পুরভোটে জিতে কাউন্সিলর হয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নতুন ইনিংস সুরু হতে চলেছে বিশ্বরূপের।
ক্রিকেট প্রশাসক বিশ্বরূপকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন অধুনাপ্রয়াত সোমেন মিত্র। সফল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের কয়েক মাস পরেই তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন বিশ্বরূপকে রাজনীতিতে যোগদানের প্রস্তাব দেন। সঙ্গে প্রস্তাব দেন ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হওয়ার। বিশ্বরূপ নেত্রীকে হতাশ করেননি। পুরভোটে জিতে কাউন্সিলর হয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নতুন ইনিংস শুরু হতে চলেছে তাঁর।
সোমেনের সঙ্গে পারিবারিক যোগাযোগ ছিল বিশ্বরূপের। কিন্তু পারিবারিক আপত্তির কারণে প্রথমে রাজনীতিতে যোগ দিতে রাজি না হলেও পরে প্রবীণ সোমেনের কথায় রাজি হয়ে ওয়ার্ডে সামাজিক গতিবিধি শুরু করে দেন বিশ্বরূপ। করোনা সংক্রমণ ও লকডাউন একযোগে শুরু হলে ওয়ার্ডে ‘অক্সিজেন পার্লার’ করা থেকে শুরু করে বিনামূল্যে খাবার দেওয়া, ২৪ ঘণ্টার অ্যাম্বুল্যান্স চালু করা— সবই করেছিলেন বিশ্বরূপ। কিন্তু ২০২০ সালের ৩০ জুলাই সোমেনের প্রয়াণের পর তাঁর কংগ্রেসে যোগদান থমকে যায়। কিছুটা থমকে যান বিশ্বরূপও।
রাজনীতিতে যোগদান আটকে গেলেও কোভিড-পরিষেবা দিতে দিতে করোনায় আক্রান্ত হন বিশ্বরূপ। সেই সময় তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেন চৌরঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই প্রস্তাব দেন বিশ্বরূপকে তৃণমূলে যোগদানের। ঘটনাচক্রে, বিজেপি-ও তাদের দলে যোগদানের প্রস্তাব দিয়েছিল বিশ্বরূপকে। কিন্তু গেরুয়া শিবিরকে পত্রপাঠ ‘না’ করে দিয়েছিলেন তিনি।
বিশ্বরূপের কথায়, ‘‘আমরা কংগ্রেস রাজনীতির ঘরানার লোক। আমাদের কলকাতার বাড়িতে গাঁধীজি এসেছিলেন। সেই পরিবারের সদস্য হয়ে বিজেপি-তে যোগ দিতে পারিনি।’’ নয়না ও তাঁর সাংসদ স্বামী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপেই গত ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগদান করেন বিশ্বরূপ। সূত্রের খবর, সুদীপ-নয়না পুরভোটের আগে বিশ্বরূপকে ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থীর করার কথা বললে রাজি হয়ে যান তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতাও। ২৬ নভেম্বর নাম ঘোষণার আগেই প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত পেয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বরূপ।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে একজন ক্রিকেট প্রশাসকের সেই জীবনের মেয়াদ সর্বোচ্চ ন’বছর। তাই ‘গুরু’ জগমোহন ডালমিয়ার মতোই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (সিএবি) ১১ বছর শাসন করা বিশ্বরূপ এখন ক্রিকেট প্রশাসন থেকে অনেক দূরে। কিন্তু নিজের ক্রীড়াপ্রেমী মনকে ব্যস্ত রাখতে যুক্ত হয়েছেন সেন্ট্রাল ক্যালকাটা স্পোর্টিং ক্লাব ফুটবল দলের সঙ্গে। বেঙ্গল টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশন-সহ নানা ক্রীড়াক্ষেত্রে নিজেকে জড়িত রেখেছেন তিনি। ঘটনাচক্রে বিশ্বরূপের পিতা ভূপেন্দ্রকুমার দে-ও ছিলেন কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর। তাই তাঁর রাজনীতিতে আগমনকে কোনও ভাবেই কাকতালীয় ঘটনা হিসেবে দেখছেন না বিশ্বরূপ।