ছবি: সংগৃহীত
বিল এখনও আইনে পরিণত হয়নি বলেই গর্ভদাত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে তেমন কিছু করার নেই তাদের। এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে পুলিশ। অভিযোগকারী দম্পতির বক্তব্য, ‘‘আমরা বড়সড় প্রতারণার শিকার হয়েছি। পুলিশ চক্রটাকে ধরুক। ধৃত মহিলা যা বলছেন, তাতে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে।’’
নিউ আলিপুরের ওই নিঃসন্তান দম্পতির অভিযোগ, ‘‘সারোগেসি বিল আইনে পরিণত হয়নি বলে পুলিশ আমাদের দায়ের করা অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। শুধুমাত্র সন্তান লাভের আশায় গত আট মাস ধরে যে ভাবে আমরা প্রতারণার শিকার হয়েছি, তাতে একটা কথাই বলতে চাই, পুলিশ ঘটনার যথাযথ তদন্ত করুক।’’
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৯ ডিসেম্বর বিকেলে হরিদেবপুরের হোম থেকে গর্ভদাত্রী মা পালিয়ে যান। ১৮ ডিসেম্বর ওই তরুণী ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি মৃত সন্তান প্রসব করেন। অভিযোগকারী দম্পতি বুধবার বলেন, ‘‘গর্ভদাত্রী মায়ের খোঁজে ১৫ ডিসেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের গ্রামে গিয়েছিলাম। বাড়িতে ওঁকে পাইনি। মহিলার বাবার মোবাইলের মাধ্যমে ওঁর সঙ্গে কথা বলি। তিনি জানান, লক্ষ্মীকান্তপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। কিন্তু তার বেশি কিছু জানাননি। শুধু বলেছিলেন, হোমে ফিরবেন না। আর শিশুটিকে নষ্ট করে দিয়েছেন।’’ দম্পতির অভিযোগ, গর্ভদাত্রী মা ১৮ ডিসেম্বর ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত সন্তান প্রসব করেছেন বলে পুলিশ প্রমাণ্য নথি পেয়েছে। অথচ ওই মহিলা ১৫ তারিখ ফোনে তাঁদের বলেছেন যে, তিনি শিশুটিকে নষ্ট করে ফেলেছেন। এ ক্ষেত্রে মহিলার বয়ানে অসঙ্গতি স্পষ্ট।
ওই দম্পতি আরও বলেন, ‘‘গত জুলাই মাসে সারোগেসি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত চুক্তির সময়ে কাগজে মহিলার স্বামীর সই রয়েছে। অথচ, আমরা এখন জানতে পেরেছি, তাঁর স্বামী সাত বছর আগেই মারা গিয়েছেন।’’ তাঁদের প্রশ্ন, এক জন মৃত ব্যক্তি সই করতে পারেন কী ভাবে? পুলিশ খতিয়ে দেখুক। ওই দম্পতির আইনজীবী পায়েল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘গত ৯ ডিসেম্বর ওই গর্ভদাত্রী মা নিখোঁজ হওয়ার পরে আমার মক্কেলরা অনেক চেষ্টা করেও তাঁর খোঁজ পাননি। যে সংস্থার মাধ্যমে সারোগেসি প্রক্রিয়ায় তাঁরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন, সেই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাড়তি দু’লক্ষ টাকার বিনিময়ে শিশু কেনার টোপ দেওয়া হয়। এ থেকেই আমাদের অনুমান, ওই সংস্থার সঙ্গে প্রতারণা-চক্রের যোগসাজশ রয়েছে।’’
ওই দম্পতি জানান, গত বছরের জুলাই মাস থেকে গর্ভদাত্রী মা হরিদেবপুরের হোমে ছিলেন। দুর্গাপুজোর সময়ে প্রায় দু’সপ্তাহের জন্য হোম থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ওই দম্পতির অভিযোগ, ‘‘হোম থেকে পালিয়ে যাওয়ার পিছনেও সংস্থার এক মহিলা এজেন্টের ভূমিকা রয়েছে। ওই মহিলাই বাড়তি ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম হিসেবে আদায়ের জন্য গর্ভদাত্রীকে নিয়ে গায়েব হয়ে গিয়েছিল। পরে ওই সংস্থার তরফে অগ্রিম টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে গর্ভদাত্রীকে কালীপুজোর আগে হোমে ফিরিয়ে আনা হয়।’’
দম্পতির দাবি, কালীপুজোর আগে যে দিন গর্ভদাত্রী হরিদেবপুরের হোমে ফিরে এলেন, সে দিনই এজেন্টের হাতে ওই সংস্থা তিরিশ হাজার টাকা দিয়েছিল। বিষয়টি তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছিলেন। ওই দম্পতির কথায়, ‘‘সন্তান লাভের আশায় বুক বেঁধেছিলাম। গর্ভদাত্রী মা হরিদেবপুরের হোমে থাকতে পছন্দ করছিলেন না বলে তাঁকে পাশের একটি ছোট ফ্ল্যাটে রাখা হয়েছিল। সঙ্গে তাঁর ১১ বছরের মেয়েও থাকত। ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত গর্ভস্থ শিশুর শারীরিক অবস্থাও ঠিকঠাক ছিল। এত যত্ন নেওয়ার পরেও উনি হঠাৎ কেন পালিয়ে গেলেন, বুঝতে পারছি না।’’ লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে। এফআইআরের তালিকায় থাকা প্রত্যেকের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’