ছ’জন বিধায়কের কাউকেই নিজের বিধানসভার অন্তর্গত ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়নি। সাংসদ মালা অবশ্য তাঁর ৮৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই ফের লড়েছেন। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
বিধানসভা ভোটের পরেই তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব ঘোষণা করেছিলেন, এ বার থেকে দলে চলবে ‘এক ব্যক্তি এক পদ নীতি’। পুরভোটের আগে তাই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ছিল, দুই সাংসদ মালা রায় ও শান্তনু সেন-সহ বিধায়ক বা মন্ত্রী হয়ে যাওয়া তৃণমূল নেতারা এ বারের পুরভোটে প্রার্থী হবেন না। কিন্তু ২৬ নভেম্বর রাতে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর দেখা যায়, শান্তনু ছাড়া তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় স্থান পেয়েছেন সাংসদ মালা-সহ তৃণমূলের ছ’জন বিধায়ক। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার বিদায়ী পুরপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিমও।
তবে চোখে পড়ার মতো বিষয় এই যে, ছ’জন বিধায়ক প্রার্থী হলেও তাঁদের কাউকেই নিজের বিধানসভার অন্তর্গত ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়নি। যেমন ফিরহাদ কলকাতা বন্দরের বিধায়ক হলেও তিনি প্রার্থী হয়েছেন ভবানীপুর বিধানসভার ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে। আবার যাদবপুরের বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার প্রার্থী হয়েছেন টালিগঞ্জ বিধানসভার ৯৭ নম্বর ওয়ার্ডে। দেবাশিস কুমার রাসবিহারীর বিধায়ক হলেও তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছিল তাঁর ওয়ার্ড ৮৫ নম্বরে। যা বালিগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্গত। বেলেঘাটার বিধায়ক পরেশ পালকে প্রার্থী করা হয়েছে মানিকতলা বিধানসভার অধীন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে। বিদায়ী পুরসভার বিদায়ী ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ তাঁর পুরনো ওয়ার্ড ১১ নম্বরেই টিকিট দিয়েছিলদল। অথচ তিনি বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়েছিলেন কাশীপুর-বেলগাছিয়া আসন থেকে। আবার শোভন-জায়া রত্না চট্টোপাধ্যায় বিধানসভা ভোটে জিতেছিলেন তাঁর স্বামীর ছেড়ে যাওয়া আসন বেহালা পূর্বে। পুরভোটে বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রের অন্তর্গত ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। ঘটনাচক্রে, ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডেও বিদায়ী কাউন্সিলরও শোভনই।
ফিরহাদ ছাড়াও অতীন-দেবাশিস-দেবব্রত বিদায়ী কাউন্সিলর। আর বিধায়ক পরেশ বামফ্রন্ট জমানায় কমল বসু মেয়র থাকাকালীন কাউন্সিলর ছিলেন। সেই সময় তাঁকে পুর অধিবেশনে নিত্যনতুন ভঙ্গিমায় বাম পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা যেত। তাঁর বিরোধিতার কারণে একবার মেয়র কমল কটাক্ষের সুরে বলেছিলেন, ‘‘কলকাতায় এক আছে নগরপাল। তারপরেই পরেশ পাল।’’ তৎকালীন মেয়রের এমন বক্তব্য নিয়ে পরেশকে এখনও তাঁর ঘনিষ্ঠরা মস্করা করেন।
আর শোভন-ঘরনি রত্না বিধায়ক হয়ে গেলেও পুরভোটে এই প্রথম বার লড়লেন তিনি। ২০১৮ সালের নভেম্বরে বেহালার পর্ণশ্রীর বাড়ি ছেড়ে গোলপার্কের বহুতলের বাসিন্দা হন শোভন। তারপর থেকেই ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের যাবতীয় পরিষেবা সংক্রান্ত দায়িত্ব সামলেছিলেন রত্না। তাই ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের কারণে পুরভোট আটকে গেলে রত্নাকেই ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর নিযুক্ত করেছিল পুরপ্রশাসক মণ্ডলী। আর এ বারের ভোটে সেই ওয়ার্ডেই বিধায়ক রত্নাকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। যা খানিকটা প্রত্যাশিতই ছিল।
তবে সাংসদ মালা তাঁর ৮৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই ফের ভোটে লড়েছেন। যা দক্ষিণ কলকাতা লোকসভার অন্তর্গত রাসবিহারী বিধানসভার অংশ। এই নিয়ে ষষ্ঠবার পুরভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন মালা। ২০১৫ সালে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের পর জোড়াফুলের প্রতীকে জয় পান। জয়ের পরেই তাঁকে কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে দক্ষিণ কলকাতার তৎকালীন সাংসদ সুব্রত বক্সী ভোটে দাঁড়াতে না চাইলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী করেছিলেন মালাকেই। যা মালার প্রতি তাঁর আস্থার সূচক বলেই মনমে করেন তৃণমূলের সমস্ত স্তরের নেতারা। তাই মনে করা হচ্ছে, এ বারের পুরভোটে জয়ের পর মালাকে কলকাতা পুরসভার বড় কোনও দায়িত্বে আনা হলেও হতে পারে।