ভোটে গন্ডগোল হতে পারে-- এই আশঙ্কা করছে কমিশন! ফাইল চিত্র।
পুরভোটের দিন কলকাতা শহর জুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। ওই দিন প্রয়োজন ছাড়া বাইরের কেউ যাতে শহরে ঢুকতে না পারে, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে পুলিশকে। নির্বাচনের কাজে যুক্ত সমস্ত আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বৃহস্পতিবার ফের এমনই নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তাদের কড়া বার্তা, ভোটের দিন শহরে কোনও রকম বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। কমিশনের এই বার্তা নতুন কিছু নয়। এর আগেও তারা এমন কড়া ভূমিকা নিয়েছে। তবে সমস্ত পরিকল্পনা তৈরি হওয়ার পরও, একেবারে শেষ মুহূর্তে এসেও কেন পুলিশকে একই কথা বার বার মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে কমিশনকে, সেই প্রশ্নই উঠছে। উত্তরে কমিশন সূত্রে জানা গেল, ভোটে গন্ডগোল হতে পারে — এই আশঙ্কা করছে কমিশন! এবং তা এখনও দূর হয়নি তাদের। আর হয়তো সেই কারণেই পুলিশ-আধিকারিকদের ফের সতর্কবার্তা দিচ্ছে তারা।
কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে লড়াই করছে বিজেপি। কিন্তু কমিশন প্রথম থেকেই রাজ্য পুলিশ দিয়ে ভোট করানোর পক্ষপাতী। কলকাতায় ভোট গ্রহণের দিন ২৩ হাজারের মতো রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করেছে তারা। এ ছাড়া অশান্তি ঠেকাতে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ রাখছে কমিশন। এরই প্রেক্ষিতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট করতে কলকাতার পুলিশ কমিশনার-সহ অন্য পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক করেছেন কমিশনের কর্তারা। বৃহস্পতিবার, ভোটের কয়েক দিন আগেও ওই একই বিষয়ে পুলিশকে সতর্ক করতে হল তাদের। এ প্রসঙ্গে এক পুলিশ কর্তা জানান, ভোটের একেবারে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতেও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে চিন্তায় রয়েছে কমিশন। তার কারণেই ফের বৈঠক। কমিশনের আধিকারিকরাও ওই যুক্তি অস্বীকার করেছেন না। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘স্থানীয় নির্বাচনে গোলমালের আশঙ্কা একটু বেশিই থাকে। কমিশন চেষ্টা করে সেই সব আটকানোর। তবে এ বার মনোনয়ন জমা থেকে এখনও পর্যন্ত বড় কোনও গন্ডগোল হয়নি। শান্তিপূর্ণ ভাবেই চলছে সব কিছু। ভোটের দিনও যাতে এই পরিবেশ বিঘ্নিত না হয় সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। আর ওই আশঙ্কা থেকেই এখনকার বাড়তি সতর্কতা।’’
ভোটের দিন বড় কোনও গোলমালের আশঙ্কা করছে কি কমিশন? উত্তরে ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘সব ভোটেই তো অশান্তির আশঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু নয়। তার জন্যই এত প্রস্তুতি!’’ রবিবার ভোটের দিন শুধু জেলা নয়, কলকাতার আশপাশের অঞ্চল থেকেও বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করতে পুলিশকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, নিয়ম মাফিক শনিবার সন্ধ্যা থেকেই শহর জুড়ে কড়া নজরদারি করবে পুলিশ। ওই সময় থেকে যানবাহন চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বন্ধ থাকবে বড় বড় দোকান, শপিংমল এবং অফিসগুলিও। কোনও ধরনের জমায়েত হলেই পুলিশকে তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি আবার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। কোনও ভাবেই তা যেন উপেক্ষা না করা হয়, সেই নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। এ ছাড়া কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে বুথে বুথে থাকছে সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারি।
গত পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রচুর অশান্তির খবর প্রকাশ্যে এসেছিল। সেই নির্বাচনগুলি পরিচালনার দায়িত্বে ছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এখন কমিশনের লক্ষ্য, পুরনো ধুলো ঝেড়ে ফেলে নতুন করে মানুষের আস্থা অর্জন করা। এবং তারা যে নিরপেক্ষ ও শান্তিতে ভোট করানোর পক্ষে, সেই উদাহরণও তুলে ধরবে কমিশন। যদিও তার বিপরীত মতও পোষণ করছেন অনেকে। কেউ কেউ মনে করছেন, কলকাতা দিয়ে ভোট শুরু হচ্ছে, এর পর একে একে ১১২টি পুরসভার ভোট কমিশন নেবে। ফলে এই ভোটেই নিরাপত্তা নিয়ে তারা যদি ব্যর্থ হয়, তবে বাকি পুরসভার ভোটের ক্ষেত্রে বিরোধীরা আস্থা হারিয়ে ফেলবে কমিশনের উপর থেকে। তাই গন্ডগোল না হলেও, কমিশনের এই সব ইতিবাচক পদক্ষেপ আগামিদিনে ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই সব দিক বিবেচনা করে শান্তিতে কলকাতার ভোট করানোই আপাতত চ্যালেঞ্জ কমিশনের।