ভাঙা হচ্ছে বিপজ্জনক বাড়ির একাংশ। —নিজস্ব চিত্র।
গার্ডেনরিচের পাহাড়পুর রোডের হেলে পড়া বাড়ির বিপজ্জনক অংশ ভাঙতে গিয়ে স্থানীয়দের একাংশের বিক্ষোভের মুখে পড়ল কলকাতা পুরসভার ৪০ সদস্যের দল। বিক্ষোভের জেরে কিছু সময়ের জন্য ভাঙার কাজ বন্ধ রাখতে হয়। স্থানীয়দের বক্তব্য, বাড়ির বিপজ্জনক অংশ না ভেঙে অন্য অংশ ভাঙা হচ্ছে। আগেই নোটিস দিয়ে বাড়িটির বেআইনি এবং বিপজ্জনক অংশ ভেঙে ফেলার কথা জানানো হয়েছিল পুরসভার তরফে।
পাহাড়পুর রোডের ৪৭৪/১ ঠিকানার ওই বাড়িটির নম্বর ‘জে ৪৭৪’। বাড়ির মালিকের নাম রাজকুমার সিংহ। গার্ডেনরিচের আজহারমোল্লা বাগানের নির্মীয়মাণ বাড়িটি ভেঙে পড়ার পরেই এই বাড়িটির উপর নজর পড়ে। দেখা যায় বিপজ্জনক ভাবে হেলে পড়া বাড়িটি পাশের বাড়ির দেওয়াল ভেঙে ঢুকে পড়ছে। ওই বাড়ির চাপে ইতিমধ্যেই ভেঙে গিয়েছে পাশের বাড়ির দেওয়াল, জানলা এমনকি বারান্দার কার্নিশও। দু’টি বাড়ির মাথায় মাথা লেগে গিয়েছে বলেও দেখা গিয়েছিল ছবিতে। পাহাড়পুর রোডের এই দু’টি বাড়ি তৈরি হয়েছে পুরনো বাড়ি ভেঙে। দু’টি বাড়ির মাঝে আইন মেনে দূরত্ব রাখা হলেও সেই ফাঁক বজায় থেকেছে বড়জোর দোতলা পর্যন্ত। তিন তলা থেকে ধীরে ধীরে সীমা ছাড়াতে শুরু করেছে বারান্দা, জানলা। পাঁচতলায় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ঘরের মেঝেও। ফলে দু’টি বাড়ির মধ্যে পাঁচ ফুট দূরত্ব তো দূর অস্ত্ এক আঙুলের ফাঁকও থাকেনি আর। বিশেষ করে এই দু’টি বাড়িতে দৃশ্যতই মাথায় মাথায় ঠোকাঠুকি লেগেছে।
দু’টি বাড়িরই নীচে রয়েছে অজস্র দোকানপাট। জামা কাপড়ের দোকান থেকে শুরু করে রেশন দোকান— সবই আছে। গায়ে গায়ে লোগে রয়েছে ছোটখাট অন্য বাড়িও। দুর্ঘটনা ঘটলে তার প্রভাব পড়বে সেই সব বাড়িতেও।
শনিবার হেলে পড়া বাড়িতেই নোটিস যায় পুরসভার। নোটিস যায় মালিকের নামেই। নোটিসে বলা হয়, বাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পরিদর্শন করে প্রয়োজনে ভেঙে ফেলতে হবে কি না তা খতিয়ে দেখবেন কলকাতা পুরসভার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পদমর্যাদার আধিকারিক। সেই মতোই বৃহস্পতিবার পুরসভার ৪০ জনের একটি দল ওই বাড়ির একাংশ ভাঙার কাজে যায়। সঙ্গে ছিলেন কলকাতা পুলিশের আধিকারিকেরাও।
গার্ডেনরিচের আজ়হার মোল্লা বাগানে বহুতল ভেঙে ১২ জনের মৃত্যুর পরেই পুরসভার তিন ইঞ্জিনিয়ারকে শো কজ়-সহ কলকাতা পুরসভার প্রশাসনে রদবদল ঘটান মেয়র ফিরহাদ হাকিম। শুধু তাই নয়, অভিযুক্ত ইঞ্জিনিয়ারদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করান তিনি। পুরসভার এমন পদক্ষেপের পাশাপাশি ঘটনার তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশও। ওই বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে কী কী ত্রুটি ছিল, তা জানতে সম্প্রতি তারা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করেছে। বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে গার্ডেনরিচে গিয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছেন।
পুরসভার সাত সদস্যের তদন্ত কমিটিকে আটটি প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বলা হয়েছিল। সেই জবাবের ভিত্তিতে আগামী সপ্তাহে পুরসভাকে রিপোর্ট দেবেন তাঁরা। গত শনিবার এই কমিটি গঠন করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু দোল উৎসবের কারণে সোমবার পর্যন্ত ওই কমিটি ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। মঙ্গলবার কমিটির সব সদস্য একসঙ্গে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার বিকেলে গার্ডেনরিচের আজহার মোল্লা বাগানে যান ওই কমিটির সদস্যেরা। সেই দলে ছিলেন কলকাতার বিল্ডিং, রাস্তা এবং কঠিন বর্জ্য বিভাগের ডিজিরা। এ ছাড়াও কলকাতা পুরসভার এক জন করে নির্মাণ বিষয়ক এবং মাটি বিভাগের বিশেষজ্ঞ। ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ইঞ্জিনিয়ারেরা সেখানকার নমুনা সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি ওই জমির মাটির নমুনাও পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে।