দক্ষিণ আফ্রিকায় তিন বছর কাটিয়ে ৪ জুলাই ১৮৯৬ কলকাতা বন্দরে পা দিলেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী। সেই প্রথম। শহরে থাকেননি তিনি, সে দিনই বোম্বাইয়ের ট্রেন ধরেন। ফের কলকাতায় এলেন ৩১ অক্টোবর, এ দফায় দু’সপ্তাহ ছিলেন গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে। সে বারে দক্ষিণ আফ্রিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জনমত তৈরিই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। কলকাতায় বিশেষ চেনাজানাও ছিল না তাঁর। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করলেন, তেমন আশার আলো দেখা গেল না। দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে ‘অমৃতবাজার’ ও ‘বঙ্গবাসী’ সংবাদপত্রের সম্পাদকরাও উৎসাহ দেখাননি। ‘দ্য স্টেটসম্যান’ ও ‘দি ইংলিশম্যান’ অবশ্য খবর ছেপেছিল। তার পর অর্ধ শতাব্দী ধরে বহু বার কলকাতায় এসেছেন তিনি, ‘মহাত্মা’ হয়ে ওঠার দীর্ঘ পথের অনেকটারই সাক্ষী থেকেছে কলকাতা। বিশেষ করে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা ও দেশভাগের আগে-পরে তাঁর কলকাতায় অবস্থান এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রশমনে অনশন উপমহাদেশের ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে স্মরণীয় ঘটনা।
কলকাতার সঙ্গে গাঁধীজির সম্পর্ক নিয়ে কয়েক বছর আগে চমৎকার তথ্য সঙ্কলন করেছিলেন গোপালকৃষ্ণ গাঁধী (আ ফ্র্যাঙ্ক ফ্রেন্ডশিপ, সিগাল বুকস)। সে বইটি অনেক দিনই পাওয়া যায় না, আবার মুদ্রিত হচ্ছে। তবে এর মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে কলকাতার ইতিহাসকার পিটি নায়ারের সাম্প্রতিক বই, গাঁধীজি ইন ক্যালকাটা (পুঁথি পুস্তক)। বিভিন্ন সময় গাঁধীজির কলকাতা-বাসের প্রতিটি দিনের খুঁটিনাটি বিবরণ তো আছেই, তার বাইরে নায়ার প্রচুর সমসাময়িক তথ্য বিভিন্ন সূত্র থেকে জুড়ে দিয়েছেন। তার মধ্যে একটি প্রধান সূত্র কলকাতা পুরসভার নথিপত্র, বিশেষ করে ‘ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল গেজ়েট’— যেখানে গাঁধীজির কলকাতায় আসার খবর, পুরসভার সংবর্ধনা ইত্যাদির বিবরণ নিয়মিতই প্রকাশিত হয়েছে। আছে ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট খবর। মনু গাঁধীর মিরাক্ল অব ক্যালকাটা বা নির্মলকুমার বসুর মাই ডেজ় উইথ গাঁধী প্রভৃতি বইও নায়ার কাজে লাগিয়েছেন। পত্রিকা ও বই থেকে দীর্ঘ উদ্ধৃতির মাধ্যমে সমসময়ের সামগ্রিক ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন নায়ার, এমনকি কলকাতায় গাঁধীর ভাষণগুলিও এক জায়গায় পেয়ে যাবেন পাঠক। সব মিলিয়ে সার্ধশতজন্মবর্ষে গাঁধীচর্চায় নায়ারের বইটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।
তবে বইপত্রের বাইরে গাঁধীজিকে অন্য ভাবে দেখার কাজও চলছে। ভারতের সাধারণ মানুষ— যাঁদের জন্য মহাত্মা সারা জীবন লড়াই করেছেন, তাঁরা আজ তাঁকে কী চোখে দেখেন, তাঁর সম্পর্কে তাঁদের কী ধারণা? সারা দেশের লোকশিল্পের বারোটি ধারা বেছে নিয়ে তার শিল্পীদের বলা হয়েছিল মহাত্মা গাঁধীর জীবনের কোনও ঘটনা নিয়ে ছবি আঁকতে। ফাড়, গোন্দ, মধুবনি, সাঁঝি, কলমকারি, মাতা-নি-পাছেড়ি, ওরলি, ওড়িশা ও বাংলার পটচিত্র, বস্ত্রবয়ন, কাগজের মণ্ড ও তাঞ্জোর চিত্রকলার শিল্পী— যাঁরা অধিকাংশই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ— এঁকেছেন তাঁদের ‘গাঁধীজি’কে। সেই সব ছবি নিয়েই একটি অসাধারণ প্রদর্শনী চলছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের কেন্দ্রীয় কক্ষে, ১০ অগস্ট পর্যন্ত। শিরোনাম ‘রিলিভ দি আইডিয়ালস অব মহাত্মা থ্রু আর্ট’, আয়োজনে এক্সিম ব্যাঙ্কের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। শিল্পীরা বেছে নিয়েছেন চম্পারণ সত্যাগ্রহ, সর্বধর্মসমন্বয়, ডান্ডি যাত্রা, চরকা, লবণ সত্যাগ্রহ ইত্যাদি বিষয়। পটচিত্রীরা গুরুত্ব দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় ট্রেনে তাঁর অপমানের ঘটনাটি (সঙ্গের ছবি)— যা গাঁধীজির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।
দ্বারকানাথ ২২৫
দ্বারকানাথ ঠাকুর তখন প্যারিসে। শেষ বারের ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে ঘুরে এলেন প্যারিস। সে কালের বিখ্যাত প্রতিকৃতি শিল্পী, দেলাক্রোয়া-র ছাত্র, ব্যারন লুই-ওগ্যুস্ত দ্য শ্বিতার-কে আঁকতে দিলেন নিজের প্রতিকৃতি। কিন্তু ইংল্যান্ডে ফিরে ১৮৪৬ সালে আকস্মিক ভাবে প্রয়াত হন দ্বারকানাথ। সে ছবি আর তাঁর দেখা হয়নি। ছবি শেষ হওয়ার পর শিল্পী জাহাজে করে ছবিটি জোড়াসাঁকোয় পাঠিয়ে দেন ১৮৪৭-এ। সেই চমৎকার প্রতিকৃতিটি এখন শোভা পাচ্ছে জোড়াসাঁকোয় রবীন্দ্রভারতী সংগ্রহশালায়। অবনীন্দ্রনাথ এটির একটি কপি করেছিলেন, তা রয়েছে প্যারিসে কৃষ্ণা রিবু-র সংগ্রহে। দ্বারকানাথের ২২৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের এই পথিকৃৎ উদ্যোগপতিকে নিয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিআই) ও ইনটাক-এর আয়োজনে গত শনিবার ছিল একটি আলোচনাচক্র। সেখানে রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী দ্বারকানাথের এই তৈলচিত্রের একটি কপি (সঙ্গের ছবি) বিসিসিআই-এর হাতে তুলে দেন।
বিশিষ্ট সাংসদ
ইংরেজ আমলের কেন্দ্রীয় আইনসভা, স্বাধীনতার পর গণপরিষদ এবং পরে ভারতের প্রথম লোকসভার বিশিষ্ট সদস্য লক্ষ্মীকান্ত মৈত্রের (২৩.০৭.১৮৯৫-২৫.০৭.১৯৫৩) জন্ম ঢাকা জেলার নারায়ণগঞ্জে হলেও তাঁদের আদি বাসস্থান নদিয়া জেলার শান্তিপুরে। রজনীকান্ত মৈত্র ও যদুবালা মৈত্রের কনিষ্ঠ সন্তান লক্ষ্মীকান্ত অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ঢাকার জগন্নাথ কলেজ, প্রেসিডেন্সি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ও আইন পাশ করে তিনি সংস্কৃত সাহিত্য ও দর্শন অধ্যয়ন আরম্ভ করেন এবং তারই জন্য ‘পণ্ডিত’ উপাধিতে ভূষিত হন। মহাত্মা গাঁধীর অসহযোগ আন্দোলনে সাড়া দিয়ে তিনি শান্তিপুরে ‘শিল্প আশ্রম’ গড়ে তোলেন। সেখানে দাঁতের মাজন, লেখার কালি, জুতোর কালি, কবিরাজি মাথার তেল প্রভৃতি তৈরি হত। সদ্য পেরিয়ে গেল তাঁর ১২৫তম জন্মদিন।
মহাভারত জিজ্ঞাসা
বিষয়, মহাভারত জিজ্ঞাসা। দর্শন, ভাষাতত্ত্ব, রাজনীতি, ধর্ম, নীতি, রণকৌশল, নানা দিক থেকে আলোচনা। বলবেন প্রবাল দাশগুপ্ত, রণবীর সমাদ্দার, স্বামী সুপর্ণানন্দ, ডা. সুনন্দন বসু, পুরুষোত্তম আগরওয়াল, কৃষ্ণকান্ত শর্মা প্রমুখ। ১০ অগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় এই অনুষ্ঠানে মূল ভাষণ দেবেন দার্শনিক অরিন্দম চক্রবর্তী, বিষয়: ‘ভগবদ্গীতা ও কামগীতা: প্রতিপক্ষ না পরিপূরক?’ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় এ বছর অরিন্দমবাবু ও বেদবিশেষজ্ঞ অমলকুমার চট্টোপাধ্যায়কে ‘মহামহোপাধ্যায়’ সম্মান দিচ্ছে, জানালেন উপাচার্য পলা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দিন সন্ধ্যায় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন রাশিদ খান। ‘সুরসাগর’ সম্মান পাবেন সেতারশিল্পী তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। ফি বছর শ্রাবণ পূর্ণিমায় ‘সংস্কৃত সপ্তাহ’ পালিত হয়। সেই উপলক্ষে ৯-১১ অগস্ট ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে শাস্ত্র আলোচনা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সেতুবন্ধন
প্রতি বছর কলকাতায় এবং নেদারল্যান্ডসে একটি করে নতুন নাটক মঞ্চস্থ করে ইন্দো-ডাচ থিয়েটারগোষ্ঠী ‘মজলিশ’। ইংল্যান্ডের দর্শকমহলেও সম্প্রতি প্রশংসা পেয়েছে তারা। প্রবাসী বাঙালিদের কাছে বাংলা নাটক পৌঁছে দেওয়ার সঙ্গে তা বাড়ির বৈঠকখানায়ও পৌঁছে দিতে সম্প্রতি তাদের নতুন উদ্যোগ ‘ফ্রাইডে ফুটলাইটস’, যেখানে প্রতি মাসের তৃতীয় শুক্রবার সম্প্রচারিত হয় একটি করে অডিয়ো-নাটক। সোশ্যাল মিডিয়া এবং মজলিশ-এর নিজস্ব ওয়েবসাইটে শোনা যায় এই নাটক। এ বারে তাদের চতুর্থ বর্ষের নিবেদন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সেতুবন্ধন’। শিশির মঞ্চে মঞ্চস্থ হবে ১২ অগস্ট সন্ধে সাড়ে ৬টায়। নাটকটিতে একটি সেতুনির্মাণকে কেন্দ্র করে কিছু অসৎ মানুষের কার্যকলাপ ও তার ঘটনা-পরম্পরা প্রায় অর্ধশতকের বেশি আগে রচিত হওয়া সত্ত্বেও আজও ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক।
ক্ষুদিরাম
১৯০৮-এর ১১ অগস্ট। ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডের হত্যা প্রচেষ্টায় জড়িত থাকায় ফাঁসি হল বছর আঠারোর ক্ষুদিরাম বসুর। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে কি এই ঘটনা নতুন প্রজন্মের কাছে কোনও আবেগ সৃষ্টি করে? তাই ১৯৭৭-এ মঞ্চস্থ করা একটি মূকাভিনয় প্রযোজনা, যার মূল ভাবনায় ছিলেন যোগেশ দত্ত, আবার ‘পদাবলী’-র উদ্যোগে নতুন ভাবে আসছে। অভিনয়ে আছেন বিশেষ ভাবে সক্ষম অনেকেই। “আমাদের দলে বেশ কিছু তরুণ সদস্য থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত”, জানালেন সংস্থার সম্পাদক প্রকৃতি দত্ত। নামভূমিকায় অরিন্দম বর্মণ, যিনি জন্মবধির। ১০ অগস্ট মিনার্ভা থিয়েটারে সন্ধে সাড়ে ৬ টায় নতুন করে মঞ্চস্থ হতে চলেছে ‘ক্ষুদিরাম’।
পিট সিগার
যৌবনে যুব কমিউনিস্ট লিগের সঙ্গে থেকে, বাকি জীবন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থেকেও সেই আদর্শকেই চেতনায় লালন করে গান গেয়েছেন পিট সিগার। ষাটের দশকে নাগরিক অধিকার রক্ষার আন্দোলনে, সত্তরে ভিয়েতনামে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে, পরে পরিবেশ আন্দোলনে নিজের গান নিয়ে শামিল থেকেছেন বরাবর। পঞ্চাশের দশকে আমেরিকার রেডিয়ো-টিভি তাঁকে নির্বাসন দিলেও নতুন শতকের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শপথে আমন্ত্রিত ছিলেন তিনি ও তাঁর গানের দল। লোক ও গণসঙ্গীতের এই কিংবদন্তির শতবর্ষ (জ. ১৯১৯) উপলক্ষে গোর্কিসদনে ৯ অগস্ট সন্ধে ৬টায় ‘কথায় গানে পিট সিগার’। পরিচালনায় সাগ্নিক-এর কঙ্কণ ভট্টাচার্য। আছে নাটিকাও: ‘আর যুদ্ধ নয়’। আয়োজনে আইপিটিএ, কলকাতা আঞ্চলিক কমিটি।
অটিজ়ম-স্পর্শ
‘‘প্রায় দু’বছর কেবল ঘুরেই বেড়ালাম। ঠিক কী করণীয় তা ঠাহর করতেই সময় পেরোল। আসলে একজন বিশেষধর্মী শিশুকে নিয়ে একটা পরিবারের প্রাথমিক কাজ কী হতে পারে ... সেই সচেতনতাটাই ছিল না।’’ এমন আক্ষেপ কত না বাবা-মায়ের। তাঁদের জন্য প্রকাশ পেল নতুন পত্রিকা, ‘অটিজম স্পর্শ’। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ যেমন আছে, তেমনই রয়েছে বাবা-মায়েদের কলমে নানা আলেখ্য। সম্পাদক ঝিমলী দত্ত লিখছেন, বাংলায় অটিজ়ম-সংক্রান্ত তথ্য সবার কাছে পৌঁছে দিতেই এই পত্রিকা। উত্তম উদ্যোগ। তবে বাংলা হরফে ইংরেজির বাহুল্য ইঙ্গিত করে, সার্থক পরিভাষা তৈরিও একটা কাজ। এই পত্রিকাতেই তার সূচনা হতে পারে বইকি।
ডাকটিকিট
বিমান মল্লিক ১৯৭১ সালের এপ্রিলে ইংল্যান্ডের পোস্টমাস্টার-জেনারেল তথা মন্ত্রী জন স্টোনহাউসের কাছ থেকে ডাক পান স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশের (তখনও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আসেনি) স্মারক ডাকটিকিট তৈরির, স্টোনহাউসের সঙ্গী ছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। আটটি ডাকটিকিটের নকশা করেন বিমানবাবু। ২৯ জুলাই বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল-সহ আমেরিকা-ইউরোপ মহাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে এটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশের পর তোলপাড় হয় সারা দুনিয়া। বাংলাদেশের প্রথম সরকারি ডাকটিকিট অবশ্য মুক্তি পায় ’৭১-এর ডিসেম্বরে। এ-বিষয়ে নাসরিন ইসলাম তাঁর তথ্যচিত্র: ‘দ্য পোস্টেজ স্ট্যাম্প ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স’ দেখাবেন ৯ অগস্ট সন্ধে ৬টায় আইসিসিআর-এ। থাকবেন বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার তৌফিক হাসান ও চলচ্চিত্রকার গৌতম ঘোষ। আইসিসিআর-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ় অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস।
দোহারের কুড়ি
অসম শিলচরের কালিকাপ্রসাদ বেড়ে ওঠেন সঙ্গীতের পরিমণ্ডলে, কাকা অনন্ত ভট্টাচার্য তাঁর অনুপ্রেরণা। পড়তে আসেন কলকাতায়। ১৯৯৯ সালের ৭ অগস্ট কাকার সংগৃহীত গানের ডালি দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন স্টুডেন্টস হলে। প্রথম অনুষ্ঠানেই বাজিমাত। জন্ম নিল লোকগানের নতুন দল ‘দোহার’। কুড়ি বছরে বহু পথ পেরিয়ে দোহার আজ মঞ্চসফল দল। কালিকাপ্রসাদের অকাল মৃত্যুতে ক্ষণিকের দমে যাওয়া— পরে স্ত্রী ঋতচেতা ও রাজীব দোহার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আবার স্বমহিমায়। ৭ অগস্ট শিশির মঞ্চে ‘দোহার ২০’ অনুষ্ঠান। এই উপলক্ষে অগস্ট ও সেপ্টেম্বর দু’মাস হরেক অনুষ্ঠানে দেখা যাবে লোকসংস্কৃতির বহু আঙ্গিক।
চিরজীবিত
আশি বছরের জীবনে কত-না মৃত্যু দেখেছেন রবীন্দ্রনাথ, নিকটজনের মৃত্যু থেকে বিশ্বযুদ্ধে নিহত অগণন... কিন্তু সে সব মৃত্যু তাঁকে যতই দীর্ণ করুক, কখনও তাঁর সৃষ্টিশীলতাকে আচ্ছন্ন করতে পারেনি। কল্পিত কোনও ঐশী শক্তি নয়, মানুষের মধ্যেই তিনি মহামানবকে দেখেছিলেন, সেই বিশ্বাসেরই প্রতিফলন তাঁর গানে, নাটকে, কবিতায়। এমন বিষয় নিয়েই ১১ অগস্ট সন্ধে ৭টায় কবির প্রয়াণদিবস স্মরণের আয়োজন করেছে রবীন্দ্রতীর্থ: ‘জয় চিরজীবিতের’। কবির গান, নাট্যাংশ, ‘দ্য চাইল্ড’-এর মঞ্চরূপ (নির্মাণে সায়ক মিত্র) ও নৃত্যে (পরিচালনায় জোনাকি সরকার) সেজে উঠছে অনুষ্ঠানটি। রবীন্দ্রগানের পিতাপুত্রী জুটি দেবাশিস ও রোহিণী রায়চৌধুরী এবং ডান্সার্স গিল্ড-এর যুগ্ম প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন দেবাশিস রায়চৌধুরী।
বরফ-বৃত্তান্ত
উনিশ শতকের গোড়ায় কলকাতার অসহ্য গরমে সাহেবদের প্রাণ আইঢাই। বরফ চাই, কিন্তু মিলবে কোথায়? চুঁচুড়া থেকে ‘হুগলি আইস’ আসে বটে, কিন্তু তা একেবারে নোংরা, কাদা কাদা। বস্টনের ব্যবসায়ী ফ্রেডরিক টিউডরের বুদ্ধি খুলল। ‘টাস্কানি’ জাহাজে করে সাত সমুদ্র পেরিয়ে ম্যাসাচুসেটস-এর ঝকঝকে বরফ পৌঁছল কলকাতায়, ১৮৩৩ সালে। প্রায় পঞ্চাশ বছর এই ব্যবসা রমরমিয়ে চলেছে। বরফ ঠিক রাখার জন্য ‘আইস হাউস’ও তৈরি হয় কলকাতায়। তবে ১৮৭৮-এ এখানেই বরফ তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে। সেই বরফ-ব্যবসা নিয়ে আজ ৫ অগস্ট বিকেল ৪টেয় যদুনাথ ভবনে বলবেন ক্রিস্টিন রজার্স। সঙ্গে ৬-৭ অগস্ট চলবে প্রদর্শনী। ক্রিস্টিন শিল্পী, ফটোগ্রাফি নিয়ে পড়ান টেনেসির বেলমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে।
চারণকবি
রবীন্দ্রনাথের জন্মের দু’বছর পর দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্ম। তাঁর ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘জাগরণের চারণকবি’ নামে প্রায় এক ঘণ্টার তথ্যচিত্র তৈরি করেছে কৃষ্ণনগরের সায়ন প্রোডাকশন্স। দ্বিজেন্দ্রলাল কৃষিবিদ্যা শিখতে বিলেত যান, সেখানে ইংরেজি কবিতা লেখেন। বাবা কার্তিকেয়চন্দ্র ছিলেন কৃষ্ণনগরের রাজার দেওয়ান ও কলাবন্ত গায়ক। তাঁর কাছেই সঙ্গীতের প্রথম তালিম। কিন্তু কালাপানি পেরোন বলে কৃষ্ণনগর তাঁকে পরিত্যাগ করে। প্রথম দিকে তাঁর লক্ষ্য ছিল কৌতুক রস— গানে কবিতায় বলতে চাইতেন বাঙালির তথাকথিত সাংস্কৃতিক ছদ্মবেশের কথা। ছবিতে দেখানো হয়েছে ক্রমশ দ্বিজেন্দ্রলাল কী ভাবে ঐতিহাসিক ও সামাজিক নাটকের দিকে চলে গেলেন। ‘শাজাহান’ নাটক থেকে পাঠ করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তুলিকা দাস। আছে দ্বিজেন্দ্রলালের গানের কথাও। তথ্যচিত্রটির গবেষণা ও পরিচালনায় শঙ্কর মজুমদার।
মহেন্দ্রনাথ স্মরণ
স্বামীজির মধ্যম ভ্রাতা মহেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৬৯-১৯৫৬) ‘‘যেন সেই বহুরূপী। কখনও তিনি ভ্রমণ-বিলাসী পথিক, কখনও শিল্প-সংস্কৃতির তত্ত্বজ্ঞানী, কখনও সমাজ-বিজ্ঞানী; আবার কখনও... ঈশ্বরে সমর্পিত এক পূত প্রাণ।’’ লিখেছেন দেবাঞ্জন সেনগুপ্ত। সূত্রধর প্রকাশনা আর রামকৃষ্ণ মিশন স্বামী বিবেকানন্দের পৈতৃক আবাস ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র-র যৌথ আয়োজনে ওই কেন্দ্রের শ্রীরামকৃষ্ণ মঞ্চে ১৪ অগস্ট সন্ধে ৭টায় অনুষ্ঠান ‘স্মরণানুধ্যানে মহেন্দ্রনাথ’। স্বাগত ভাষণে স্বামী জ্ঞানলোকানন্দ। মহেন্দ্রনাথকে নিয়ে বলবেন স্বামী চেতনানন্দ। মহেন্দ্রনাথ রচিত শ্রীরামকৃষ্ণের ত্যাগী পার্ষদ-অনুধ্যান (গ্রন্থনা: স্বামী চন্দ্রকান্তানন্দ ও সুমন ভৌমিক) প্রকাশিত হবে সে সন্ধ্যায়। এ ছাড়াও প্রকাশ পাবে আরও কয়েকটি বই।
দেবাসুরের দ্বন্দ্ব
দেবতা এবং অসুরদের চির-যুযুধান দুই সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর অধিবাসী বলেই মনে হয়। কিন্তু সত্যিই কি বিষয়টি এতটা সুনির্দিষ্ট? দেবতা ও অসুররা তো একই উৎস থেকে সৃষ্ট, চারিত্রিক দোষগুণও তাঁদের অনেক ক্ষেত্রেই এক রকম। তবে এটা পূর্বনির্ধারিত যে দেবতারা ‘ন্যায়’-এর পক্ষে, আর অসুররা ‘অন্যায়’-এর। তাই জয় হবে ন্যায়েরই। কিন্তু বৈদিক যুগ থেকে মহাকাব্যের যুগ হয়ে পৌরাণিক যুগে পৌঁছে দেখতে পাই, যে পদ্ধতিতে দেবতাদের জয় অর্জিত হচ্ছে, তা ক্রমশই হয়ে উঠছে নীতিবিবর্জিত। ভারতীয় চিত্রকলাতেও এর প্রতিফলন ব্যাপক। আজ, ৫ অগস্ট বিকেল সাড়ে ৫টায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সম্মেলন কক্ষে এই নিয়ে বলবেন প্রবীণ শিল্প-ইতিহাসবিদ বি এন গোস্বামী। নীচের ছবিতে দেবাসুরের যুদ্ধদৃশ্য।
বাঙালি
এই বঙ্গদেশকেই দ্বিতীয় স্বদেশ মানতেন কাজুও আজুমা, বাংলা ভাষাও শিখেছিলেন নিখুঁত, বলতেন ‘‘পরের জন্মে যেন বাঙালি হয়ে জন্মাতে পারি।’’ বহু ভাষাবিদ ও দার্শনিক এই মানুষটি জার্মান ভাষা-সাহিত্য ছাড়াও তাঁর শিক্ষাগুরু ভারততত্ত্ববিদ নাকামুরা-র পরামর্শে একনিষ্ঠ ভাবে অধ্যয়ন করেছিলেন ভারতীয় দর্শন। তার পর আত্মনিয়োগ করেন রবীন্দ্রচর্চায়। ২০১১-য় তাঁর প্রয়াণের পর পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমিতে তাঁর নামে যে স্মারক বক্তৃতা প্রবর্তিত হয়, এ বছর সেই বক্তৃতাটি দেবেন বিশিষ্ট দার্শনিক অরিন্দম চক্রবর্তী— ‘অন্যের দুঃখ: এখন কৃষ্ণ, বুদ্ধ, বিবেকানন্দ’। ৯ অগস্ট সন্ধে ৬টায় আকাদেমি সভাঘরে। সভামুখ্য শাঁওলী মিত্র।
প্রয়াণ
দর্শনের অধ্যাপক ছিলেন আশুতোষ কলেজে, ছাত্রছাত্রীদের কাছে রীতিমতো জনপ্রিয় সেই কালীপদ বক্সি এগিয়ে এসেছিলেন ‘সমীক্ষণী’কে শক্তিশালী করতে। আশির দশকের গোড়ায় ফলিত মনোবিজ্ঞান নিয়ে জনমানসে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে এখানে যে ক’টি সংস্থা সক্রিয় ছিল, সমীক্ষণী অন্যতম সে সবের মধ্যে, বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী তরুণচন্দ্র সিংহের আহ্বানেই উদ্যোগী হন কালীপদবাবু। ১৯২৯-এ জন্ম অসমের বরপেটা জেলায়। কোচবিহার জেনকিন্স কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে হয়ে উঠেছিলেন তেমনই এক ব্যতিক্রমী শিক্ষক, যিনি ছাত্রছাত্রীদের শেখাতেন দার্শনিকতার ব্যবহারিক প্রয়োগে কী ভাবে সামলাতে হয় জীবনের ওঠাপড়া। দর্শনচর্চায় নিমগ্ন থাকতেন, অনুবাদ করেছেন ফ্রয়েডের ‘দ্য ফিউচার অব অ্যান ইলিউশন’ (সমীক্ষণী)। গত ৯ জুলাই রাতে চলে গেলেন হঠাৎই।
দুই ঠাকুরের সংগ্রহ
তিন ঠাকুরের শিল্প নিয়ে কাজ করে বাংলা থেকে প্রচুর সম্মান পেয়েছি’’, বলছিলেন শিল্পী ও শিল্পবেত্তা রতন পারিমু। এই তিন ঠাকুর হলেন অবনীন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রনাথ। প্রথম দু’জনের উদ্যোগে একদা জোড়াসাঁকোয় সংগৃহীত হয়েছিল বহু মূল্যবান শিল্পকর্ম। এর মধ্যে ছিল দৈনন্দিন জীবন, দেবদেবী, পশুপাখি, প্রকৃতি এবং অন্যান্য চিত্র। ছিল পাহাড়ি চিত্রকলা। ই বি হ্যাভেল, আনন্দ কুমারস্বামীও এই সংগ্রহ বিষয়ে উৎসাহী ছিলেন। এক সময় সংগ্রহটি চলে যায় আমদাবাদের কস্তুরভাই লালভাইয়ের কাছে। পরে তা স্থায়ী ভাবে রাখা হয় আমদাবাদের লালভাই দলপতভাই সংগ্রহশালায়। এখানেই বর্তমানে নির্দেশক হিসেবে যুক্ত আছেন রতন পারিমু। তার আগে বডোদরার মহারাজা সয়াজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পইতিহাস এবং নন্দনতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ছিলেন পঁচিশ বছর। ঠাকুরদের সংগ্রহের শিল্পকর্মগুলি কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন তিনি, করেছেন নিবিড় গবেষণা। সম্প্রতি তৈরি করেছেন এর অন্তর্ভুক্ত ড্রইংগুলির প্রামাণিক ক্যাটালগ। এর মধ্যে আছে পাহাড়ি চিত্রকলায় রামায়ণের অযোধ্যা কাণ্ড (১৭৯০-১৮০০)। এখানে এক-একটি ফ্রেমে একটি ঘটনা ক্রমপর্যায়ে কী আশ্চর্য ভাবে উঠে এসেছে শিল্পীর তুলিতে, সম্প্রতি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে এক আলোচনায় সেটা বোঝালেন তিনি। এ কালের চলচ্চিত্রের সঙ্গে সেই সময়ের পাহাড়ি চিত্রকলার কী আশ্চর্য মিল, সেটাই দেখালেন তিনি। তুলনামূলক উপাদান হিসেবে এসেছে আইজ়েনস্টাইনের ব্যাটলশিপ পটেমকিনের স্কেচ বা সত্যজিতের আঁকা পথের পাঁচালী’র দৃশ্যাবলির কথা অথবা বেনারসের ভারত কলাভবনের সমধর্মী ছবিগুলি। ওঁর সঙ্গে কথকতায় ছিলেন প্রণবরঞ্জন রায়।