কলকাতা মেট্রোর এই ভিড় কি এড়ানো সম্ভব? —ফাইল চিত্র
বিমানবন্দরের ধাঁচে অ্যাপ-নির্ভর অনলাইন বোর্ডিং পাসই কি মেট্রোয় যাত্রী-সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় হতে চলেছে?
করোনা পরিস্থিতিতে মেট্রো সচল হলে দূরত্ব-বিধি মেনে চলতে এমন প্রস্তাবই উঠে এসেছে রাজ্য প্রশাসন ও মেট্রো কর্তৃপক্ষের বৈঠকে। প্রস্তাবিত ওই ব্যবস্থা কী ভাবে কার্যকর করা যায়, তা নিয়ে দু’তরফেই চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে বলে খবর।
বর্তমান ব্যবস্থায় মেট্রো চালু হলে যাত্রীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব কি না, তা নিয়ে এ দিনের বৈঠকে সংশয় প্রকাশ করেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। আট কামরার একটি ট্রেনের এক-এক দিকে ৩২টি করে দরজা থাকে। ফলে কোন কামরায় ক’জন উঠছেন বা নেমে যাচ্ছেন, তা নজরে রাখতে গেলে যে বিপুল সংখ্যক রক্ষী প্রয়োজন, তা মেট্রোর নেই বলে বৈঠকে জানান তাঁরা। শুধু তা-ই নয়, প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের প্রবেশের সময়ে সব ক’টি স্টেশনে প্রত্যেকের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতেও বিরাট সংখ্যক রক্ষী দরকার।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানান, করোনার জেরে ভিড় কমাতে রেল মন্ত্রকের নির্দেশ মেনে তাঁদের অনেক কম কর্মী নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আধিকারিকেরা বাদে প্রত্যেকেই ‘রোটেশন’ পদ্ধতিতে কাজ করছেন। ফলে অর্ধেক কর্মী নিয়ে কোনও মতেই আগের মতো সংখ্যায় ট্রেন চালানো সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: চিনার পার্ক যেন ‘ভেনিস’
প্রাক্ করোনা পরিস্থিতিতে দিনে ২৮৮টি ট্রেন চালাতেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সেখানে দৈনিক ট্রেনের সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসতে পারে বলে জানান তাঁরা। ট্রেন কমলে প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের ভিড় বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে দূরত্ব-বিধি রক্ষা করে চলা অসম্ভব হবে। পাশাপাশি, সরকারি বাসের মতো কোনও একটি স্টেশনে ট্রেনের সব আসন ভর্তি হয়ে গেলে অন্য স্টেশনে ট্রেন থামবে না, এমন ব্যবস্থাও করা সম্ভব নয় বলে জানান মেট্রোকর্তারা।
বৈঠকে ভারতের কোনও শহরে মেট্রো সচল না হওয়ার প্রসঙ্গও ওঠে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে ১২ অগস্ট পর্যন্ত ট্রেন বন্ধ থাকার কথাও জানানো হয়।
আরও পড়ুন: কেন বন্ধ অন্য রোগের চিকিৎসা, বিক্ষোভ জুনিয়র ডাক্তারদের
তখনই মহারাষ্ট্রের ধাঁচে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত যাত্রীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। মেট্রো কর্তৃপক্ষও তেমন আগ্রহের কথা জানান। এই অবস্থায় ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখার সমাধান খুঁজতে অ্যাপ-নির্ভর বোর্ডিং পাসের প্রসঙ্গ ওঠে। যাত্রীদের কে, কখন, কোথা থেকে ট্রেনে উঠবেন, তা নির্দিষ্ট করার ক্ষেত্রে অ্যাপ কার্যকর হতে পারে বলে জানান প্রশাসনের কর্তারা। বিদেশে বেশ কিছু মেট্রো স্টেশনে এমন ব্যবস্থা রয়েছে। কী ভাবে ওই ব্যবস্থা এখানে কার্যকর করা যায়, তা নিয়ে দু’পক্ষের আলোচনা চলছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও ওই অ্যাপের কথা জানান। মেট্রোকর্তারা অবশ্য কেউই এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বাভাবিক সংখ্যায় ট্রেন চালানোর অবস্থায় নেই আমরা। পাশাপাশি, দূরত্ব-বিধি কী ভাবে মেনে চলা যাবে, তা-ও পরিষেবা সচল করার ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় প্রশ্ন। রেল বোর্ড আমাদের যে ভাবে নির্দেশ দেবে, তা মেনেই পদক্ষেপ করা হবে।’’