দেবাশিস কুমারের গ্রিভান্স সেল। নিজস্ব চিত্র
তিনি কলকাতার নজর আগেও আলাদা করে কেড়েছিলেন। তৃণমূলের দুর্গে তাঁর ওয়ার্ড। কিন্তু তৃণমূল ছেড়ে জোড়াপাতা চিহ্ন নিয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে জিতে দেখিয়ে দিয়েছিলেন ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডের দীর্ঘ দিনের কাউন্সিলর দেবাশিস কুমার। পুর নির্বাচনের কাছাকাছি এসে আবার নজর কাড়তে শুরু করলেন। দল, সরকার ও পুরসভার একাধিক গ্রিভান্স সেল থাকা সত্ত্বেও নিজের ওয়ার্ডের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় সমান্তরাল গ্রিভান্স সেল খুললেন কলকাতার এই মেয়র পারিষদ।
জুন মাসে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে গ্রিভান্স সেল খোলা হয়েছিল। টোল ফ্রি ফোন নম্বর, এসএমএস পাঠানোর নম্বর এবং ইমেল আইডি প্রচার করে সরকার জানিয়েছিল, রাজ্যের যে কোনও প্রান্তের যে কোনও সমস্যা সরাসরি নবান্নকে জানানো যাবে। জুলাই মাসের প্রথম দিনেই টোল ফ্রি নম্বর প্রকাশ করেছিল কলকাতা পুরসভা। সপ্তাহে একদিন মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে ওই নম্বরে ফোন করে নিজেদের সমস্যা জানাতে পারবেন শহরবাসী, জানানো হয়েছিল পুরসভার তরফে। তার পরে আবার তৃণমূলের তরফে শুরু হয়েছে ‘দিদিকে বলো’। রাজ্যের যে কোনও প্রান্ত থেকে যে কোনও সমস্যার কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে ওই নম্বরে ফোন করে।
এত কিছুর পরেও সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি দেবাশিস কুমার। ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের ওয়ার্ডে তিনি শুরু করলেন ‘মানুষের বক্তব্য, দেবাদার কর্তব্য’ নামে আর এক নতুন কর্মসূচি। নিজের ওয়ার্ডে বা অনুগামীদের মধ্যে ‘দেবাদা’ নামেই বেশি পরিচিত দেবাশিস কুমার। তাই কর্মসূচির ওই নাম।
দেবাশিস কুমার। নিজস্ব চিত্র
আরও পড়ুন: অপারেশন নীলম ভ্যালি: উপরাষ্ট্রদূতকে তলব পাকিস্তানের, নজর রাখছেন রাজনাথ
কী হবে এই কর্মসূচিতে? ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডে যে ৩০টি বুথ, তার সবক’টিতেই একটি করে ঢাউস অভিযোগ বাক্স বসাচ্ছেন দেবাশিস। ওয়ার্ডের সব পরিবারের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন খামে ভরা ফর্ম। সেই ফর্ম পূরণ করে অভিযোগ বা সমস্যার কথা কথা লিখে বাক্সে ফেলতে বলা হচ্ছে। সবার সব সমস্যার সমাধানে যথাসাধ্য চেষ্টা করার আশ্বাস দিচ্ছেন কাউন্সিলর।
এ দিন নিজের ওয়ার্ডেরই একটি প্রেক্ষাগৃহে এলাকার বাসিন্দাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মেয়র পারিষদ দেবাশিস। ডেকে নিয়েছিলেন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদেরও। সেখানেই এই নতুন কর্মসূচির সূচনার কথা ঘোষণা করা হয়। প্রেক্ষাগৃহে হাজির সকলের হাতেই সমস্যা বা অভিযোগের কথা জানানোর ফর্মও তুলে দেওয়া হয়।
তবে এ দিন যাঁরা ওই অনুষ্ঠানে হাজির হননি, তাঁদের কাছেও পৌঁছনোর বন্দোবস্ত এই তৃণমূল কাউন্সিলর করছেন বলে জানানো হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম দিয়ে আসা হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে তৃণমূলের কর্মীদের দিয়ে নয়, এই কর্মসূচির রূপায়ণ পুরোটাই ঘটানো হচ্ছে একটি পেশাদার জনসংযোগ সংস্থাকে দিয়ে। এই কর্মসূচিকে যাতে কেউ তৃণমূলের কর্মসূচি ভেবে এড়িয়ে না যান, কেউ যাতে অভিযোগ জানাতে সঙ্কোচ না করেন, তার জন্যই এই ব্যবস্থা বলে দেবাশিসের ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ভারতীয় সেনার বড় প্রত্যাঘাত, অধিকৃত কাশ্মীরে বেশ কয়েকটি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস, হতাহত অনেক
কিন্তু এই কর্মসূচি নেওয়ার দরকার পড়ল কেন? দলের ব্যানার ছেড়ে দিয়েও যিনি ৮৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতে আসতে পেরেছিলেন, দল ক্ষমতায় থাকাকালীন তাঁকে নিজের ওয়ার্ড নিয়ে কেন এত ভাবতে হচ্ছে?
ভাবতে হচ্ছে গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে। কলকাতার যে ৫০টি ওয়ার্ডে তৃণমূলকে পিছিয়ে পড়তে হয়েছে এই নির্বাচনে, তার মধ্যে দেবাশিসের ৮৫ নম্বর ওয়ার্ড অন্যতম। তাই আবার আলাদা করে শুধু নিজের মুখটাকে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সামনে তুলে ধরতে চাইছেন দেবাশিস কুমার। বলছে স্থানীয় রাজনৈতিক শিবির।
আরও পড়ুন: কে করল গুলি, কোথা থেকে? প্রিন্স-বিশালের বয়ানে বাড়ছে রহস্য, উঠে আসছে আরও প্রশ্ন
দেবাশিস নিজে সে সব বিষয়ে কিছু বলছেন না। মন্তব্য এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাই করছেন। কিন্তু ‘দিদিকে বলো’-সহ একাধিক গ্রিভান্স সেল চলা সত্ত্বেও নিজের ওয়ার্ডের জন্য আলাদা অভিযোগ সংগ্রহ কর্মসূচি কেন নিতে হল তাঁকে, সে প্রশ্নের মুখে এ দিন স্বাভাবিক কারণেই পড়তে হয়েছে তাঁকে। উত্তরে দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘দিদিকে বলো কর্মসূচি আরও অনেক বড়। আমি যেটা করছি, সেটা একেবারেই অন্য দিক থেকে করছি। এটা শুধু পুর পরিষেবার বিষয়ে মানুষের অভিযোগ এবং চাহিদার কথা জানার জন্য করেছি।’’ কিন্তু পুর পরিষেবা সংক্রান্ত অভিযোগ কি মেয়রকে বা ‘দিদিকে বলো’র নম্বরে ফোন করে জানানো যাচ্ছে না? দেবাশিস সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। শুধু বলেছেন, ‘‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো কাজ তো করেছি। কিন্তু মানুষ সে সব নিয়ে কী ভাবছেন, কী কী হয়নি বলে মনে করছেন, সেগুলো বুঝতে পারব। সেগুলোই করার চেষ্টা করব।’’