অব্যবস্থা: এসি থেকে জল পড়ছে মেট্রোর কামরার ভিতরে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
পাতালের সুড়ঙ্গপথ ধরে দমদম থেকে বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশনের দূরত্ব দু’কিলোমিটারের কিছু বেশি। কিন্তু ক’পা হাঁটলে তবে দমদম থেকে বেলগাছিয়া স্টেশনে পৌঁছনো যাবে? আবার দূরত্ব সব চেয়ে কম ধর্মতলা আর চাঁদনি চক স্টেশনের মধ্যে। ৫৫০ মিটার। কিন্তু সেটাই বা কত পা? কোন স্টেশনের গঠন কী রকম, স্টেশন মাস্টারের ঘরই বা কোথায়, চলমান সিঁড়িটাই বা কোন দিকে?
মহড়া অনেক হয়েছে। এ বার দমদম থেকে টালিগঞ্জ তথা মহানায়ক উত্তম কুমার স্টেশন পর্যন্ত মেট্রো রেলের অন্ধি-সন্ধি জানতে পাতালের এই ১৬ কিলোমিটার সুড়ঙ্গপথে ‘রেকি’ করবেন কলকাতা পুলিশের কম্যান্ডোরা। মেট্রোয় জঙ্গি হামলা হলে বা কোনও বিপর্যয় ঘটলে যাতে ত্রাতা হিসেবে তাঁরা অবতীর্ণ হতে পারেন, সে কথা ভেবেই কম্যান্ডোরা সরেজমিন ওই পরিদর্শন করে খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করবেন। মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চেয়ে দেখবেন ১৭টি স্টেশনের প্রতিটির ব্লু প্রিন্ট।
লালবাজার সূত্রের খবর, এ মাসে দুর্গাপুজোর আগেই কম্যান্ডোরা দিন পাঁচেক মেট্রোর পাতালপথে ওই কাজ করবেন। প্রত্যেক রাতে ছ’-সাত ঘণ্টা ধরে তাঁদের অনুশীলন চলবে। মেট্রোয় কলকাতা পুলিশের কম্যান্ডোরা এ বারই প্রথম রেকি করবেন।
সম্ভাব্য জঙ্গি হামলা বা বিপর্যয়ের কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের কম্যান্ডোরা রেকি করেছেন শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জায়গায়। নবান্ন, বিধানসভা ভবন, মহাকরণ, তিনটি পাঁচতারা হোটেল, দু’টি স্টেডিয়ামে ওই কাজ হয়েছে।
কিন্তু সুরক্ষার কথা মাথায় রাখলে জনসমাগমের নিরিখে মেট্রো রেল বাকিগুলির চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
মেট্রো রেলের হিসেব বলছে, পুজোর বাজারের এই মরসুমে গড়ে রোজ তাদের যাত্রী হচ্ছে সাত লক্ষেরও বেশি। সাধারণ সময়ে কাজের দিনে যাত্রী হয় এর চেয়ে এক লক্ষ কম। ভিড়ে ঠাসা এক-একটি ট্রেনে যাত্রী ধরে কম-বেশি ৩২০০ জন। আবার মাটির নীচের রেলপথ বলে দমদম থেকে মহানায়ক উত্তমকুমার পর্যন্ত ওই ১৬ কিলোমিটার সব চেয়ে বেশি স্পর্শকাতর। তাই কম্যান্ডোরা রেকি করবেন সেখানেই।
কলকাতা পুলিশ জানাচ্ছে, অন্তত জনা পাঁচেক কম্যান্ডো ওই রেকি-তে অংশ নেবেন। এঁদের মধ্যে দু’জন অফিসার, এক জন আলোকচিত্রী ভিডিও ও স্থিরচিত্র তুলবেন, এক জন সব দেখেশুনে পরে স্কেচ করবেন। সেই সঙ্গে এমন এক জন কম্যান্ডোও থাকবেন, যাঁর স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর। যিনি রেকি-র সময়ে বহু খুঁটিনাটি দেখে, জেনে ও বুঝে পরে মনে রাখতে পারবেন। রেকি-র সময়ে কলকাতা পুলিশের কম্যান্ডোরা বিস্তারিত কথা বলবেন সিসিটিভি অপারেটর, কেয়ারটেকার ও প্রতিটি স্টেশনের বৈদ্যুতিক সংযোগের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক ও রেল সুরক্ষা বাহিনীর (আরপিএফ) কম্যান্ডোদের সঙ্গে। প্রসঙ্গত, মেট্রোর সুরক্ষায় এখন আরপিএফের ৩০ জন কম্যান্ডো রোজ দু’টি শিফ্টে মোতায়েন থাকেন।
কিন্তু কলকাতা পুলিশের কম্যান্ডো এখন ১৬০ জন। তাঁদের মধ্যে সাকুল্যে পাঁচ-ছ’জনকে ওই রেকি করতে পাঠিয়ে কী লাভ হবে?
লালবাজারের এক কর্তা বলছেন, ‘‘পাঁচ রাত রেকি করে আমরা যে সব তথ্য পাব, তা নিয়ে বিস্তারিত কাঁটাছেড়া ও আলাপ-আলোচনা হবে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে কম্যান্ডোদের ক্লাসে। অন্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেকি করেও সেটাই হয়েছে।’’