ঐতিহ্যবাহী হগ মার্কেট। —নিজস্ব চিত্র।
দিন দিন দুর্বল হচ্ছে কলকাতার হগ মার্কেটের হেরিটেজ ভবন। শতাব্দী প্রাচীন এই ভবনের মূল কাঠামোয় দেখা গিয়েছে একাধিক ক্ষত। যথা সম্ভব তাড়াতাড়ি যত্ন না নিলে অচিরে আরও রুগ্ন হয়ে পড়বে এই ভবন। এমনটাই মনে করছে কলকাতা পুরসভা। তাই এই ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উদ্যোগী হল তারা। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ওই বিষয়ে অনুমতিও আদায় করে নিয়েছে পুরসভা।
১৮৭৪ সালে চালু হয় ধর্মতলার হগ মার্কেট। বর্তমানে যা বিস্তার লাভ করে নিউ মার্কেট নামে পরিচিত হয়েছে। আবার অনেকের কাছে এটি হগ সাহেবের মার্কেট নামেও পরিচিত। ১৯০৩ সালে তৎকালীন কলকাতা পুরসভার চেয়ারম্যান স্যার স্টুয়ার্ট হগের নামানুসারে এটির নাম হয় হগ মার্কেট। প্রায় দেড়শো বছরের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে ঐতিহাসিক এই স্থপতিটি। ভবনটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে কলকাতা পুরসভা। পুরসভার তরফ থেকে এর আগে একাধিক বার এই ভবনটি মেরামত করা হয়েছে। তারপরও বেশ কিছু দুর্বল অংশ দেখতে পাওয়া যায়। ফলে ফের মেরামতের জন্য উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। তবে এ বার শুধু আর ক্ষত স্থান পূরণ নয়, পুরসভা চাইছে পুরনো হেরিটেজ ভবনের সবটাই মেরামত করতে। তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে তারা। প্রথমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাধ্যমে একটি সমীক্ষা করা হবে। এরপর ওই সমীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে মেরামতের কাজ শুরু করবে পুরসভা। ইতিমধ্যে সোমবার থেকে ওই ভবন পর্যবেক্ষণের কাজ শুরুও হয়েছে।
এ নিয়ে পুরসভার প্রশাসনমন্ডলীর অন্যতম সদস্য আমিরুদ্দিন ববি বলেন, "হগ মার্কেটের পুরনো হেরিটেজ ভবনের মেরামতের কাজ শুরু করবে পুরসভা। ভবনের কোন জায়গা কতটা ক্ষতি হয়েছে তার জন্য একটি সমীক্ষা করা হবে। ১২০ দিন ধরে চলবে ওই কাজ। তবে ভবনের পরিকাঠামোর কোনও পরিবর্তন করা হবে না। ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে নকশা একই রাখা হবে।" ওই ভবনের সঙ্গে একটি ঘড়ি রয়েছে। বাইরে থেকে যা দেখতে পাওয়া যায়। সেই ঘড়ির ঘরটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। ফলে তারও মেরামত হবে। অন্য দিকে, শতবর্ষ প্রাচীন এই ভবনের কারুকার্য অক্ষত রেখে কাজ করা খুবই কঠিন বলে জানাচ্ছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বজিৎ সোম। তাঁকেই এটি মেরামতের দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে। বিশ্বজিৎ বলেন, "১৪৮ বছরের পুরনো ওই ভবনের কাঠামোগত জটিলতা বেশ রয়েছে। আমরা অনেক মন্দির, মসজিদ, চার্চের কাজ করেছি। কিন্তু এটা দেখে মনে হয়েছে এর কারুকার্য যেন সবের সংমিশ্রণ। এর রূপটা একটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার। তাই এর ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে আমরা সম্পূর্ণ অক্ষত রেখে কাজ করব।"
পুরসভা সূত্রে খবর, বর্তমানে হগ মার্কেটে প্রায় ১২০০ দোকান রয়েছে। ভবনটির মেরামত করতে হলে তাঁদেরকে অন্যত্র সরানোও হতে পারে বলেও জানিয়েছেন ববি। তবে তা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের উপর নির্ভর করবে বলে তিনি জানান।