ফাইল চিত্র।
দখল হওয়া জমি চিহ্নিত করে দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি পথে হাঁটতে চলেছে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)। এই মুহূর্তে সংস্থার কত জমি বেআইনি ভাবে দখল হয়ে রয়েছে, তার সমীক্ষা চলছে। সমীক্ষাটি কিছু দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। যে সমস্ত ফাঁকা জমি পড়ে রয়েছে, সেগুলি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়ার পাশাপাশি যে সমস্ত জমি ইতিমধ্যেই দখলদারদের হাতে, সে সব ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলে কেএমডিএ সূত্রের খবর। পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ফাঁকা জমি কোথায় কোথায় পড়ে রয়েছে, কোথায় তা বেআইনি ভাবে দখল করা হয়েছে, সমীক্ষার মাধ্যমে তা চিহ্নিত করা হবে।’’
এমনিতে সরকারি জমি ফাঁকা থাকলে তা দখল হওয়ার ঘটনা আকছার ঘটে। তবে শুধু সরকারি জমিই নয়, ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমির ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা যায়। যেমন নোনাডাঙা বাসস্ট্যান্ডের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট মৌজায় (আর এস দাগ: ৬৩২ (পি)) কেএমডিএ-র একটি খালি জমি জবরদখল হওয়া আটকাতে পাঁচিল দিয়ে ঘেরার জন্য সম্প্রতি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তার জন্য বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ন’লক্ষ টাকা। শুধু ওই জমিই নয়, সংস্থার সমস্ত খালি জমি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। তার জন্য কত ব্যয় হবে, সমীক্ষার দ্বিতীয় পর্যায়ে তা বার করা হবে। সংস্থার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘জবরদখলকারীদের চিহ্নিত করে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফাঁকা পড়ে থাকা জমি ঘিরে দেওয়া হবে।’’
কেএমডিএ-র এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েও অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন, আদৌ জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে। কারণ এ ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টিরই ‘রাজনীতিকরণের’ আশঙ্কা থাকে। যে কারণে প্রশাসন উদ্যোগী হলেও তার বাস্তবায়ন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। ক্ষতি হয় রাজস্বেরও। যেমন, বছর তিনেক আগে ‘কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল’-এর (সিএজি) রিপোর্ট জানিয়েছিল, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া-সহ রাজ্যের ন’টি ‘সাব ডিভিশনাল ল্যান্ড অ্যান্ড ল্যান্ড রিফর্মস অফিসার’ সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ৩৫৮.৯৫ একর সরকারি জমি বেআইনি দখলদারদের অধীনে। বিভিন্ন কারণে দখলদারদের সঙ্গে কোনও সমঝোতায় না আসার কারণে প্রায় ৭৪ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসনিক এক কর্তার কথায়, ‘‘বেআইনি দখলদারদের একদমই যে উচ্ছেদ করা হয় না, তা নয়। কিন্তু আদালতে মামলা গেলে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হয়ে যায়। তখন মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বা উচ্ছেদ পর্ব সম্পন্ন না হলে জমিগুলি দখলেই থেকে যায়।’’
এই পরিস্থিতিতে ‘ইস্ট কলকাতা এরিয়া ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ (ইকেএডি) আওতাভুক্ত এলাকায় কেএমডিএ-র সমীক্ষার আলাদা তাৎপর্য রয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। সংস্থার আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, চার-পাঁচ বছর আগে সংস্থার অধীনস্থ জমি নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু তার উদ্দেশ্য ছিল, যে কাজ বা ব্যবহারের জন্য সংস্থার তরফে বিভিন্ন সংস্থাকে জমি বরাদ্দ করা হয়েছিল, সেই জমি সেই কারণেই ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা। তবে যে সমস্ত জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে, সেগুলির অবস্থা কী— তা তুলে ধরাই বর্তমান সমীক্ষার উদ্দেশ্য।