‘ক্রায়োনিক্স’ বুঝতে পাড়ি বিদেশেও

মনোরোগ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গম্ভীর মুখে এমনটাই জানিয়েছেন বেহালার যুবক শুভব্রত মজুমদার। যা শুনে ওই চিকিৎসকের ধারণা, শুভব্রত সম্ভবত স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। কারণ, নিজের গড়ে তোলা কাল্পনিক এক জগতেই সারাক্ষণ বিচরণ করছেন তিনি।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ ও শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:২৯
Share:

শুভব্রত মজুমদার।

ব্রিটেনকে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে ‘ক্রায়োনিক্স’ পদ্ধতিতে দেহ সংরক্ষণের স্বত্ব নিয়ে নিতে জার্মানি ও রাশিয়া নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালাচ্ছে! যার জেরে অচিরেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগতে পারে! পরিস্থিতি সরজমিন খতিয়ে দেখতেই নাকি তিনি বিদেশে গিয়েছিলেন!

Advertisement

মনোরোগ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গম্ভীর মুখে এমনটাই জানিয়েছেন বেহালার যুবক শুভব্রত মজুমদার। যা শুনে ওই চিকিৎসকের ধারণা, শুভব্রত সম্ভবত স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। কারণ, নিজের গড়ে তোলা কাল্পনিক এক জগতেই সারাক্ষণ বিচরণ করছেন তিনি।

তিন বছরে তিন-চার বার বিদেশে গিয়েছিলেন শুভব্রত। তাতে খরচ হয়েছিল প্রায় ২০ লক্ষ টাকা! বেহালার ওই যুবককে জেরা করে এমনটাই জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। শুভব্রতর দাবি, আমেরিকার অ্যারিজোনার একটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি ইন্টারনেট ঘেঁটে রাশিয়া ও জার্মানিতেও ‘ক্রায়োনিক্স’ পদ্ধতিতে মৃতদেহ সংরক্ষণকারী সংস্থার খোঁজ পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর দাবি, বিদেশে গিয়ে ওই সব সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। তাঁদের আলোচনাসভাতেও যোগ দিতেন বলে দাবি শুভব্রতর।

Advertisement

মৃতা মা বীণা মজুমদারের শরীর থেকে কেটে রাখা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিদেশে নিয়ে গিয়ে গবেষণা করার পরিকল্পনা ছিল বলেও পুলিশকে জানিয়েছেন শুভব্রত। বিদেশে সংরক্ষিত অন্যের অঙ্গ নিয়ে আসারও কথাও ভেবেছিলেন তিনি। সে জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ১৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়ার ভাবনাও ছিল। জেরার মুখে শুভব্রত বলেছেন, বয়সজনিত কারণে বীণাদেবীর কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষমতা কমে গিয়েছিল। তাই মস্তিস্ক ফের সচল হলেও ওই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে কাজ চালানো মুশকিল হত। তাই মা ‘বেঁচে উঠলেই’ বিদেশ থেকে আনা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা ছিল তাঁর।

ছেলের কর্মকাণ্ড জেনেও কিছু বলার সাহস পেতেন না বাবা গোপালবাবু। তিনি ফ্রিজারের কথা বাইরে জানানোর কথা বললেই আত্মহত্যার ভয় দেখাতেন শুভব্রত। বার তিনেক গায়ে কেরোসিনও ঢেলেছিলেন। জেরায় শুভব্রত বলেছেন, ‘ক্রায়োপ্রিজার্ভেশন’ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বাদ দিতে হয়। কারণ, তা থেকেই পচন ধরে। কিন্তু মায়ের দেহ তাঁর পক্ষে কাটা সম্ভব ছিল না। তাই পিস হেভ্‌নে কয়েক দিন মৃতদেহ রেখে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক ও ডোমের খোঁজ করেন। তখন এক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে মায়ের দেহ সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন বলেও দাবি তাঁর।

বিভিন্ন জায়গায় মুচলেকা দিয়ে ফর্মালিন জোগাড়ের পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের এক ডোমকে জোগাড় করেছিলেন বলে জানিয়েছেন শুভব্রত। পুলিশ সূত্রের খবর, ময়না-তদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ওই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পটু হাতে কাটা হয়নি। কারণ, কয়েকটি জায়গা কাটতে না পেরে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement