একটি ব্যাগ। একটি চুলের ক্লিপ চোখে না-ই পড়তে পারে। তাই বলে একটা জলজ্যান্ত মানুষও নজর এড়িয়ে যায়?
রবিবার দুপুরে প্রশ্নটা যিনি করলেন, দক্ষিণ কলকাতার এক সরকারি কলেজের শিক্ষিকা সেই পিয়াঙ্কা সেনগুপ্তেরও মেট্রো বিভীষিকার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বছরখানেক আগেই মেট্রোর দরজায় তাঁর ব্যাগ আটকে গিয়েছিল, ওই অবস্থাতেই রেক ছুটতে শুরু করে। দমদম থেকে পার্ক স্ট্রিট স্টেশন পর্যন্ত ওই ভাবে আটকে থাকার পরে মুক্তি পান তিনি। পিয়াঙ্কা বললেন, ‘‘নিজেকে ভাগ্যবান ভাবা ছাড়া উপায় নেই। আমি কোনও মতে রেকের ভিতরে ঢুকতে পেরেছিলাম। শনিবার পার্ক স্ট্রিটে যা ঘটেছে, তা আমার সঙ্গেও ঘটতে পারত!’’
মেট্রোর দরজায় হাত আটকে সজল কাঞ্জিলালের মৃত্যুতে মেট্রোর সুরক্ষা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। এই প্রেক্ষিতেই এ দিন যোগাযোগ করা হয়েছিল পিয়াঙ্কার সঙ্গে। তিনি জানান, গত বছরের ১৭ জুন ঘটেছিল ঘটনাটি। সদ্য শিক্ষিকা হিসেবে কলেজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ওই দিন এমনিতেই দেরি হয়ে গিয়েছিল, তার মধ্যে দমদম মেট্রো স্টেশনে মাত্র দু’টি টিকিট কাউন্টার খোলা ছিল। কোনও মতে টিকিট কেটে দৌঁড়ে ভিড় মেট্রোয় ওঠার চেষ্টা করতেই দরজায় তাঁর হাত আটকে যায়। হাত ছাড়ানো গেলেও তাঁর ব্যাগ আটকে যায় দরজায়। ওই অবস্থাতেই মেট্রো ছুটতে শুরু করে। পিয়াঙ্কার কথায়, ‘‘দরজা খোলা দেখেও মেট্রো থামেনি। কয়েক জন সহযাত্রী হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করতে শুরু করেন। ফোনে তাঁদের থেকে কোন সময়ে রেকটি ছেড়েছে, রেকের নম্বর কত ইত্যাদি জানতে চাওয়া হয়! কামরা থেকে রেকের নম্বর বলা সম্ভব? আপৎকালীন বোতাম চাপলেও মেট্রোকর্মীরা এসে বলেন, পার্ক স্ট্রিট না এলে দরজা খোলা যাবে না। উল্টো দিকের ওই দরজা খুললে অনেকে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’ পার্ক স্ট্রিট পৌঁছেই এর পর মুক্তি পান পিয়াঙ্কা।
জানালেন, ওই ঘটনার পর তাঁর জীবন অনেকটা বদলে গিয়েছে। ঘটনার কয়েক মাস পরেই মারা যান তাঁর বাবা। মাকে নিয়ে বাড়ি বদলেরও প্রক্রিয়া চলছে তাঁদের। এর মধ্যেও ওই ঘটনা মনে পড়লে শিউরে ওঠেন পিয়াঙ্কা। যেমনটা হয়েছে শনিবার সন্ধ্যায়। বললেন, ‘‘মা আর মামা, টিভিতে খবরটা দেখেছে। আমার মনে পড়বে ভেবে জানায়নি। পরে এক বন্ধু ফোন করে বলে, তোর মতোই আবার হয়েছে মেট্রোয়। কিন্তু, এ তো আমার থেকেও খারাপ ঘটনা।’’
তবে অনেকেই এই দুর্ঘটনার পিছনে যাত্রীদের তাড়াহুড়োকে দায়ী করছেন। থামিয়ে দিয়ে পিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘কেউ ইচ্ছে করে তাড়াহুড়ো করেন না। মেট্রো সময়ে চললে তো আর সমস্যাই থাকে না। অজুহাত না দিয়ে পরিষেবা নিয়ে ভাবা উচিত মেট্রো কর্তৃপক্ষের।’’ সেই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমার ঘটনার পরে মেট্রো কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন, একটা ব্যাগ আটকে ছিল। ছোট ব্যাগ, তাই কারও চোখে পড়েনি। এ বার তো একটা আস্ত মানুষ। তা-ও চোখে পড়ল না কেন?’’
মেট্রো কর্তৃপক্ষ এ দিন জানিয়েছেন, সার্বিক তদন্তের আগে এখনই তাঁদের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়।