কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। —ফাইল চিত্র
প্রতারণা নয়, ব্রিটিশ নাগরিকদের কম্পিউটারে ভাইরাস পাচার করে ভয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা তোলা আদায় করেছে কলকাতার শরৎ বোস রোডের বাসিন্দা সিদ্ধার্থ বন্ঠিয়া। গত মাসে কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা একটি আন্তর্জাতিক সফ্টওয়্যার সংস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে বন্ঠিয়া সহ একাধিক ভুয়ো কল সেন্টারের পর্দা ফাঁস করে।
জানা যায়, কম পক্ষে ২৩ হাজার ব্রিটিশ নাগরিককে প্রতারণা করেছে তারা। সেই প্রতারণার কিনারা করতে পারেনি লন্ডন পুলিশও। কলকাতা পুলিশ ওই রহস্যের সমাধান করার পর মঙ্গলবার কমিশনার অনুজ শর্মা এবং গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন লন্ডন পুলিশের কমিশনার আয়ান ডায়সান। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সিদ্ধার্থ এবং তার সঙ্গীদের জেরা করতে গিয়ে তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন তদন্তকারীরা।
কীভাবে হত ওই প্রতারণা? জানা গিয়েছে, সিদ্ধার্থ প্রায় ৪০০ জন টেলিকলারকে মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা বেতন দিয়ে নিয়োগ করেছিল। সেই টেলিকলাররা মার্কিন এবং ব্রিটিশ নাগরিকদের ফোন করত। তাদের কাছ থেকে জানতে চাইত, কারও কোনও সফ্টওয়্যার সম্পর্কিত সমস্যা আছে কী না। ওই টেলিকলাররা নিজেদের একটি আন্তর্জাতিক সফ্টওয়্যার সংস্থার কর্মী হিসাবে পরিচয় দিত।
এই চিঠিই পাঠিয়েছে লন্ডন পুলিশ। ছবি সূত্র: কলকাতা পুলিশ
আরও পড়ুন: ‘বিদেশি গরু’র দুধেই মিলল সোনা! গবেষণার ‘তথ্য’ সাপ্লাই দিলেন দিলীপরাই
যাঁদের সমস্যা থাকত, তাঁদেরই একটি ভাইরাসে ভরা সফ্টওয়্যার পাঠাত সিদ্ধার্থর কোম্পানি। সেই সফ্টওয়্যার ডাউনলোড করার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যেত ওই কম্পিউটার এবং সেই বন্ধ কম্পিউটার খোলার পাসওয়ার্ড থাকত সিদ্ধার্থের কাছে। যখন ওই বিদেশি নাগরিক কম্পিউটার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রীতিমতো সন্ত্রস্ত তখন বন্ঠিয়ার টেলিকলাররাই রাশিয়ার কোনও সফ্টওয়্যার সংস্থার কর্মী সেজে প্রস্তাব দিত ওই পাসওয়ার্ড দিয়ে কম্পিউটার খুলে দেওয়ার। বিনিময়ে দাবি করত বিপুল অঙ্কের টাকা।
কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘ওরা বিভিন্ন জনের সঙ্গে দর কষাকষি করে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নিত। আমরা এ রকম এক জন প্রতারিতকে পেয়েছি যাঁর কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা আদায় করেছে বন্ঠিয়ার সংস্থা। ওই গোয়েন্দা কর্তা বলেন, মোট প্রতারণার পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: পুরুষ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে জোকায় চিকিৎসক মেসোর বাড়িতে ডাকাতি করল তরুণী
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তে সহযোগিতা করছে লন্ডন পুলিশও। ব্রিটেনের আদালতে প্রতারিতদের বয়ান রেকর্ড করছেন লন্ডন পুলিশের আধিকারিকরা। সেই বয়ান ভারতে ব্রিটেনের লিগ্যাল অ্যাটাশের মাধ্যমে পেশ করা হবে কলকাতার আদালতে।