জলের পাত্র ভরে রাখতে লাইন। দক্ষিণ কলকাতায়।
বিরোধী বাম বা বিজেপি নয়, পানীয় জলের সঙ্কট নিয়ে এ বার সরব খোদ শাসক দলের কাউন্সিলর থেকে বরো চেয়ারম্যান। গরম বাড়তেই দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ এবং যাদবপুর এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট মেটাতে সমস্যায় পড়েছেন একাধিক তৃণমূল কাউন্সিলর। ১০ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘প্রতি দিনই বাসিন্দারা জল নিয়ে সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। বিষয়টি মেয়রকেও জানিয়েছি। কিন্তু এখনও সমাধান করা যায়নি।’’ ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ওয়ার্ডের ৬০ শতাংশ এলাকায় জলের পাইপলাইনই নেই। বছরের অন্য সময় জলের গাড়ি এনে সামাল দেওয়া হলেও, গরম বাড়তেই সমস্যাও বাড়ছে।’’ বিষয়টি পুরসভার জল সরবরাহ দফতরকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
পুরসভা সূত্রের খবর, পলতা, গার্ডেনরিচ, ধাপা-সহ কলকাতার বাকি জলপ্রকল্পগুলি থেকে দৈনিক ১৮০ কোটি লিটার পরিস্রুত পানীয় জল উৎপাদিত হয়। এর বাইরে রয়েছে গভীর নলকূপ থেকে তোলা ভূগর্ভস্থ পানীয় জল এবং অগভীর নলকূপের জল। শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ লক্ষ। সেই হিসেবে মাথা পিছু দৈনিক ৪০০ লিটার পরিস্রুত পানীয় জল পাওয়ার কথা। আর এই হিসেবটা মাথায় রেখেই একাধিক বার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, কলকাতায় জলের সঙ্কট নেই। তা হলে জল সঙ্কটের প্রশ্ন আসছে কেন? প্রায় প্রতি বছরই বিরোধী দলের কাউন্সিলরেরা পানীয় জলের সঙ্কট নিয়ে পুরসভার দরবার করেছেন। এ বছর গরম পড়তেই পানীয় জল নিয়ে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছেন শাসক দলের কাউন্সিলরেরাও।
বাইপাসের ধারে অহল্যানগর এলাকায় সে রকমই এক চিত্র ধরা পড়ল। সেখানে একটি কলের সামনে বালতি, জলের জার, হাঁড়ি থেকে শুরু করে গোটা চল্লিশেক নানা মাপের পাত্র নিয়ে এলাকার বাসিন্দারা জল ধরার অপেক্ষায়। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘জলের চাপ একদম নেই। সরু হয়ে জল পড়ছে।’’ ওই এলাকার ভগৎ সিং কলোনি, বীরেশ গুহ কলোনি, কালিকাপুর, বাঘা যতীন আবাসন, নয়াবাদ, অজয়নগর, নিউ গড়িয়া সমবায় আবাসন সর্বত্রই পানীয় জলের সঙ্কটে ভুগছেন বাসিন্দারা। নয়াবাদ এবং অজয়নগরে পুরসভার জল পৌঁছয়নি বলেই জানিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর।
টালিগঞ্জেও জলের অভাব তীব্র। তপনবাবু জানান, তাঁর ৯৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় ১৩টি গভীর নলকূপ রয়েছে। সব থেকে বড় নলকূপটি বিকল হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। জলের গাড়ি দিয়ে কিছুটা অভাব মেটানোর চেষ্টা হলেও তা যথেষ্ট নয়। পাইপ লাইনে জল আসে না? তাঁর বক্তব্য, ‘‘গার্ডেনরিচ থেকে যে জল আসে তা ৪০-৪৫ মিনিটের বেশি থাকে না। সেই জলের চাপও কম।’’