুধু পার্ক স্ট্রিট এলাকায় দূষণ মেপে সূচক প্রকাশ করছে। তাতে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাই মার্কিন দূতাবাসের তথ্য সারা শহরের চিত্র নয়। পর্ষদ কর্তাদের একাংশ দূতাবাসের পরিমাপ পদ্ধতি নির্ভুল কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের আরও অভিযোগ, দিল্লি ও কলকাতার পরিমাপক যন্ত্রের অবস্থানেও ফারাক রয়েছে। দিল্লির চাণক্যপুরী কম দূষিত এলাকা দাবি করে শোভনবাবু জানান, এই অবস্থানের ফারাকেই ভুল ছবি ফুটে উঠছে। তবে অভিযোগ তুললেও রাজ্যের তরফে কোনও চিঠি দূতাবাসে পৌঁছয়নি। শোভনবাবু জানান, তাঁরা ফোন করে এ বিষয়ে কথা বলেছেন।
মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, তারা ২০১৫ থেকে এই পরিমাপ করছে এবং গোড়া থেকেই জানানো হয়েছিল, এই পরিমাপ শুধু পার্ক স্ট্রিট এলাকাতেই করা হয়। উন্নত মানের স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে ধরা পড়া তথ্য মার্কিন পরিবেশ গবেষণা সংস্থা বিশ্লেষণ করে বায়ুদূষণের সূচক প্রকাশ করে। সেই সূচক আমেরিকার মান অনুযায়ী বিচার করা হয়। বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে মার্কিন যে মান রয়েছে তার সঙ্গে ভারতের মান মেলে না। এ প্রসঙ্গে এক পরিবেশবিদের মন্তব্য, ‘‘দুই সংস্থা দু’রকম পদ্ধতিতে পরিমাপ করে। তাই হয়তো দূষণের সূচকে সামান্য হেরফের হচ্ছে। এতে অসুবিধা কী তা বুঝতে পারছি না!’’
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, রাজ্যও তো স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র দিয়ে দূষণ মাপছে না। ফলে সেই তথ্যে যে কারসাজি নেই, তার কী প্রমাণ রয়েছে? এর সরাসরি উত্তর দেননি মন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। এক দিনে সব হয় না। এ মাসের শেষেই সেই কাজ শুরু হবে।’’ প্রশ্ন উঠেছে, শহরে ডিজেলচালিত গাড়ি থেকে দূষণ হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সরকার কী করছে? শোভনবাবুর জবাব, ‘‘বদল হতে তো সময় লাগে। ডিজেল থেকে গ্যাসে যানবাহন চালুর ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। সেগুলি পর্যালোচনা করে গ্যাসে বাস, ট্যাক্সি চালানো হবে।’’
এ সব শুনে এক পরিবেশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘হবে তো বটে। কিন্তু কবে?’’
সদুত্তর নেই।