সশব্দে: গড়িয়ায় পুকুরে ফাটছে জলবোমা। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
শব্দবাজির ক্ষেত্রে জেলায় তবু নিয়ম মানা হয়েছে। কিন্তু নিয়ম ভাঙার ঘটনা অনেক বেশি কলকাতায়। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পরিবেশকর্মীদের সংগঠনের কন্ট্রোল রুমে যে সংখ্যক অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তার বিশ্লেষণ করে এমনটাই পাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা।
পরিবেশকর্মীদের একটি বড় অংশ জানাচ্ছেন, কেন এত প্রচার করেও কলকাতা বহু ক্ষেত্রেই শব্দবিধি মানতে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ, তার কারণ অনুসন্ধান করে যা পাওয়া যাচ্ছে তা হল, ‘শব্দবাজি ফাটালেও আমার কিছু হবে না’—নিয়মভঙ্গকারীদের এমনই মনোভাব। বছরের পর বছর ধরে শব্দবাজি ফাটিয়েও কোনও শাস্তির মুখে না পড়ায় তাঁদের এই মনোভাব তৈরি হয়েছে।
পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘জেলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিয়ম মেনে বাজি ফাটানো হয়েছে। নিয়ম ভাঙা হয়েছে বেশি কলকাতাতেই। শহরে এ ভাবে আইন ভাঙার প্রবণতা তৈরি হওয়াটা খুবই দুঃখের।’’ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে কালীপুজোয় ১৪০টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার সিংহভাগ এসেছে শ্যামপুকুর, নেতাজিনগর, পাটুলি, ফুলবাগান, কসবা, হরিদেবপুর, গরফা, ভবানীপুর, টালা-সহ একাধিক জায়গা থেকে। সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত পর্ষদে আরও ৪০টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তা-ও এসেছে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। পরিবেশকর্মীদের সংগঠন সবুজ মঞ্চের কাছেও গত দু’দিন যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তার সিংহভাগই কলকাতার। ১১৪টি অভিযোগের মধ্যে মাত্র ২০টি এসেছে জেলা থেকে। সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত যে ১৮টি অভিযোগ এসেছে, তার সবই কলকাতার। সংগঠনের সম্পাদক নব দত্ত বলছেন, ‘‘নিয়ম ভাঙার তালিকায় কলকাতাই শীর্ষে।’’
পর্ষদের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, বাজির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কলকাতার মানুষ ভালই জানেন। অথচ রবিবারের তাণ্ডবের পরে সোমবারও রাত ৮টার পর থেকে যে বাজি ফাটানো শুরু হয়েছে, তা চলেছে মধ্যরাত পর্যন্ত। উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্র একই চিত্র। বাদ যায়নি হাসপাতালের মতো ‘সাইলেন্স জ়োন’ও। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে এই প্রথম বার ১২টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও নিয়ম ভাঙার প্রবণতা বন্ধ করা যায়নি। পরিবেশকর্মী অজয় মিত্তলের কথায়, ‘‘বাজি ফাটানো আটকানো গেল না। কারণ কোথাও এর পিছনে প্রত্যক্ষ ভাবে রাজনৈতিক মদত রয়েছে।’’
শব্দবিধি ভাঙার পিছনে কলকাতার শীর্ষে থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে মনোবিদ নীলাঞ্জনা স্যান্যাল বলছেন, ‘‘গ্রামে তুলনায় গতি কম। তাই সেখানে উদগ্র মানসিকতাও কম। কিন্তু শহরে সব সময়েই আলো, আওয়াজের মধ্যে থাকতে-থাকতে এখানকার মানুষদের মধ্যে উদগ্র মানসিকতা বেশি হয়ে পড়ে। সেটাই তখন নিয়ম ভাঙার ক্ষেত্রে মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’’
সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ কুণ্ডু আবার জানাচ্ছেন, শহর মাত্রই একই মনোভাব, সেটা নয়। শহরের চরিত্র নির্ভর করে সেখানকার প্রশাসনের উপরেও। অভিজিৎবাবুর কথায়, ‘‘যাঁরা বাজি ফাটাচ্ছেন তাঁদের অভিজ্ঞতা হল, কলকাতায় শব্দবাজি ফাটিয়েও বছরের পর বছর পার পেয়ে যাওয়া যায়। কেউ কিছু করার নেই। সে কারণেই কলকাতায় নিয়ম ভাঙার প্রবণতাও বেশি।’’