কেনাকাটার ভিড় সামলাতে নাজেহাল পুলিশ

সঙ্গে তালিকা থাকুক আর না-ই থাকুক, মহালয়ার আগে শেষ রবিবার শহরের বাজারগুলির এমনই অবস্থা ছিল যে, ভিড়ের মধ্যে পড়ে ধাক্কা খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। প্রায় সর্বত্রই ক্রেতাদের চাপে নাভিশ্বাস অবস্থা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৪৪
Share:

লোকারণ্য: দড়ি দিয়ে রাস্তার একাংশ ঘিরে ভিড় সামলাতে হচ্ছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের। রবিবার, গড়িয়াহাট মোড়ে। নিজস্ব চিত্র

প্রবল ভিড়ের মধ্যে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পড়ে সঙ্গীকে মোবাইল ফোন দেখাচ্ছেন এক তরুণী। পিছন থেকে প্রবল চিৎকার, ‘‘সিনেমা দেখতে এসেছেন নাকি! এগিয়ে চলুন।’’ মোবাইল হাতে দু’জনের অবশ্য সে দিকে খেয়াল নেই। এক জন আর এক জনকে বললেন, ‘‘এ তো ফর্দ! সব লিখে এনেছিস দেখছি।’’ পাশের জনের উত্তর, ‘‘সব মিলিয়ে ২০ জনের জন্য কিনতে হবে। অত মনে রাখা যায়? উদ্‌ভ্রান্তের মতো ধাক্কা খাওয়ার চেয়ে এটা দেখেই সব কিনে ফেলব।’’

Advertisement

সঙ্গে তালিকা থাকুক আর না-ই থাকুক, মহালয়ার আগে শেষ রবিবার শহরের বাজারগুলির এমনই অবস্থা ছিল যে, ভিড়ের মধ্যে পড়ে ধাক্কা খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। প্রায় সর্বত্রই ক্রেতাদের চাপে নাভিশ্বাস অবস্থা। কোথাও ক্রেতাদের ভিড় নেমে গিয়েছে রাস্তায়। কোথাও দুপুরের পর থেকে বাড়তে থাকা ক্রেতার চাপে প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল যান-চলাচল। হাতিবাগানে যেমন, রাস্তার গতি ফেরাতে মোতায়েন করতে হয়েছে বাড়তি পুলিশকর্মী। গড়িয়াহাটেরও একই অবস্থা। সেখানে স্রেফ চার মাথার মোড়ের জন্যই এ দিন রাখতে হয়েছে ১৮ জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে। ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী, স্থানীয় রবীন্দ্র সরোবর ও লেক থানার আধিকারিক মিলিয়ে আরও ১০ জন। এক সিভিক ভলান্টিয়ার বললেন, ‘‘কত ভিড় দেখেছেন! মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। পুজোর জন্য আমাদের ডিউটি বেড়ে গিয়েছে তিন ঘণ্টা।’’ যা শুনে ধর্মতলার ব্যাগের ব্যবসায়ী মহম্মদ ফিরোজ বললেন, ‘‘এখন তো ভিড় হবেই। এই ক’দিন ভিড় না হলে আর কবে হবে?’’

একই সুর শোনা গেল বারাসত কলোনি মোড় থেকে হাতিবাগানে শপিং করতে আসা মুখোপাধ্যায় দম্পতির গলায়। স্বপ্না মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘শাড়ি, জুতো আর শাড়ির সঙ্গে পরার মতো গয়নার জন্য প্রতিবার হাতিবাগানে আসি। এখন না কিনলে আর ভাল কিছু থাকবে না। আগে কেনার তাড়ায় এত ভিড়।’’ পাশে দাঁড়ানো তাঁর স্বামী বললেন, ‘‘ছেলেমেয়েরা সব অনলাইনে কিনে নেয়, তবে আমাদের ও সব পোষায় না।’’ ধর্মতলায় বন্ধুদের সঙ্গে পুজোর কেনাকাটায় ব্যস্ত স্নিগ্ধা হালদার আবার বললেন, ‘‘অনলাইনে দেখে ছবি নামিয়ে রেখেছি। ছবিগুলো দেখিয়ে দোকান থেকে কিনে নিতে হবে। কিন্তু যা ভিড় দেখছি, তাতে অন্য দিন আবার আসতে হবে।’’

Advertisement

বাজারের এত ভিড় দেখেও আবার মন ভরছে না গড়িয়াহাটের হকার রাজু দাসের। তাঁর দাবি, সরকার থেকে হকারদের যে স্টল দিয়েছে তাতে বিক্রির সামগ্রী ডাঁই করে রেখে স্টলের বাইরে দোকান পেতে বসছেন বিক্রেতারা। তাঁর কথায়, ‘‘এর জন্য ভাল ক্রেতা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ভিড়ে ফুটপাতে না উঠে অনেকেই রাস্তা থেকে অন্য দিকে চলে যাচ্ছেন।’’ হাতিবাগান মার্চেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রঞ্জন রায় আবার বলছেন, ‘‘পুজোর আগে এই ক’দিন দম ফেলার ফুরসত থাকে না। এ বারও তেমনটাই হচ্ছে। এক জনে কুলোনো যাচ্ছে না। অনেককেই পরিবারের লোক এনে দোকানে বসাতে হচ্ছে।’’

এত সবের মধ্যেও ভিড়ের জটিলতায় অবশ্য মন নেই বড়দের সঙ্গে বাজারে হাজির খুদেদের। হাতিবাগানে দেখা গেল, বাবা-মা টেনেও সরাতে পারছেন না এক খুদেকে। শার্ট-ট্রাউজার্স নয়, তার চাই দুর্গা প্রতিমার আদলে গড়া মেয়েদের গলার হার। গড়িয়াহাটে বছর পাঁচেকের এক শিশু আবার বায়না ধরেছে, ‘‘জিন্‌স পরে। আগে এরোপ্লেন দাও।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement