সদ্য লন্ডনে টিউব রেলে নাশকতার পরে কোনও ফাঁক যেন না থাকে। পুজোয় তাই কলকাতার মেট্রো রেলের নিরাপত্তায় থানার পুলিশকেও সামিল হতে নির্দেশ দিলেন পুলিশ কমিশনার।
যতই কলকাতা পুলিশের আলাদা বাহিনী মেট্রো রেল পুলিশ থাকুক, থাকুক রেল রক্ষী বাহিনী বা আরপিএফ, পুজোয় মেট্রোর নিরাপত্তা আরও আঁটোসাঁটো করতে সিপি রাজীব কুমার থানার ওসি-দের নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে পুজো নিয়ে সমন্বয় বৈঠকে সিপি ওই নির্দেশ দেন। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, বৈঠকে লন্ডনের টিউব রেলে ১৫ সেপ্টেম্বর আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ নির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করেন রাজীববাবু।
একটা সময়ে লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা মেট্রোর নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবারই প্রয়োজন মনে করতেন না। ৯/১১-র জঙ্গি হামলার পরে লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তাকে মেট্রোর সুরক্ষা ও ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি বলেছিলেন, ‘‘ও সব মনেই আনবেন না। ঈশ্বরকে স্মরণ করুন। তিনিই রক্ষা করবেন।’’ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেট্রোর নিরাপত্তার ঝুঁকি ও পুলিশের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা বদলেছে, সিপি-র বার্তায় সেটাই প্রমাণিত বলে লালবাজারের কর্তাদের অনেকের অভিমত।
আরও পড়ুন: বিক্ষোভ সামলাতে আরও বেশি জলকামান পুলিশকে
লালবাজার সূত্রের খবর, এ দিন সিপি মেট্রো নিয়ে থানার ওসি-দের যে বার্তা দিয়েছেন, তার সারমর্ম হল: এখন মেট্রোর কী নিরাপত্তা আছে, সে সব না ভেবে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। স্টেশনে স্টেশনে দিনের বিভিন্ন সময়ে গিয়ে পরিদর্শন করে দেখতে হবে, সব ঠিক চলছে কি না। উৎসবের সময়ে মেট্রোর বিভিন্ন স্টেশনে এমনিতেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। তার বাইরেও যে স্টেশন যে থানা এলাকার মধ্যে, সেই থানা প্রয়োজন মতো অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগ করবে প্রবেশ ও বেরোনোর পথে। স্টেশনের প্রতিটি সিসিটিভি ক্যামেরা ঠিক আছে কি না, সেগুলির ছবি মনিটরে দেখা হচ্ছে কি না, সেটাও পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে যাত্রীরা কোনও পুজো মণ্ডপে যেতে গেলে কোন দিক দিয়ে বেরোবেন, সেই ব্যাপারে মেট্রো স্টেশনের বাইরে পথনির্দেশ সম্বলিত বোর্ড বসানোর কথাও বলেছেন সিপি।
এখন মেট্রোর ২৩টি স্টেশনের মধ্যে বহু জায়গায় এক্স-রে ব্যাগেজ স্ক্যানার অকেজো। হাতে ধরা মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে যাত্রীদের ব্যাগ পরীক্ষার বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম মাফিক। যেন করতে হবে বলে করা। কিছু কিছু জায়গায় আবার নিজেদের মধ্যে গল্প করতে করতে যাত্রীদের ব্যাগে মেটাল ডিটেক্টর ঠেকান পুলিশ ও আরপিএফ কর্মীরা। যাত্রীদের চোখ-মুখের দিকে, তাঁদের চলাফেরার দিকে ভাল করে নজর করার প্রয়োজন মনে করেন না। লালবাজার সূত্রের খবর, মেট্রোর নিরাপত্তায় অনেক ক্ষেত্রেই এই যে গয়ংগচ্ছ মনোভাব, সেটা সদ্য বিলেতে টিউব রেলে নাশকতার পরেও পুজোর সময়ে চলতে দিলে ঝুঁকি হয়ে যেতে পারে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। সে জন্যই থানার পুলিশকে সামিল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার।
কিন্তু পুজোর সময়ে মণ্ডপ ও রাস্তার ভিড় সামলে থানার পুলিশ কী ভাবে মেট্রোর সুরক্ষা নিশ্চিত করবে?
লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘সিপি বলেছেন, থানার পুলিশকে মেট্রোর নিরাপত্তার ব্যাপারে চোখ-কান খোলা রাখতে।’’ ওই অফিসারের ব্যাখ্যা, ‘‘বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিত্যদিন ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয় বলে থানার অফিসারদের চোখে ঝট করে অনেক অস্বাভাবিক জিনিস ধরা পড়ে।’’
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম) জঙ্গি সংগঠনের বিপদের কথা মাথায় রেখে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার পুজোর সময়ে থানার পুলিশকে মেট্রো রেলের সুরক্ষায় সামিল করেছিলেন। সে বার স্থানীয় থানা থেকে প্রতিটি মেট্রো স্টেশনের গেটে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছিল।