চলছে বেআইনি নির্মাণ। —ফাইল ছবি।
গত মার্চে গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের পরেই শহর জুড়ে বেআইনি নির্মাণের উপরে নিয়ন্ত্রণ আনতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে কলকাতা পুরসভা। এ বার বেআইনি বহুতলের রেজিস্ট্রি আটকানোর জন্য সক্রিয় হয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। বিল্ডিং, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট-সহ সব ধরনের বেআইনি নির্মাণের হস্তান্তর প্রক্রিয়ার উপরে তদারকির জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার কাজ হবে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার উপরে বিধিনিষেধ আরোপের ব্যাপারে কী করা যায়, সে ব্যাপারে সুপারিশ করা।
পুরসভা সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত এপ্রিলে এই সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়েছিল পুরসভায়। বৈঠকে বেআইনি সম্পত্তির নথিভুক্তিকরণ আটকানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানেই কলকাতা পুর এলাকা অধীনস্থ বিল্ডিং, বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান-সহ যে কোনও ধরনের বেআইনি নির্মাণের নথিভুক্তিকরণের আগে সেগুলির নকশা-সহ সার্বিক আইনি বৈধতা খতিয়ে দেখার বিষয়টি উঠে আসে। সম্পত্তির বৈধতা খতিয়ে দেখার বিষয়ে বিশেষ পদ্ধতি চালুর ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধও করা হয়। যদিও রাজ্য অর্থ দফতরের তরফে জানানো হয়, কোনও সম্পত্তির নির্মাণ বৈধ কি অবৈধ, শুধুমাত্র আবেদন খতিয়ে দেখে নথিভুক্তিকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের পক্ষে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া কার্যত অসম্ভব।
তবে শুধুমাত্র নির্মাণের নকশার বৈধতাই নয়। তা ছাড়াও অন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও রয়েছে। যেমন শহরে এমন অনেক পুরনো সম্পত্তি রয়েছে, যেগুলির সেই অর্থে বৈধ নকশা নেই। অথচ দীর্ঘ বছর ধরে পুরসভার সম্পত্তিকর গিয়েছে সেই সব সম্পত্তি থেকে। এমন ক্ষেত্রে কী করণীয়, আবার ফাঁকা জমির নথিভুক্তকরণের বিষয়ে এই সমস্যার সম্মুখীন হলে তখন কী করা হবে— এমন কয়েকটি বিষয় উঠে আসে। বৈধ নকশাহীন সম্পত্তির নথিভুক্তিকরণের বিষয়ে বর্তমানে আদালতে যে একাধিক মামলা চলছে, সেই বিষয়টিও আলোচনায় অগ্রাধিকার পায়।
এই সমস্ত দিক মাথায় রেখেই গত মাসে ওই উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কমিটিতে অতিরিক্ত পুর কমিশনার, বিল্ডিং, রাজস্ব, তথ্যপ্রযুক্তি, আইনি দফতরের পাশাপাশি রাজ্য অর্থ দফতর অধীনস্থ রেজিস্ট্রেশন এবং স্ট্যাম্প রাজস্ব অধিদফতরের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এক পুর কর্তার কথায়, ‘‘কমিটির সুপারিশ পুর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা পড়বে। সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’
প্রসঙ্গত, গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের পর পরই বেআইনি নির্মাণের বাড়বাড়ন্ত আটকাতে তৎপর হয়েছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। জল এবং নিকাশির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি, বেআইনি নির্মাণস্থলগুলিতে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ-সহ একাধিক নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। অথচ এত কিছুর পরেও শহরের বেআইনি নির্মাণ পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। এমনটাই জানাচ্ছে প্রশাসনের একাংশ। সেই সূত্রেই বেআইনি সম্পত্তির নথিভুক্তিকরণ আটকানোর ব্যাপারে আদৌ কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ করা যায় কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয় বলে মনে করছেন অনেকে।