কলকাতা আক্রান্ত। সেই প্রথম আর সেই শেষ। পুরনো কেল্লা রক্ষার সঙ্গে সিরাজের বাহিনীকে বাধা দিতে ইংরেজরা তিন জায়গায় কামান সাজিয়েছিল, যাকে সামরিক পরিভাষায় বলে ‘ব্যাটারি অব গানস’। এখনকার হাওড়া ব্রিজের কাছে ‘নর্থ ব্যাটারি’, লালবাজারের কাছে ‘ইস্ট ব্যাটারি’ আর রাজভবনের জায়গায় ‘সাউথ ব্যাটারি’। যুদ্ধবিগ্রহ কবে মিটে গিয়েছে— নবাব কি ব্রিটিশ কেউ আর নেই, কিন্তু সেই যুগের স্মৃতি নিয়ে কলকাতার বুকে রয়ে গিয়েছে কিছু কামান। কামান-বন্দুকের ইতিহাসে বুঁদ সহনাগরিক অমিতাভ কারকুন এমন অনেক কামানের দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ফেয়ারলি প্লেস আর স্ট্র্যান্ড রোডের মোড়ে ফুটপাতে চায়ের দোকানের পাশে মাটিতে আধখানা পোঁতা অবস্থায় আকাশের দিকে মুখ তুলে আছে এক কামান। ঠিক এখানেই ছিল পুরনো কেল্লার উত্তর-পশ্চিম বুরুজ। এটি সেই দুর্গের কামান। ইংল্যান্ডে ১৭৩২ সাল থেকে এই ধরনের কামান তৈরি শুরু হয়। ১৮ পাউন্ড ওজনের গোলা ছোড়া যেত এটি থেকে। আবার রাজভবনের প্রধান ফটক থেকে সোজা উত্তরে বাঁ দিকের ফুটপাত ধরে দু’মিনিট হাঁটলেই ২ রেড ক্রস প্লেসের (পুরনো বন্দুকের দোকান ‘রডা কোম্পানি’র বাড়ি) দেওয়ালে গাঁথা আছে দু’টি কামান। ১৮১৪ সালে প্রথম এই ধরনের কামান জাহাজে বসিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এরা ২৪ পাউন্ড ওজনের গোলা ছুড়ত। রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে দু’টি বেদিতে মোট আটটি কামান সাজানো আছে। এ ছাড়া রাজভবন, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল আর ভারতীয় সংগ্রহশালায় আছে বেশ ক’টি কামান। টালিগঞ্জে টিপু সুলতান মসজিদে আছে কয়েকটি ছোট কামান, এখন বাতিস্তম্ভ। এর সঙ্গে এ বার যোগ হল ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ব্যবহৃত দু’টি কামান। মেয়ো হাসপাতালের কাছে মাটির তলা থেকে উদ্ধারের দশ বছর পর সে দু’টি নতুন করে বেদির উপর বসিয়ে উদ্ঘাটন করানো হচ্ছে ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুজাতা সাহা ও প্রাক্তন কাউন্সিলর অজয় সাহার নেতৃত্বে। মূল উদ্যোগ ঐতিহ্য-অনুরাগী ‘পুরনো কলকাতার গল্প’ গোষ্ঠীর। তাঁরা অমিতাভ কারকুনের সহায়তায় কামানের ইতিহাস উদ্ধার করেছেন, ‘ঐতিহ্য পদযাত্রা’ করে জনসচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেছেন। এক বছর ধরে তাঁদের নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াসের পর কামান দু’টির জনসমক্ষে আত্মপ্রকাশ ঘটতে চলেছে ২০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টেয়, নিমতলা ঘাট স্ট্রিটের ওপর জোড়াবাগান থানার সামনে। থাকবেন অমিতাভ কারকুন-সহ বিশিষ্ট জন।
ছয় দশকের শিল্প
সরকারি আর্ট কলেজ থেকে স্নাতক হন ১৯৬০ সালে। আজ আশিতেও তিনি সমান সক্রিয়। ভারতের অন্যতম বিশিষ্ট শিল্পী যোগেন চৌধুরী সংগঠক, লেখক ও প্রতিষ্ঠান িনর্মাতা হিসেবেও কম কিছু নন। অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্ম, মাত্র আট বছর বয়েসেই দেশভাগের জন্য ভিটেছাড়া হন। ফরাসি সরকারের বৃত্তি নিয়ে প্যারিসে শিল্পশিক্ষা, পরে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে কিউরেটর হিসেবে যোগ দেন। তত দিনে তাঁর ছবিতে নিজস্ব চলন এসে গিয়েছে। ১৯৮৭’তে আসেন বিশ্বভারতী কলাভবনে। গত তিন দশকে দেশে ও বিদেশে বহু প্রদর্শনীতে তাঁর ছবি দেখা গিয়েছে, এ বার ‘রেভরি অ্যান্ড রিয়্যালিটি’তে থাকছে তাঁর ছয় দশকের শ’দেড়েক শিল্পকর্ম, কিউরেটর রঞ্জিত হসকোট। ইমামি আর্ট, কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটিতে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন ২০ সেপ্টেম্বর, চলবে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সঙ্গে তারই একটি।
আর্কাইভে দান
অধ্যাপনার গুণে অতীশরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৪২-২০১৬) ছাত্রছাত্রীদের মনে গভীর ছাপ রেখে গিয়েছেন। যাঁরাই তাঁকে দেখেছেন প্রেসিডেন্সি কলেজের আবহে বা বইপাড়ায় কোনও স্টলে নিবিষ্ট ভাবে পত্রিকা-পাঠরত, তাঁদের মনে সেই ছবি আঁকা হয়ে গিয়েছে। বাবা সতীশরঞ্জন ছিলেন সরকারি স্কুলের প্রধানশিক্ষক, তাঁরও বিষয় ইংরেজি সাহিত্য। মা পুণ্যলেখা ইতিহাসে এম এ। ব্রাহ্ম পরিবারের সন্তান অতীশরঞ্জন পড়া আর পড়ানোতেই আজীবন মগ্ন ছিলেন। একমাত্র শখ ছিল বই আর লিটল ম্যাগাজিন সংগ্রহ। সাহিত্য, শিল্প, নাটক, চলচ্চিত্র ইত্যাদি বিবিধ বিষয়ের পত্রিকা, সাড়ে তিন হাজারের বেশি। বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য ছাড়াও শুধু রবীন্দ্র-প্রাসঙ্গিক গ্রন্থ হাজারের বেশি। ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দাদার ৭৭তম জন্মবার্ষিকীতে অতীশরঞ্জন সংগৃহীত পত্রিকা এবং রবীন্দ্র-বিষয়ক গ্রন্থসম্ভারটি প্রণতি মুখোপাধ্যায় এবং সুকান্ত চৌধুরীর উপস্থিতিতে জীবনস্মৃতি ডিজিটাল আর্কাইভের হাতে তুলে দেবেন। থাকবেন অরিন্দম সাহা সরদার।
বিষয় বৈষম্য
‘বৈষম্য’। উন্নয়নের ঢক্কানিনাদে যতই ঢেকে ফেলা যাক, শব্দটিকে এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব। বিশ্বায়নের কয়েক দশক পেরিয়ে নানা ক্ষেত্রে বৈষম্য কিন্তু ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্বজুড়ে এবং বিশেষ করে ভারতে অর্থনীতির উপরে মন্দার ছায়া যখন দীর্ঘায়িত হচ্ছে, তখন শব্দটি আরও প্রাসঙ্গিক। প্রথম ‘অরূপ মল্লিক স্মৃতি বক্তৃতা’য় তাই ‘বৈষম্য’ নিয়েই চর্চা করবেন ব্রিটেনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তনী পরন্তপ বসু। বিভিন্ন দেশের মধ্যে আয়ের বৈষম্যের তুলনা করে তার সঙ্গে বৃদ্ধি, মানবসম্পদ, নানা আবিষ্কার, এমনকি শেয়ার বাজারের সম্পর্কের বহুমাত্রিক রূপটি উঠে আসবে তাঁর বক্তৃতায়। এশিয়াটিক সোসাইটির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ২১ সেপ্টেম্বর সোসাইটির বিদ্যাসাগর হলে বিকেল চারটেয় এই বক্তৃতার অয়োজন করেছে ‘অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি ইকনমিক্স ডিপার্টমেন্ট’।
নাট্যপত্রিকা
নতুন একটি নাট্যপত্রিকা প্রকাশ পেতে চলেছে ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়, আইসিসিআর-এর যামিনী রায় গ্যালারিতে। ‘অন্য থিয়েটার’ নাট্যগোষ্ঠীর এই দ্বিভাষিক (বাংলা-ইংরেজি) ও ষান্মাসিক (এপ্রিল, সেপ্টেম্বর) পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশ করবেন অগ্রজ নাট্যজন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত ও বাংলাদেশের নাসিরউদ্দীন ইউসুফ। উপদেশক পবিত্র সরকার ও শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নানান আলোচনা, যেমন সদ্যপ্রয়াত গিরিশ কারনাড ও সলিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিলীপকুমার গুপ্তের জন্মশতবর্ষ নিয়ে আলোচনা। নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার ও পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক বিভাস চক্রবর্তীর সরস মন্তব্য ‘‘বহুদিনের সাধ, ঘরে একটা টেলিফোন শোভা পাক, যখন সে ফোন ঘরে এল তখন দেখি যন্ত্রটি হাতে-হাতে ঘুরছে! আমাদের নাট্যপত্রিকার ক্ষেত্রেও কি তাই হল?’’
শতবর্ষে প্রাক্তনী
যে ভাবে আজ ধর্ম ও রাজনীতিতে ‘রেজিমেনটেশন’ ঘটছে, সে বিপদের আশঙ্কা অনেক আগেই করেছিলেন ত্রিগুণা সেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেক্টর ও উপাচার্য। বলেছিলেন, মানবিকতাই হতে পারে একমাত্র বিকল্প, যা থেকে তৈরি হবে প্রজ্ঞা আর শুভ সঙ্কল্পের পথ। তাঁর সভাপতিত্বেই ষাটের দশকের শুরুতে নতুন পথের সন্ধানী হয়ে ওঠে সেখানকার প্রাক্তনী সংসদ (অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন, এনসিই বেঙ্গল অ্যান্ড জেইউ)। ১৯২১-এর ১ জানুয়ারি এই প্রাক্তনী সংসদের জন্ম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু উন্নয়নমূলক কাজেই সক্রিয় এই সংসদ। শতবর্ষের সন্ধিক্ষণে এসে বছরব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা, তারই সূচনা ত্রিগুণা সেন অডিটোরিয়ামে ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায়, থাকবেন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য সতী চট্টোপাধ্যায় সুকান্ত চৌধুরী প্রমুখ।
নতুন দৃশ্যপট
‘দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাস’ (৯/২ ফার্ন রোড)-এর ‘দৃশ্যপট’ প্রতি মাসে অভিনব আঙ্গিকে সেজে ওঠে। এই সমাহারে একটি পত্রিকার প্রচ্ছদনিবন্ধের আদলে থাকে মুখচ্ছবি, ধারাবাহিক রচনার মতোই ধারাবাহিক অক্ষরচিত্র। দৃশ্যপট-এর প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে চলছে প্রদর্শনী। মণীন্দ্র গুপ্ত কক্ষে শিল্পী ললিতমোহন সেনের রেখাচিত্র ও অলঙ্করণের প্রদর্শনী, লাগোয়া তুষার চৌধুরী কক্ষে তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ দাশগুপ্ত এবং পার্থপ্রতিম সেনের তৈরি ব্রোঞ্জ ও সেরামিক্সের দুর্গাভাস্কর্য। আবার গৌরী ধর্মপাল ও কেজি সুব্রহ্মণ্যন কক্ষে সরাচিত্র প্রদর্শনী। শিল্পী সনৎ কর, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, গণেশ হালুই, যোগেন চৌধুরী, শুভাপ্রসন্ন প্রমুখ সরা এঁকেছেন। প্রদর্শনী চলবে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (রোজ ২-৮টা)।
নব রূপে
১৯১৫ সালে প্রকাশিত হয় ‘দ্য মেটামরফোসিস’ নামে ফ্রান্জ কাফকার নভেলা। যার নায়ক গ্রেগর সামসা দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে উঠতে উঠতে দেখে, সে পরিণত হয়েছে এক দৈত্যাকার পোকায়, সামনের ঘটমান বাস্তবটাও গভীরতর এক দুঃস্বপ্ন। ফিল্ম থেকে অপেরা, নানা শিল্পমাধ্যমে রূপ পেয়েছে এই সৃষ্টি। যেটা বাকি ছিল, সেই ‘ভি আর’ বা ভার্চুয়াল রিয়্যালিটিতে এ বার তাকে বাঁধলেন মিকা জনসন। শিল্পী-নির্দেশক মিকা ও তাঁর বন্ধুরা বানিয়েছেন ‘কাফকা ইন ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি’। চেক ক্লাসিক্যাল অ্যানিমেশন আর ফোটোগ্রাফি মেশানো এই ‘ভি আর অভিজ্ঞতা’য় দর্শক ঢুকে পড়েন গ্রেগর সামসার ঘরে, নিজেই হয়ে ওঠেন সেই ভয়ঙ্কর পোকা, মিনিট চারেকের জন্য। ম্যাক্সমুলার ভবনে সমবেত দর্শক পেলেন সেই অভিজ্ঞতার স্বাদ।
লেখক সম্মেলন
ভারতীয় মহাকাব্যের পাশাপাশি আদিবাসী পুরাণে সময়ের জন্মের কথা বলছিলেন অমর মিত্র, ‘মিথিক্যাল লাইফ’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে। উচ্ছ্বসিত হয়ে শুনছিলেন কাজ়াখস্তান-এর মানুষজন। মধ্য এশিয়ার এই দেশটি ছিল সাবেক সোভিয়েটের মধ্যে। ১৯৯১-এ স্বাধীন হয়। রাশিয়া, চিন ও উজবেকিস্তান সংলগ্ন এই দেশের রাজধানী আস্তানা— বর্তমানে নুর-সুলতান— শহরে হয়ে গেল প্রথম এশীয় লেখক সম্মেলন (৪-৬ সেপ্টেম্বর)। উদ্যোক্তা কাজ়াখস্তান রাইটার্স ইউনিয়ন। এশিয়ার ৪৩টি দেশের ১৫০ জনের উপর লেখকের সম্মিলন। মূল উদ্বোধনী মঞ্চে পাঁচ জন এশীয় লেখকের মধ্যে ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার কবি কো উন, এক মঙ্গোলিয়ান ঔপন্যাসিক এবং অমর মিত্র। ফোরামটির মূল লক্ষ্য এশীয় লেখকদের ভিতর যোগাযোগ তৈরি, মতবিনিময়, তাঁদের স্বাধিকার রক্ষা, এশীয় সাহিত্যের বিকাশ। এই উপলক্ষে পরিকল্পিত ইংরেজি ভাষার এক সঙ্কলনে অমর মিত্রের ‘দানপত্র’ গল্পটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
নিবেদিত
‘প্রথমে চিন্তা ছিল, যদি ১৫০ জন কবির ১৫০টি কবিতা সংকলন করা যায়। পরে মনে হল, এটি যদি কেবল সংখ্যা মেলানোর প্রয়াস না হয়ে, ঐতিহাসিক শ্রদ্ধার্ঘ্যের স্মারক হয়, ক্ষতি কী!’ ‘নিবেদিতাকে নিবেদিত’ সঙ্কলনগ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন স্বামী শাস্ত্রজ্ঞানন্দ। ভগিনী নিবেদিতার সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপনের অঙ্গ হিসেবে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের অর্ঘ্য এই কবিতা বই। আছে বিবেকানন্দ, গিরিশ ঘোষের মতো ‘প্রত্যক্ষদর্শী’দের কবিতা থেকে শুরু করে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবর্তী, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মণীন্দ্র গুপ্ত, শঙ্খ ঘোষ, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ছুঁয়ে এই প্রজন্মের কবিদের রচনা, সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীদের কবিতাও। ভাবনায় দেবজ্যোতিনারায়ণ রায়। ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধেয় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে বইটির উদ্বোধন করবেন স্বামী বলভদ্রানন্দ।
নিজের খোঁজে
‘‘সে বার সুচিত্রাদির ছিয়াত্তর ছুঁইছুঁই জন্মদিনে রবিতীর্থ-র ছোট্ট একটি ঘরে একান্তে পাওয়া গেল তাঁকে কিছুক্ষণের জন্যে, সব ছাপিয়ে যে গভীর কথাটি উঠে এল তাঁর কণ্ঠে: রবীন্দ্রনাথের প্রায় সব গানেই একটা স্পিরিচুয়াল কোয়েস্ট আছে।’’ সেই স্মৃতিসূত্র থেকেই সুচিত্রা মিত্রের ৯৬তম জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর ছাত্রী মনীষা বসুর নিবেদন: ‘রবীন্দ্রনাথের আত্মানুসন্ধানের গান’— যেখানে আমরা পাই প্রেমিক রবীন্দ্রনাথের আত্মশোধন ও আত্মদীক্ষার পর্ব। মনীষার গানের সঙ্গে পাঠে রত্না মিত্র, শঙ্কর রায়চৌধুরী, দেবাশিস বসু। প্রাক্কথনে মীনাক্ষী সিংহ। বক্তা পবিত্র সরকার শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। আয়োজনে রবিভৈরবী। বিড়লা সভাঘরে ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধে ৬টায়। অন্য দিকে আর এক ছাত্রী মন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের সংস্থা ‘পূরবী’-র তরফ থেকে এই জন্মদিন উপলক্ষে ১৮-২০ সেপ্টেম্বর উৎসবের আয়োজন জ্ঞানমঞ্চ, কলামন্দির, রথীন্দ্র মঞ্চে।
সাইকেল-বার্তা
কলকাতার রাস্তায় সাইকেল কোণঠাসা। প্রায় দশ বছর ধরে শহরের রাস্তায় নিত্য সাইকেল-আরোহীদের অধিকার নিয়ে সরব ‘কলকাতা সাইকেল সমাজ’। সম্প্রতি রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের মেঘনাদ সাহা সভাঘরে হয়ে গেল সংগঠনের দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলন। সাইকেল চালানোর সুফল ও সম্ভাবনা নিয়ে বললেন চিকিৎসক, মনস্তত্ত্ববিদ, পরিবেশবিদ, নগর-পরিকল্পক ও সমাজবিদরা। সারা পৃথিবীতেই নগর-পরিবহণে সাইকেলের গুরুত্ব বাড়ছে। শুধুমাত্র জ্বালানি-নিরপেক্ষ ও দূষণবিহীন যান বলে নয়; রাষ্ট্রপুঞ্জ-ঘোষিত ‘বিশ্ব সাইকেল দিবস’-এর সঙ্কল্পপত্রে বলা হয়েছিল, সাইকেল মানবিক যোগাযোগ বাড়ায় ও সমাজে একটা সাম্যভাব গড়ে তুলতে পারে। শরীর ও মন ভাল রাখতেও সাইকেল চালানোর কোনও বিকল্প নেই। ২২ সেপ্টেম্বর ‘ওয়ার্ল্ড কার ফ্রি ডে’-র ডাক দিয়েছে ‘কলকাতা সাইকেল সমাজ’। শহরের মানুষকে গাড়ির ব্যবহার কমানো ও অল্প দূরত্বে সাইকেল বেছে নেওয়ার বার্তা দিতে চায় তারা। সে দিন গোটা বাইপাস জুড়ে র্যালির প্রস্তুতি চলছে। সাইকেল নিয়ে চলে আসতে হবে অজয়নগর মোড়ে, সকাল সাতটায়।
আদিবাণীর স্বপ্ন
বইয়ের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে তাঁকে ফোনে বা হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়াও মুশকিল। ‘‘কলকাতায় কাজ তো কম নয়— বই নিয়ে ভাবনা, প্রকাশের ব্যবস্থা, টাকা জোগাড়, সব কিছুই নিজে হাতে করতে হয়’’, বলছিলেন রুবি হেমব্রম। গত মাসেই দিল্লিতে ছিল বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে গুচ্ছ অনুষ্ঠান, কাজ বাকি বলে যাননি সেখানেও। সাঁওতাল পরিবারের মেয়েটির জন্ম কলকাতায়, শৈশব কেটেছে ঝাড়খণ্ডে। আইনের পাঠ সাঙ্গ করে কর্মজীবন দিব্যি চলছিল বিরাট তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায়, ‘তবু সে দেখিল কোন ভূত?’ এই শহরেই প্রকাশনা সংক্রান্ত একটা কোর্স করতে গিয়ে দেখাসাক্ষাৎ হয় বহু লেখক, একক ও মূলস্রোতের প্রকাশক, মুদ্রকের সঙ্গে। তখনই খেয়াল করেন, শুধু সাঁওতাল কেন, জনজাতীয় মানুষদেরই বলার মতো কোনও উপস্থিতি নেই প্রকাশনা জগতে। এই ভাবনা থেকেই ২০১২ সালে রুবি কলকাতায় শুরু করেন ‘আদিবাণী’। শুধু প্রকাশনাই নয়, ভারতের সমস্ত জনজাতীয় মানুষের কথা ধরে রাখা, ছড়িয়ে দেওয়া ও মুদ্রিত করার একটি আন্তরিক প্রচেষ্টা ও প্রকল্প। ৭ বছরে ১৯টি বই প্রকাশিত। আছে সাঁওতাল লোককথায় সৃষ্টিতত্ত্বের আখ্যান নিয়ে ‘উই কেম ফ্রম দ্য গিজ়’, ‘আর্থ রেস্টস অন আ টরটয়েজ়’ থেকে শুরু করে হুল বিদ্রোহের কাহিনি নিয়ে বই ‘দিসাইবন হুল’। সাঁওতাল সৃষ্টিতত্ত্বে আছে হাঁস-হাঁসীর গল্প, ‘আদিবাণী’র লোগোতেও তাদের সগর্ব অস্তিত্ব স্বাগত জানায় অতীত-ভবিষ্যৎ দুই কালকেই। মূলস্রোতের মানুষ যাঁরা জনজাতীয় ভাষা-সংস্কৃতির চর্চা করেন তাঁদের নয়, আদিবাণী সুযোগ দিতে চায় জনজাতীয় মানুষদেরই। যাঁদের ঐতিহ্য মূলত মৌখিক, তাঁরা যাতে মুদ্রিত অক্ষরে প্রকাশ করতে পারেন নিজেদের। বাংলা বা হিন্দি নয়, ‘আদিবাণী’র সব বইয়ের ভাষাই ইংরেজি, বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ার তাগিদে। পথ কঠিন। ভাড়াঘরের ঠিকানা, পূর্ণ সময়ের কর্মীর অভাব। সাধ্যও সীমিত। তা বলে স্বপ্ন দেখার কমতি নেই। রুবি এখন ব্যস্ত আদিবাসী-জনজাতীয় নারীবাদ নিয়ে একটি সঙ্কলনগ্রন্থের প্রস্তুতিতে।