নিজস্ব চিত্র
কলকাতা পুরভোটে ৩৯ জন কাউন্সিলারকে টিকিট দিল না শাসক তৃণমূল। কিন্তু বাদ দেওয়া হল না কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ফিরহাদ হাকিম-সহ ছয় বিধায়ককে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার, দেবব্রত মুজমদার এবং প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। জল্পনা ছিল, ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি মেনে এঁদের পুরভোটের টিকিট দেওয়া হবে না।
তবে পুরো বিষয়টিই ছিল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন সাপেক্ষ। দেখা গেল, মমতার অনুমোদন পায়নি সেই সিদ্ধান্ত। মমতা আবার বেছে নিয়েছেন তাঁর পুরোন দিনের লড়াইয়ের সঙ্গীদেরই। বস্তুত, প্রার্থিতালিকায় শেষমুহূর্তের রদবদলের কারণেই ছাপানো প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করতে খানিক বিলম্ব হয়ে যায় তৃণমূলের। পূর্ণাঙ্গ প্রার্থিতালিকা হাতে পেতে সংবাদমাধ্যমকে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।
ফিরহাদ যেমন পুরভোটের টিকিট পেয়েছেন, তেমনই প্রার্থিতালিকায় নাম নেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র। জল্পনা ছিল, বাবুলকে ‘সম্ভাব্য মেয়র’ হিসেবে তুলে ধরে পুরভোটের ময়দানে নামবে তৃণমূল। যদিও বদলের একাংশ বলছিলেন, বাবুল সদ্যই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এসেছেন। এত দ্রুত তাঁকে কলকাতা পুরসভার মেয়রের মতো পদে তুলে ধরলে দলের একাংশে অনুযোগ তৈরি হতে পারে।
বস্তুত, বাবুলের নাম প্রার্থিতালিকায় না থাকায় পরবর্তী মেয়র হিসেবে ফিরহাদের নাম নিয়ে আবার জল্পনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন ‘‘ভোটের পর কাউন্সিলাররা বসে সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। এখন থেকেই কিছু ঠিক করা হচ্ছে না।’’ ঘটনাচক্রে, এর আগে ‘সম্ভাব্য মেয়র’ তুলে ধরেই পুরভোটে গিয়েছে তৃণমূল। মনে করা হচ্ছে, দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণেই এ বার সেই রাস্তা থেকে সরে আসা হল।
ফিরহাদ নিজে পুরভোটেই দাঁড়াতে বেশি আগ্রহী ছিলেন। সূত্রের খবর, দলকে তিনি বলেছিলেন, প্রয়োজনে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন। কিন্তু তাঁকে যেন পুরভোটের টিকিট দেওয়া হয়। দেখা গেল, শেষপর্যন্ত তাঁকে পুরভোটের টিকিট দেওয়া হল। মনে করা হচ্ছে, স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষমুহূর্তের ‘হস্তক্ষেপে’ ফিরহাদ-সহ অন্য ‘পুরোন অনুগত’-রা পুরভোটের টিকিট পেলেন। যা থেকে এটা মনে করা হচ্ছে যে, দলের উপর নেত্রী মমতার প্রভাব এখনও ‘নিরঙ্কুশ’।
শুক্রবার পুরসভার প্রার্থী নিয়ে বৈঠকের আগে পর্যন্ত ঠিক ছিল, ফিরহাদ-অতীন-দেবাশিসের কন্যাদের তাঁদের বদলে টিকিট দেওয়া হবে। সামনে আনা হবে দ্বিতীয় প্রজন্মকে। বাবুলকেও পুরভোটে দাঁড় করানো হবে। সূত্রের খবর, অভিষেক তেমনই চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা হল না। যদিও বাবুলের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে বরাবরই তাঁর পুরভোটে লড়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা পুরভোটের সময়সূচি ঘোষণা করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় তৃণমূল তাদের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করে। শুক্রবার বিকেলে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোর (পিকে) বৈঠক করেন কালীঘাটে, মমতার বাড়িতে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা প্রার্থিতালিকা তৈরিতে আইপ্যাক-এর সুপারিশ যেমন বিবেচনা করা হয়েছে, তেমনই প্রার্থীর জনসংযোগ কেমন সে বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে।