চলছে বাড়ি ভাঙার কাজ।—ফাইল চিত্র।
বৌবাজারে সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের জেরে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ অন্তত এক বছর পিছিয়ে গেল বলে মনে করছেন মেট্রোর কর্তারা। ওই দুর্ঘটনার পরে মাটিতে ধস নামা আপাতত বন্ধ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখনই সুড়ঙ্গ খননের কাজে হাত দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই মেট্রো কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হওয়ায় কাজ শুরুর ক্ষেত্রে আইনি নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে।
এই মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় থাকা বিপজ্জনক বাড়িগুলি ভেঙে ফেলার কাজকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ওই কাজ শেষ হলে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে শিয়ালদহমুখী সুড়ঙ্গের কাজ শুরু করা হতে পারে। নির্মলচন্দ্র স্ট্রিটের কাছে থমকে আছে সেই সুড়ঙ্গের কাজ। জানা গিয়েছে, মাটির নীচে থাকা টানেল বোরিং মেশিন ‘ঊর্বী’কে সক্রিয় করে শিয়ালদহ পর্যন্ত এক দিকের সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ সম্পূর্ণ করবেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। আর এক দিকে, বৌবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ভাঙার কাজ সম্পূর্ণ হলে অন্য সুড়ঙ্গে আটকে থাকা টিবিএম ‘চণ্ডী’কে মাটির উপরে তুলে আনার কথা ভাবা হবে। যদিও জলের মধ্যে মুখবন্ধ সুড়ঙ্গে ওই যন্ত্র আটকে থাকায় সেটি আর কার্যত ব্যবহার করা যাবে না বলেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সূত্রের খবর।
আপাতত বিশেষজ্ঞদের লক্ষ্য, পুরো এলাকার মাটিতে স্থিতি ফিরে এলে ধস ঠেকানোর যাবতীয় সতর্কতা অবলম্বন করে উপর থেকে গর্ত খুঁড়ে চণ্ডীকে উদ্ধার করা। তাঁরা বলছেন, তত দিনে অন্য টিবিএম ঊর্বী-র শিয়ালদহ অভিমুখে পূর্বমুখী সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা। তাকেই ফের উল্টো দিকে, অর্থাৎ শিয়ালদহ থেকে বৌবাজার অভিমুখে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজে লাগানো হবে। শিয়ালদহ থেকে যাত্রা শুরু করে মাটির নীচে বৌবাজার পর্যন্ত সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ শেষ করবে ঊর্বী। বৌবাজার পৌঁছলে ফের গর্ত খুঁড়ে সেটিকে বাইরে বার করে আনা হবে।
কিন্তু বৌবাজার থেকে নতুন টিবিএম নামিয়ে পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ করা হচ্ছে না কেন?
মেট্রো সূত্রের খবর, বৌবাজারের মতো সঙ্কীর্ণ জায়গায় ঊর্বী-কে তুলে এনে ফের নতুন টিবিএম নামিয়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার প্রক্রিয়া চালাতে গেলে বেশ কিছু যন্ত্রাংশ বসাতে হবে। সেগুলি বসানোর মতো জমি পাওয়া দুষ্কর। দ্বিতীয়ত, অপরিসর রাস্তায় মেট্রোর ভারী ক্রেন এবং যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়াও সমস্যার। ফলে বৌবাজারে নতুন টিবিএম নামিয়ে কাজ শুরু করার চেয়ে শিয়ালদহের দিক থেকে সুড়ঙ্গ খোঁড়া শুরু করে তা বৌবাজারে শেষ করা অনেক বেশি সুবিধাজনক।
তবে পুজো মিটে গেলেও কবে আবার সুড়ঙ্গ খননের কাজ শুরু করা যাবে, তা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারছেন না ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কর্তারাও। আপাতত স্থানীয়দের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত সমস্যা মিটিয়ে আদালতের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।