গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় শেষ পর্যন্ত তিন ইঞ্জিনিয়ারকে সাসপেন্ড করল কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় শেষ পর্যন্ত তিন ইঞ্জিনিয়ারকে সাসপেন্ড করল কলকাতা পুরসভা। গত ২২ মার্চ ঘটনার তদন্ত করতে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল পুরসভা। মোট আটটি বিষয়ে তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শুক্রবার কমিটি ছ’টি বিষয়ের তদন্ত রিপোর্ট কলকাতা পুরসভার কমিশনার ধবল জৈনের কাছে জমা দেয়। আর সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ওই ইঞ্জিনিয়ারদের সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে কলকাতা পুরসভার এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, কমিটির তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। তদন্তের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতেই ওই ইঞ্জিনিয়ারদের পুরসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই তাঁদের আবার কাজে যোগদান করার অনুমতি দেওয়া হতে পারে। কারণ, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট হাতে পেলেই ওই ইঞ্জিনিয়াদের ভুলত্রুটি বোঝা সম্ভব হবে। প্রসঙ্গত, ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই ওই ইঞ্জিনিয়ারদের বিল্ডিং বিভাগ থেকে সরিয়ে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়। শুরু হয় বিভাগীয় তদন্ত। সেই তদন্ত প্রক্রিয়ার মধ্যেই সাসপেন্ড করা হল ইঞ্জিনিয়ারদের।
গত ১৭ মার্চ কলকাতা পুরসভার ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে একটি নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে আট জনের মৃত্যু হয়। ঘটনার জেরে ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় মেয়র ফিরহাদ হাকিমের উপস্থিতিতে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর, ১৫ নম্বর বরোর এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ও সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে শো-কজ় করা হয়। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওই ইঞ্জিনিয়ারদের শো-কজ়ের জবাব দিতে বলা হয়। জবাব দিলেও তা সন্তোষজনক মনে হয়নি কলকাতা পুরসভার। আপাতত ওই ইঞ্জিনিয়ারদের কয়েক মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে।
তবে যে রিপোর্ট জমা পড়েছে তাতে জানা গেছে, ‘রিইনফোর্সমেন্ট সিমেন্ট কংক্রিট’ ঠিক ছিল না। সঙ্গে ‘রাফট ফুটিং’ অর্থাৎ ভিতে বিন্দুমাত্র কংক্রিটের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বাড়িটির ভিতরে। এ ছাড়াও নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছিল বলে ওই রিপোর্টে উঠে এসেছে। কোনও রকম স্ট্রাকচারাল ডিজ়াইন ছাড়াই ওই বহুতলটি নির্মাণ করা হয়েছিল বলেই রিপোর্টে উঠে এসেছে। এখনও পর্যন্ত মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু করা যায়নি বলেই কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মাটি পরীক্ষার দায়িত্বে রয়েছে। এই কাজে বেশ কয়েক মাস সময় লাগতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও তদন্ত এখনও বাকি রয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর।