দাপট: তীব্র ঝড়ে শিকড় সুদ্ধ উপড়ে এসেছে গাছ। সল্টলেকের এডি ব্লকে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
সমুদ্র থেকে উঠে সুন্দরবনের স্থলভূমিতে শনিবার রাতে সে ঘণ্টায় প্রায় ১৪০ কিলোমিটার গতিবেগে প্রবেশ করেছে। তার উপস্থিতি ভাল ভাবেই টের পেল শহর কলকাতা। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, বুলবুল শহরে প্রবেশ করেনি ঠিকই। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের জেরে কলকাতায় শনিবার রাতে হওয়া বয়েছে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে। আর তাতেই কোথাও ভেঙে পড়ছে গাছ। কোথাও উড়ে গিয়েছে বিজ্ঞাপনের দৈত্যাকৃতির হোর্ডিং। বৃষ্টির কারণে জলমগ্ন হয় বেশ কিছু এলাকাও। রবিবার সকালে দেখা গেল শহরের অনেক এলাকার বিধ্বস্ত চেহারা।
কলকাতা পুরসভার ডিজি (উদ্যান) দেবাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, টালিগঞ্জ, সাদার্ন অ্যাভিনিউ, চেতলা, বালিগঞ্জ, নারকেলডাঙা-সহ শহরে অন্তত ৫৪টি গাছ পড়েছে। তবে শনিবার গাছ পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হলেও এ দিন নতুন করে কোনও হতাহতের খবর নেই। কলকাতা পুলিশ জানায়, রাত ১২টা নাগাদ ঝড়ের মধ্যে আলিপুর রোডে একটি গাছ পড়ে চলন্ত লরিতে। তবে রক্ষা পান লরির চালক। আনন্দপুরে দাঁড়ানো একটি ফাঁকা ট্যাক্সির উপরেও ভেঙে পড়ে গাছ। রাত দু’টো নাগাদ জোড়াসাঁকো থানা এলাকায় একটি পুরনো বাড়ির দেওয়াল ধসে পড়ে।
এ ছাড়াও শহরের বেশ কিছু জায়গায় জল জমে শনিবারের লাগাতার বৃষ্টিতে। আমহার্স্ট স্ট্রিট, কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটের জল নামাতে এক সময় হিমশিম খেতে হয় স্থানীয় পুরকর্মীদের। জলমগ্ন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ দিয়েও এক সময়ে গাড়ি চলাচল করাতে গিয়ে হিমশিম খায় পুলিশ। রবিবার সকালে ওই এলাকাগুলির জল নামলেও রাত পর্যন্ত বেহালার বেশ কিছু জায়গা জলমগ্ন ছিল বলে স্থানীয়দের দাবি। পুরকর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, এলাকায় এলাকায় রাত জেগেছেন কাউন্সিলরেরা। দ্রুত জল নামানোর কাজ করতে বরো অফিসগুলিতে তৈরি করা হয়েছিল ক্যাম্প। কলকাতা পুরসভার ৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান অনিন্দ্য রাউত বলেন, ‘‘খালের পাড়ের বেশ কিছু ঘর ফাঁকা করানো হয়েছিল। তেমনই বরোর যে এলাকায় জল জমে সেখানে রাত থেকেই কাজ শুরু করেছেন পুরসভার ১০০ দিনের কর্মীরা।’’ একই দাবি কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্তেরও।
একই ভাবে বৃষ্টির জল নামাতে বিধাননগর পুরসভাও যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ চালিয়েছে বলে তাদের দাবি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের জেরে লাগাতার বৃষ্টিতে ভিআইপি রোড, কৈখালি, চিনার পার্ক-সহ বিধাননগর পুর এলাকার বেশ কিছু জায়গা শনিবার রাতে জলমগ্ন হয়ে যায়। গাড়ির গতি শ্লথ হয়ে পড়ে ভিআইপি রোডেও। সল্টলেকে ও রাজারহাটের কয়েকটি জায়গায় গাছ উপড়ে পড়ে। অবশ্য তার জন্য কোথাও রাস্তা আটকায়নি। পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস জানা জানিয়েছেন, জল নিকাশির পাম্প চালু রেখে পরিস্থিতি দ্রুত সামাল দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।