অঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ।
ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের সাহায্যে বিধায়ক অরূপ পৌঁছে গিয়েছেন টালিগঞ্জের পাড়ায় পাড়ায়।
২০০৬ সালের টালিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়াতে চাননি তৎকালীন বিরোধী দলনেতা এবং অধুনাপ্রয়াত পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’ স্লোগান নিয়ে দুর্বার বামফ্রন্ট সরকার সে বার সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার গঠনের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়েছিল। সেই ভোটে তুলনামূলক ‘অনভিজ্ঞ’ ৮১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অরূপ বিশ্বাসকে টালিগঞ্জ কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভোটের মাত্র ২১ দিন আগে মনোনয়ন পান অরূপ। সিপিএমের অধ্যাপক প্রার্থী পার্থপ্রতিম বিশ্বাসের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ৫২৬ ভোটে জিতেছিলেন তিনি। সেই থেকে শুরু। এরপর ২০১১, ২০১৬ এবং ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে টালিগঞ্জ কেন্দ্র দখলে রেখেছেন অরূপ। ২০১১ সালের মে মাসে মমতার প্রথম মন্ত্রিসভায় স্থান না হলেও ২০১২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে মন্ত্রী তিনি। আসন পুর্নবিন্যাসের কারণে ২০০৬-এর টালিগঞ্জের সঙ্গে বর্তমান টালিগঞ্জ বিধানসভার অল্পবিস্তর বদল এসেছে। কিন্তু তাতে অরূপকে ঠেকানো যায়নি।
এখন টালিগঞ্জ বিধানসভা কলকাতা পুরসভার ন’টি ওয়ার্ড নিয়ে। কলকাতা পুরসভার ৯৪, ৯৫, ৯৭, ৯৮, ১০০, ১১১, ১১২, ১১৩ এবং ১১৪ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে টালিগঞ্জ। এই বিধানসভা কেন্দ্রের ৯৮ এবং ১১১ নম্বর ওয়ার্ড দুটি এখনও সিপিএমের দখলে। এ বারের পুরভোটে এই দুটি ওয়ার্ড জিততে ১১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তীকে প্রার্থী করে আনা হয়েছে। ১১১ নম্বর ওয়ার্ডে শাসকদলের প্রার্থী হয়েছেন সন্দীপ দাস। দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের এক ‘প্রভাবশালী’ নেতার কথায়, ‘‘টালিগঞ্জ বিধানসভার ৯৮ এবং ১১১ নম্বর ওয়ার্ড দু’টি কঠিন জায়গায় রয়েছে। সেখানকার বাম কাউন্সিলররা এলাকায় জনপ্রিয়। তাই ওই দু’টি ওয়ার্ডের জন্যই আমাদের বেশি ঘাম ঝরাতে হবে।’’
অরূপ আপাতত বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রীও বটে। ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের দায়িত্ব তাঁর হাতে রয়েছে প্রায় সাত বছর। ওই দুই দফতর মারফৎ নিজের বিধানসভা এলাকার পাড়ায় পাড়ায় পৌঁছে যেতে পেরেছেন বিধায়ক অরূপ। টালিগঞ্জ এলাকার ক্রীড়া-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্তও হতে পেরেছেন তিনি।
যার সুফল অরূপ পেয়েছেন বিধানসভা ভোটে। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছিল তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গায়ক বাবুল সুপ্রিয়কে। জনপ্রিয় এবং খ্যাতনামী বাবুলকে হারিয়ে টালিগঞ্জ ধরে রেখেছেন অরূপ। সিপিএমের দখলে থাকা ওয়ার্ডগুলিতেও অল্প ভোটে এগিয়ে গিয়েছেন বিধায়ক অরূপ। ফলে এ বার তাঁর লক্ষ্য হওয়ার উচিত ন’য়ে-ন’য়। অর্থাৎ, তাঁর বিধানসভা এলাকার ন’টি ওয়ার্ডের সবগুলিই দখল করা।
তবে বিধানসভা ভোটে সামান্য পিছিয়ে পড়লেও নিজেদের দু’টি ওয়ার্ড ধরে রাখার বিষয়ে আশাবাদী সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমরা যা খবর পাচ্ছি, তাতে টালিগঞ্জ ও যাদবপুরে যে সব ওয়ার্ড আমাদের ছিল, সেখানে আমরা জয় পাব।’’ পক্ষান্তরে, বিজেপি নেতা ইন্দ্রনীল খান বলছেন, ‘‘রাজ্য রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে— বিজেপিই তৃণমূলের একমাত্র প্রতিপক্ষ। তাই টালিগঞ্জ কেন? সর্বত্রই আমরা তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলব!’’