ফাইল চিত্র।
সেই নভেম্বর মাস। ‘পরিবর্তন’ শুধু সময়ের। সেই সময়েরই হাত ধরে ন’বছর পরে পুর মূল্যায়ন-কর সংগ্রহ দফতরের (অ্যাসেসমেন্ট-কালেকশন) আধিকারিকদের ক্ষমতার বিন্যাসে বদল আনল কলকাতা পুরসভা। মিউটেশন-সহ সম্পত্তির বার্ষিক মূল্যায়ন, পুনর্মূল্যায়ন সংক্রান্ত সমস্ত ফাইল অনুমোদনের ক্ষেত্রে তাঁদের আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই সেই নির্দেশ সংশ্লিষ্ট দফতরে পৌঁছে গিয়েছে।
এলাকাভিত্তিক কর মূল্যায়ন (ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট বা ইউএএ) প্রক্রিয়ায় দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে বড় ফাইল অনুমোদনের ক্ষমতা মুষ্টিমেয় হাতেই কেন্দ্রীভূত হচ্ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই তাতে সময় বেশি লাগছিল। তাই কাজে গতি আনতে মিউটেশন সংক্রান্ত কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে এই পরিবর্তন বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ।
যদিও পুর প্রশাসনের একটি অংশ এর নেপথ্যে আসন্ন পুরভোটের ‘চাপ’ কমানোর কৌশলকে দেখতে পাচ্ছে। ওই অংশের মতে, এমনিতেই ইউএএ পদ্ধতিতে এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক সাড়া দেননি। তা ছাড়া, এই প্রক্রিয়া নিয়ে নাগরিকদের একাংশের ক্ষোভও জন্মেছে। তা প্রশমনেই এই সিদ্ধান্ত।
পুরসভা সূত্রের খবর, ক্ষমতার পুনর্বিন্যাসে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মূল্যায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আর্থিক ক্ষমতা ডেপুটি অ্যাসেসর কালেক্টরদের দেওয়া হয়েছে। একই ভাবে ২৫ লক্ষ টাকার বেশি থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত, ৭৫ লক্ষ টাকার বেশি থেকে ১.২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত এবং ১.২৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে সম্পত্তির বার্ষিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা যথাক্রমে অ্যাসেসর-কালেক্টর, চিফ ম্যানেজার (রাজস্ব) এবং স্পেশ্যাল পুর কমিশনারকে (রাজস্ব) দেওয়া হয়েছে।
পুর নথি জানাচ্ছে, অ্যাসেসমেন্ট-কালেকশন দফতরের আধিকারিকদের আর্থিক ক্ষমতা এর আগে বৃদ্ধি করা হয়েছিল ২০১২ সালের ৯ নভেম্বর। তৎকালীন পুর কমিশনারের জারি করা ৪০ নম্বর নির্দেশিকায় তার বিবরণ ছিল। সে বার ২০০৬-’০৭ সালে জারি করা পুরসভার মূল্যায়ন-কর সংগ্রহ দফতরের নির্দেশিকার বদল আনা হয়েছিল। পরিবর্তিত ক্ষমতা বণ্টনের প্রেক্ষিতে মিউটেশন এবং তার বণ্টন, ভাগ এবং একত্রীকরণ যাতে যথাযথ হয়, তার উপরে জোর দেওয়া হয়েছিল। তখন ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত, ১০ লক্ষের বেশি থেকে ৩০ লক্ষ টাকা, ৩০ লক্ষের বেশি থেকে ৫০ লক্ষ টাকা এবং ৫০ লক্ষ টাকার উপরে সম্পত্তির বার্ষিক মূল্যায়নের ক্ষমতা যথাক্রমে ডেপুটি অ্যাসেসর কালেক্টর, অ্যাসেসর কালেক্টর, চিফ ম্যানেজার (রাজস্ব) এবং যুগ্ম পুর কমিশনারকে (রাজস্ব) দেওয়া হয়েছিল। এত দিন এই ব্যবস্থাই চলে এসেছিল।
গত সপ্তাহের এই পরিবর্তনের কারণ হিসাবে পুর প্রশাসনের একাংশের ব্যাখ্যা, এলাকাভিত্তিক কর মূল্যায়ন পদ্ধতির ভরকেন্দ্রেই রয়েছে নির্দিষ্ট এলাকার সম্পত্তির বাজারমূল্য, সেখানকার পরিষেবা, পরিকাঠামো সংক্রান্ত একাধিক বিষয়। এখন পুরো শহর ২৯৩টি ব্লকে, এবং সেই ব্লকগুলিকে নির্ধারিত মাপকাঠির নিরিখে এ থেকে জি সাতটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তাই সামগ্রিক কর মূল্যায়নের কাজে গতি আনতে এই আর্থিক ক্ষমতার পুনর্বিন্যাস। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘এর মধ্যে অন্য অর্থ খোঁজা অবান্তর। এই সিদ্ধান্ত গত অগস্টের পুর প্রশাসকমণ্ডলীর বৈঠকেই নেওয়া হয়েছিল। এখন তা কার্যকর হয়েছে মাত্র।’’