মৃত্যু-ফাঁদ: ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের বিদ্যুৎ সংযোগের খোলা বাক্স। বুধবার, হাওড়ার শিবপুরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
বছর ২৮-এর তরুণীর বিয়ের কথা পাকা করতে বিহারের সমস্তিপুরে গিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। তারই মধ্যে মঙ্গলবার রাতের ঝড়বৃষ্টির সময়ে পুরসভার সামনে রাস্তার ত্রিফলা আলোয় হাত লেগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল মনীষা সাউ নামে ওই তরুণীর। এই ঘটনায় পুরসভার ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
তবে ত্রিফলার রক্ষণাবেক্ষণকারী ঠিকাদার সংস্থাকে বুধবার শো-কজ় করেছে হাওড়া পুরসভা। পাশাপাশি শহরের যে অঞ্চলে জল জমে, সেই জায়গায় বৃষ্টি পড়লে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রস্তাবও দিয়েছে সিইএসসি-র কাছে। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকাগুলির একটি তালিকা তৈরি করছে পুরসভা। অন্য দিকে, পুরসভার যে সব ঠিকাদার সংস্থা ত্রিফলা দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে, তাদের নিয়ে চলতি সপ্তাহেই বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুর প্রশাসকমণ্ডলী। এ দিকে, বুধবারও হাওড়ার একাধিক ত্রিফলায় বিদ্যুৎবাহী তার খোলা অবস্থায় দেখা গিয়েছে। যদিও রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থাগুলিকে খোলা সুইচবোর্ড ও খোলা বিদ্যুতের তার দ্রুত ঢাকতে বলেছে পুরসভা।
মঙ্গলবার রাতের ঝড়বৃষ্টিতে হাওড়ার রেল কোয়ার্টার্স কলভিন কোর্টের বাসিন্দা মনীষা পুরসভার সামনের একটি ত্রিফলা ছুঁয়ে ফেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। ত্রিফলা ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটি চায়ের দোকানের মালিক বলরাম তালুকদার তাঁকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেন। রাস্তার জমা জলে গিয়ে পড়েন মনীষা। বলরাম বলেন, ‘‘হঠাৎ দেখি, মেয়েটি ত্রিফলায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কী হয়েছে, সেটা বুঝেই ওকে জোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিই। আমিও বিদ্যুতের ঝটকা খেয়ে আছাড় খাই। তবে আমার কিছু হয়নি। কিন্তু ওই তরুণীকে কেউ তুলতে পারিনি, কারণ রাস্তার জলেও তখন কারেন্ট মারছিল।’’ আধ ঘণ্টা পরে পুলিশ ও সিইএসসি-র লোকজন এসে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে ওই তরুণীকে উদ্ধার করেন। তাঁকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পরিবার সূত্রের খবর, মনীষা পূর্ব রেলের ডিআরএম কোয়ার্টার্সে পরিচারিকার চাকরি করতেন। ঘটনার সময়ে সেখান থেকেই বাড়ি ফিরছিলেন। পরিবারের লোকজন বিহারে যাওয়ায় বাড়িতে দিদি ছাড়া কেউ ছিলেন না। তার মধ্যেই ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা। পুলিশ জানায়, পরিবারের লোকজনকে খবর দেওয়া হলে তাঁরা হাওড়ার উদ্দেশে রওনা দেন।
এ দিন মনীষার বাড়িতে গিয়ে তাঁর দিদি সন্তোষী সাউয়ের সঙ্গে দেখা করেন হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী ও পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্যেরা। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর শৈলেশ রাই-সহ পুরসভার পদস্থ কর্তারাও। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘আমরা ওই পরিবারকে সমস্ত রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তাঁদের কী ভাবে সাহায্য করা যায়, তা আমরা আলোচনা করে ঠিক করব।’’ তিনি আরও জানান, যে ঠিকাদার ওই ত্রিফলা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁকে শো-কজ় করা হয়েছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে একটি বৈঠকও ডাকা হয়েছে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।