Posters against Justice Rajasekhar Mantha

বিচারপতি মান্থার বিরুদ্ধে পোস্টার কাদের? বহু ছাপাখানায় তল্লাশি, রিপোর্ট দিল পুলিশ

কে বা কারা বিচারপতি মান্থার বিরুদ্ধে পোস্টার লাগিয়েছিলেন, তার খোঁজ পেতে প্রায় ২৫০টি ছাপাখানা শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি ছাপাখানায় গিয়ে তল্লাশিও চালিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:০৯
Share:

হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বিরুদ্ধে পোস্টার সাঁটানোর ঘটনায় আদালতে রিপোর্ট জমা দিল কলকাতা পুলিশ। ফাইল ছবি।

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বিরুদ্ধে পোস্টার সাঁটানোর ঘটনায় আদালতে রিপোর্ট জমা দিল কলকাতা পুলিশ। এ বিষয়ে তদন্ত কতটা এগোল পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে তার রিপোর্ট চেয়েছিল উচ্চ আদালত। বুধবার হাই কোর্টের বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম, বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় এবং বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশের বৃহত্তর বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়। সেখানেই রিপোর্ট জমা দেন পুলিশ কমিশনার।

Advertisement

আদালতে পুলিশ জানিয়েছে, কে বা কারা বিচারপতি মান্থার বিরুদ্ধে পোস্টার সাঁটিয়েছিলেন, তার খোঁজ পেতে প্রায় ২৫০টি ছাপাখানা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি ছাপাখানায় গিয়ে তল্লাশিও চালিয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ছাপাখানা কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু কোথা থেকে পোস্টারগুলি ছাপানো হয়েছিল, তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। লেক থানা এলাকায় বিচারপতির বাড়ির সামনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখেছে পুলিশ।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, ওই পোস্টারগুলির কাগজের নমুনা পরীক্ষার জন্য সেন্ট্রাল ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির সাহায্য চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজও।

Advertisement

বিচারপতির বিরুদ্ধে পোস্টার তৈরি এবং দেওয়ালে তা লাগানোর ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন ৬ জন। এ ছাড়া, জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে আরও ৮৯ জনকে। মূল অভিযুক্তদের ধরতে আদালতের কাছে আরও কিছুটা সময় চেয়েছে কলকাতা পুলিশ।

কিন্তু পুলিশ কমিশনারের এই রিপোর্টে খুশি হতে পারেননি বিচারপতিরা। এক মাস পরেও কেন দোষীদের শনাক্ত করা গেল না, তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে হাই কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ।

বিচারপতি মান্থার এজলাসের বাইরে আইনজীবীদের বিক্ষোভের ফুটেজ বুধবার পেন ড্রাইভের মাধ্যমে বৃহত্তর বেঞ্চে জমা দিয়েছেন হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল। সেই ফুটেজ খতিয়ে দেখে রাজ্য বার কাউন্সিল, বার অ্যাসোসিয়েশন এবং ইনকর্পোরেট ল’সোসাইটিকে অভিযুক্তদের শনাক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিন বিচারপতি। এ প্রসঙ্গে বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ ঘোষ জানান, এই ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি এই ঘটনার নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। যার জবাবে বিচারপতি দাশের মন্তব্য, ‘‘প্রাথমিক ভাবে আপনি এক জন আইনজীবী। রাজনীতির বিষয় এখানে আসছে কোথা থেকে? রাজনীতির খেলা করবেন না।’’

গত মাসের শুরুর দিকে বিতর্কের সূত্রপাত। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বিরুদ্ধে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আইনজীবীদের একাংশ। এর পরেই হাই কোর্ট চত্বরে প্রকাশ্যে আসে বিচারপতির নামে ফেলা কিছু পোস্টার। তাতে লাল রঙের কাগজে বিচারপতির মুখের ছবি দিয়ে পাশে লেখা ছিল, ‘ইনি বিচারের নামে কলঙ্ক।’ এমনকি, বড় বড় অক্ষরে বিচারপতির মুখের উপর লেখা ছিল ‘লজ্জা’। পরে ওই একই পোস্টার দেখা যায় লেক থানা এলাকায় বিচারপতির বাড়ির সামনেও। সেই নিয়ে হাই কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়।

আদালত চত্বরে গোলমালের পর থেকে হাই কোর্টের আইনজীবীদের একাংশ বিচারপতি মান্থার এজলাস অর্থাৎ ১৩ নম্বর কোর্ট বয়কট করেছেন বলে অভিযোগ। তাঁরা ওই এজলাসে যাচ্ছেন না। ফলে অনেক বিচারপ্রার্থীকে দূরদূরান্ত থেকে এসেও ফিরে যেতে হচ্ছে। এতে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বৃহত্তর বেঞ্চের বিচারপতিরা।

বিচারপতি শিবজ্ঞানম বলেন, ‘‘১৩ নম্বর কোর্ট নিয়ে আমরা চিন্তিত। সেখানে সরকারি আইনজীবীরা যাচ্ছেন না। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মানুষ এসে ঘুরে যাচ্ছেন। এটা চলতে পারে না।’’ আগামী ১৭ মার্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement