অভিযানে নেমে এমনই বোতলবন্দি জলের নমুনা সংগ্রহ করল পুরসভা। বুধবার, ক্যানাল সার্কুলার রোডে। —নিজস্ব চিত্র।
বাঘা যতীন, যাদবপুর এলাকায় সম্প্রতি আন্ত্রিক ছড়ানোর পিছনে পুরসভার জল দায়ী নয় বলে এখনও দাবি করছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। বরং শহরের জল দূষণের জন্য বোতলবন্দি জলের দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন তিনি। বুধবারও কলকাতার পাঁচটি এলাকায় পুলিশ ও পুরসভার দল বোতলবন্দি জল তৈরির কেন্দ্রগুলিতে অভিযান চালায়।
প্রসঙ্গত আন্ত্রিক শুরুর দিন তিনেক পরে আক্রান্ত এলাকা থেকে পাঁচটি জলের নমুনা সংগ্রহ করেছিল পুরসভা। তাতে পুরসভার সরবরাহ করা জল এবং বোতলের জল দুইই ছিল। কিন্তু পুরসভার জলে বিশেষ কিছু পাওয়া যায়নি বলে বুধবারও জানিয়েছেন মেয়র। এরই মধ্যে এ দিন একাধিক বোতলবন্দি জল প্রস্তুতকারক সংস্থায় অভিযান চালায় পুরসভার ফুড সেফটি অফিসার এবং এনফোর্সমেন্ট শাখা। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কসবা, লস্করহাট এবং ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে ১৪টি বিভিন্ন নামের বোতল থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার জলের পরীক্ষার ফল জানাতে পারে পুরসভা।
জল তৈরির কেন্দ্রে মঙ্গলবার থেকে অভিযান চললেও প্রশ্ন উঠছে, তবে শহরে যে জল বোতলে বন্দি হচ্ছে, তা আসছে কোথা থেকে! পুলিশের প্রশ্ন, ব্যবসার জন্য জলের অফুরন্ত জোগান দরকার। শহরে সেই পরিমাণ জলের জোগান একমাত্র পুরসভাই দিতে পারে। কখনও অবশ্য তা ভূগর্ভস্থ জল থেকেও মেলে। কিন্তু মাটির উপরের বা নীচের যে জলই হোক না কেন, তা পুরসভার অনুমোদন ছাড়া কখনওই সম্ভব নয়। তবে কি কলকাতা পুরসভার অনুমোদন রয়েছে?
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, মাটির নীচ থেকে গভীর নলকূপের সাহায্যে জল তুলতে হলে কলকাতার ক্ষেত্রে পুর প্রশাসন এবং রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতর (স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট বা সুইড)-এর অনুমোদন লাগে। পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের এক অফিসার জানান, তাঁদের দফতর কোনও জল প্রস্তুতকারক সংস্থাকে মাটির নীচ থেকে জল তোলার অনুমোদন দিয়েছে, এমন খবর জানা নেই। এ তথ্যও মিলছে যে কলকাতা পুরসভার ভিতরেই জল প্রস্তুতকারক বেশ কয়েকটি সংস্থা রয়েছে। তা হলে তারাই বা জল পাচ্ছে কোথা থেকে? এর উত্তর খুঁজতে অবশ্য পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা দফতরের ফুড সেফটি অফিসারদের কাজে লাগাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। জল সরবরাহ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পুর স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, যে কর্মীরা অভিযানে যাচ্ছেন, তাঁরাই একটি তালিকা করে আমাদের দেবেন। সেই তালিকায় থাকবে, কারা মাটির নীচের জল ব্যবহার করছে।’’ সেই তালিকা পেলে দেখা হবে কোনটা অবৈধ।
এ দিকে, বুধবার উল্টোডাঙায় ক্যানাল সার্কুলার রোডে জল প্রস্তুতকারক এক সংস্থায় অভিযান চালায় পুলিশ ও পুরসভার সেফটি অফিসারের দল। সেখানে একটি সংস্থার কাছ থেকেই গোটা সাতেক নামের লেবেল লাগানো জলের বোতল মিলেছে। যা দেখে বিস্মিত পুর অফিসারেরা। পুরসভার ফুড সেফটি অফিসার অতনু রায় বলেন, ‘‘ওই সংস্থার নিজের নামে থাকা বোতলের জলের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও, অন্য নামের জল প্রস্তুতকারক সংস্থা হিসেবে তাদের নাম রাখা বেআইনি। সেটা ওদের জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।’’