লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থায় ফাইল ডাউনলোড নিয়ে ইডির ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় কলকাতা পুলিশ। — গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থা লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস নিয়ে কলকাতা পুলিশ এবং ইডির সংঘাত আরও এক ধাপ এগোল। যেখানে কলকাতা পুলিশ ইডির ব্যাখ্যায় ‘অসন্তুষ্টি’ জাহির করল। কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি সেই ‘অসন্তোষ’কে পাত্তা দিল না।
অভিষেকের অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থায় ইডির তল্লাশি এবং সংস্থার কম্পিউটারে সন্দেহজনক একাধিক ফাইলের উপস্থিতি নিয়ে ইডির তরফে দেওয়া মেল-ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় লালবাজার। কোনও এক জন আধিকারিককে সশরীরে এসে লালবাজারে বিষয়টির ব্যাখ্যা করার জন্য পাল্টা মেল করা হয়েছে কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে বলে সূত্রের খবর। সেই মেলের উত্তরও দিয়েছে ইডি। তাতে লিখেছে, তারা আগে যে মেল পাঠিয়েছে, তাতেই সব কিছু ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর নতুন কোনও ব্যাখ্যা তারা দিতে পারবে না। ফলে লালবাজার-ইডি সংঘাত আরও প্রকট হল বলেই মনে করা হচ্ছে।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সোমবার মেয়ো রোডের জনসভায় বক্তৃতা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থাটিকে আগাগোড়া ‘আমার সংস্থা’ বলে উল্লেখ করে অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘আমি যে দিন এসেছি, পরের দিন পাঠিয়ে দিয়েছে ইডিকে তল্লাশি করতে! আমার অফিসে গিয়ে তল্লাশি করেছে। তার সঙ্গে ১৬টা ফাইল একটা কম্পিউটারে ডাউনলোড করে দিয়ে চলে এসেছে।’’ এ বার সেই ডাউনলোড-ব্যাখ্যা নিয়েই নতুন করে সংঘাত তৈরি হল কলকাতা পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডির। কী করে অভিষেকের সংস্থার কম্পিউটারে ১৬টি ফাইল এল, তা জানতে ইডির কাছে জবাব তলব করেছিল লালবাজার। মেল করে সেই জবাব দিয়েছিল ইডি। তদন্তকারী সংস্থার বক্তব্য ছিল, তাদের এক আধিকারিক তল্লাশি চালাতে গিয়ে সংস্থার কম্পিউটার থেকে নিজের কন্যার কলেজের হস্টেলের খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। তা করতে গিয়ে কোনও ভাবে ওই ফাইলগুলি ডাউনলোড হয়ে গিয়ে থাকবে। তবে সংস্থার কর্মীদের উপস্থিতিতেই যা করার করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে তাদের ‘অন্য’ কোনও উদ্দেশ্য ছিল না বলেই দাবি করে ইডি। কিন্তু লালবাজার সূত্রে খবর, ইডির ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন পুলিশের কর্তারা। তাঁরা পাল্টা ইডিকে একটি মেল করেছেন। যার নির্যাস, কোনও এক জন ইডি অফিসার সশরীরে লালবাজারে হাজির হয়ে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিন।
ইডি সূত্রে খবর, নিয়োগ মামলায় অধুনা জেলবন্দি সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকুর সংস্থা এসডি এন্টারপ্রাইজ়ের সঙ্গে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থাটির লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। চার্জশিটে ইডি দাবি করেছে, ২০২০-’২১ সালের মধ্যে সুজয়কৃষ্ণের এসডি এন্টারপ্রাইজ়ের সঙ্গে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডসের ৯৫ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে। সেই সূত্রেই ওই সংস্থার আলিপুরের অফিসে রাতভর তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি। কিন্তু তল্লাশি শেষে অফিসের লোকেরা বুঝতে পারেন, সংস্থার একটি কম্পিউটারে অন্তত ১৬টি ফাইল ডাউনলোড করা হয়েছে। তা নিয়ে লালবাজারে অভিযোগ দায়ের হয়। লালবাজার এ ব্যাপারে জবাব চায় ইডির কাছে। মেল করে জবাব দেয় ইডি। কিন্তু সেই জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারছে না কলকাতা পুলিশ। এ বার সেই ব্যাপারেই ইডি আধিকারিককে লালবাজারে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার কথা জানিয়ে পাল্টা মেল গেল ইডির কাছে। ইডি সেই মেলের জবাবে বলেছে, তারা যা ব্যাখ্যা দেওয়ার, তা আগের মেলেই দিয়েছে। এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। সুতরাং, লালবাজার-ইডির সংঘাত চলছেই।