ফাইল চিত্র।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনও নীতি এত দিন ছিল না। এ বার দৃশ্যদূষণ রুখতে শহরের যত্রতত্র হোর্ডিং লাগানো বন্ধ করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। এর জন্য নয়া বিজ্ঞাপন-নীতি আনতে চলেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। নতুন সেই নীতির খসড়া পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হবে। দফতর চূড়ান্ত সিলমোহর দিলে ওই নীতি বলবৎ করা হবে।
সোমবার পুরভবনে নয়া বিজ্ঞাপন-নীতি নিয়ে একটি বৈঠক হয়। তাতে উপস্থিত ছিলেন ওই দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমার, পুর কমিশনার বিনোদ কুমার এবং একাধিক দফতরের আধিকারিকেরা। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘এত দিন পুরসভার নির্দিষ্ট কোনও বিজ্ঞাপন-নীতি ছিল না। এই নীতি কার্যকর হলে হোর্ডিং, ফেস্টুন বসানোর আগে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে। তাতে শহরের সৌন্দর্যহানি ঘটবে না।’’
নয়া নীতির খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, শহরের উদ্যান, জলাশয় ও হেরিটেজ ভবনগুলির আশপাশে কোনও বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না। ঘিঞ্জি এলাকায় পাশাপাশি একাধিক বিজ্ঞাপন দেওয়া চলবে না। বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং যদি পরিবেশবান্ধব হয়, তা হলে বিজ্ঞাপনদাতাদের কর ছাড় দেওয়ার কথাও ভাবছে পুরসভা। বিজ্ঞাপন দফতরের এক আধিকারিক বললেন, ‘‘ধরা যাক, কেউ হোর্ডিংয়ে এলইডি-র পরিবর্তে সৌর আলো ব্যবহার করল। তা হলে সেই সংস্থা কর ছাড় পেতে পারে।’’
বর্তমানে পুরসভার নিজস্ব হোর্ডিং রয়েছে প্রায় ৪০০টি। আর বেসরকারি হোর্ডিংয়ের সংখ্যা হাজার চারেক। নয়া বিজ্ঞাপন-নীতি অনুযায়ী, শহরে বিজ্ঞাপনের সংখ্যা কমাতে চায় পুরসভা। তবে কতটা, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ দিনের বৈঠকে বিল্ডিং, পরিবেশ এবং উদ্যান বিভাগের ডিজি-রাও উপস্থিত ছিলেন। কোন ধরনের বাড়িতে বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে, নয়া নীতিতে তা-ও থাকবে। বিপজ্জনক বা পুরনো বাড়ির ছাদে বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না। বিভিন্ন এলাকা হোর্ডিংমুক্ত করার পাশাপাশি বেশ কিছু এলাকায় কত সংখ্যক বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে, তা-ও বেঁধে দেবেন পুর কর্তৃপক্ষ। ধর্মতলা এবং ডালহৌসি চত্বরকে আগেই বিজ্ঞাপনমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে পুরসভা। ওই সমস্ত এলাকা ছাড়াও যেখানে বিজ্ঞাপনে বিধিনিষেধ রয়েছে, সেখানে কেউ বিজ্ঞাপন দিলে নয়া নীতি অনুযায়ী বিজ্ঞাপনদাতাকে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে।
প্লাস্টিক এবং ফ্লেক্সের হোর্ডিং বাতিল করে পরিবেশবান্ধব হোর্ডিংয়ের উপরে জোর দিচ্ছে পুরসভা। নির্দিষ্ট উচ্চতার ডিজিটাল হোর্ডিংয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। রেল স্টেশন, হাসপাতাল, গুরুত্বপূর্ণ অফিস এবং ঐতিহ্যবাহী সৌধগুলির সামনে হোর্ডিং বসানোয় রাশ টানতে চায় পুরসভা। পাশাপাশি, ডিজিটাল বোর্ডগুলিতে চড়া রং ও তীব্র আলোর ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করতে চান পুরকর্তারা। নয়া বিজ্ঞাপন-নীতি নিয়ে সপ্তাহখানেক পরে ফের বৈঠক হবে।