ছবি: সংগৃহীত।
ইতিমধ্যেই চার্জশিট পেশ হয়েছে। আর কিছু দিনের মধ্যে শুনানি শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু আলিপুরের সেনা হাসপাতালে জলে ডুবে মৃত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর পরিবারের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ যথাযথ তদন্ত করেনি।’’ পরিবারের সদস্যেরা প্রশ্ন তুলেছেন, চার্জশিটের যৌক্তিকতা নিয়ে। এমনকি, আদালতে পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখার আবেদনও তাঁরা করতে চলেছেন বলে জানাচ্ছেন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আলিপুরের সেনা হাসপাতাল চত্বরে জলে ডুবে মৃত্যু হয় বেহালার বাসিন্দা এক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর। স্কুলের শিক্ষিকারাই তাকে কম্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। এর পরে এই মৃত্যু নিয়ে শহর কলকাতায় শোরগোল পড়ে যায়। ওই ঘটনায় গত ২০ মে-ই আদালতে চার্জশিট পেশ করেছে পুলিশ। যে সেনা স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার অধ্যক্ষা এবং এক জন আয়ার ভূমিকায় গাফিলতির কথাও চার্জশিটে বলা হয়েছে বলে অভিযোগকারী পরিবারের দাবি। মৃত শিশুটির বাবার অবশ্য বক্তব্য, ‘‘চার্জশিটে এক জন বা দু’জনের নাম লেখা হচ্ছে কেন? শুধুমাত্র অশিক্ষক কর্মীদের দোষ দেখা হচ্ছে। দায়ী তো গোটা স্কুল! আমরা পুলিশের ভূমিকাও খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানাব আদালতে।’’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ঘটনার সময়ে স্কুলের সিসি ক্যামেরা বন্ধ ছিল। পরে তা চালানো হয়েছিল। সেই সময়ের ফুটেজ আসল কি না, খতিয়ে দেখতে ফরেন্সিক ল্যাবে হার্ড ডিস্ক পাঠিয়েছে পুলিশ। শিশুর বাবা বললেন, ‘‘ওই হার্ড ডিস্ক পরীক্ষা হয়ে আসতে নাকি চার বছর লেগে যাবে। পুলিশকে এটাই চিঠি দিয়ে জানিয়েছে ফরেন্সিক ল্যাব। সব তথ্য-প্রমাণ হাতে না নিয়ে পুলিশ তদন্ত এগোল কী করে?’’ শিশুর পরিবার আরও দাবি করেছে, সে দিন ওই স্কুলে একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছিল। সেখান থেকে ফিরে শিশুটিকে এক আয়ার কাছে রাখা হয়েছিল। অভিযোগ, তিনি শিশুটিকে একা ফেলে চলে গিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে স্কুলে সুইমিং থেরাপির যে জলাধারে পড়ে শিশুটির মৃত্যু হয়, সেখানে ওই সময়ে জল থাকা বা জলাধারের ঘরের দরজা খোলা থাকারই কথা ছিল না বলে অভিযোগ। চাপের মুখে সে সময়ে জোর তদন্ত শুরু করে পুলিশ। স্কুলের সকলকেই দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
আলিপুর থানার তদন্তকারী (এই মৃত্যু তাঁর তদন্তাধীন) আধিকারিক এ দিন বলেন, ‘‘সকলের সঙ্গে কথা বলে এবং তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। এর পর আদালত যা নির্দেশ দেবে সেই মতো চলা হবে।’’ স্কুলের অধ্যক্ষা সুদেষ্ণা বসুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাই না। তবে ওই শিশুর মৃত্যু দুঃখজনক।’’
দুঃখের স্মৃতি মেখেই শিশুটির বাবা-মা ফিরে যান ছেলের কথায়। ২০ ফেব্রুয়ারি মায়ের জন্মদিনেই মৃত্যু হয়েছিল তার। সেই শিশুটির জন্মদিনও তার বাবার কাছে রেখে গিয়েছে একরাশ হতাশা। কারণ, ওই দিনই আবার ফাদার্স ডে। শিশুর বাবা বললেন, ‘‘১৬ জুন ওর জন্মদিন। ওই দিনই ফাদার্স ডে। ভাবুন এক বার!’’ শিশুটির মা বললেন, ‘‘ছেলে যে প্লে-স্কুলে যেত, সে দিন ওখানে আমরা গিয়েছিলাম। সেখানকার বাচ্চাদের কিছু উপহার দিলাম। কেক কাটা হল। ওই, যে ভাবে ছেলের জন্য করতাম সে রকমই...!’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।