এ বার বিধিভঙ্গকারীর সংখ্যা বাড়ায় কঠোর হাতে পরিস্থিতি সামলানোর নির্দেশ দিয়েছে লালবাজার। ফাইল চিত্র।
সংক্রমণের লেখচিত্রের সঙ্গেই শহরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিধিভঙ্গের খেলা। এখনও শহরবাসীর একাংশ রাতপথে ‘জয় রাইডে’ বেরোচ্ছেন। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে প্রাপ্ত আইনভঙ্গের তথ্য থেকে এমনটা জানা যাচ্ছে। নৈশ বিধিনিষেধ ফের চালু হওয়ার পর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিধিভঙ্গের গেরোয় সাত হাজারের বেশি মামলা রুজু হয়েছে। শুধু শেষ তিন দিনেই আইন ভাঙা হয়েছে ২১০০-এর বেশি!
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, ৩ জানুয়ারি থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত শুধু নৈশ বিধিনিষেধ ভাঙার দায়েই ৭৩৬৬টি মামলা রুজু হয়েছে। রবি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত শুধু রাতের সেই মামলার সংখ্যা ২১৬২টি বলে খবর। আর মঙ্গলবার রাতে মামলা দায়ের হয়েছে ৬৩৭টি। সোম ও রবিবার রাতে তা ছিল যথাক্রমে ৭৭৯ এবং ৭৪৬টি।
বর্ষবরণ উৎসবে রাতের বিধিনিষেধে ছাড়ের ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। উৎসবের পর পরই সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে দেখে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। রাতের বিধিনিষেধের সময়সীমা রাত দশটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত জারি হয়। ‘নাইট কার্ফু’ চলাকালীন জরুরি কারণ ছাড়া বেরোনোর ক্ষেত্রেও নিষেধ বলবৎ রয়েছে।
অভিযোগ, তার পরেও বিধি উড়িয়ে হুল্লোড় চলছে। রাত বাড়তেই অনেকে বাইক অথবা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন শহরের রাস্তায়। তারস্বরে গান চালিয়ে চারচাকায় গতির ঝড় তুলতেও দেখা যাচ্ছে রাতের শহরে। মাস্ক পরার সচেতনতাও মানা হচ্ছে না বহু ক্ষেত্রে বলে অভিযোগ উঠছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে ‘ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার’ বন্ধের সুযোগ নিচ্ছেন এক শ্রেণির চালক। এর ফলে পথ দুর্ঘটনার
আশঙ্কা বাড়ছে। পুলিশি ধরপাকড় এড়াতে কেউ হাসপাতালে যাওয়ার অজুহাত দেখাচ্ছেন, কেউ আবার অফিস থেকে বেরোতে দেরি হয়ে যাওয়ার বাহানা দিচ্ছেন। বাইপাসে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্মীবলছেন, ‘‘কত নজরদারি চালাব! সেটা করতে গিয়ে তো একের পর এক পুলিশকর্মী সংক্রমিত হচ্ছেন। তার পরেও মানুষের হুল্লোড়, আনন্দের শেষ হচ্ছে না। রাত হলেই গাড়ি নিয়ে অনেকে বেরিয়ে পড়ছেন ‘জয় রাইডে’। এ ভাবে কী সংক্রমণ কমানো সম্ভব?’’
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, রাতের বিধি বলবৎ করতে ট্র্যাফিক গার্ডগুলির পাশাপাশি থানাও নজরদারি চালাচ্ছে। পার্ক সার্কাস, সায়েন্স সিটি, উল্টোডাঙা, রুবি, গড়িয়াহাট, রাসবিহারী,পার্ক স্ট্রিট-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চলছে নাকা তল্লাশি। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘বিধিভঙ্গের বহর দেখে শহরের প্রতিটি থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডকে রাতের নজরদারি আরও বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাতে বেরোনোর উপযুক্ত কারণ দেখাতে না পারলে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে মামলা দায়ের করার কথাও বলা হয়েছে।’’