আর জি কর সেতুর উপরে পিচের আস্তরণের নীচে ক্রমশ ‘অদৃশ্য’ হয়ে গিয়েছে ট্রামলাইন (চিহ্নিত)। শনিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
সেতুর বিপদ এড়াতে গজনবি তথা আর জি কর সেতু থেকে ট্রামলাইন সরিয়ে ফেলবে কেএমডিএ। সম্প্রতি, আর জি কর সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টে সেটির মেরামতির প্রয়োজনের কথা বলা হয়েছে বলে কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। কবে কী ভাবে কাজ শুরু করা হবে তা নিয়ে অবশ্য কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
কেএমডিএ-র আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল, সেখানে পিচের নীচে আটকে ট্রামলাইনের ওজন। কিন্তু ট্রাম ওই সেতুতে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে সেখানে রাস্তা তৈরির জন্য একাধিক বার পিচের আস্তরণ দেওয়া হয়। তার ফলে মাঝেরহাট সেতুর উপরে ভার অনেক বেড়ে গিয়েছিল। একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তাই আর জি কর সেতু নিয়ে সতর্ক রয়েছে কেএমডিএ। আর জি কর সেতুতেও এখন আর ট্রাম চলে না।
আধিকারিকেরা জানান, পুলিশ সবুজ সঙ্কেত দিলেই আর জি কর সেতুর সংস্কারের কাজ শুরু হবে। এই মুহূর্তে আর জি কর সেতু বন্ধ রাখলে সমস্যা দেখা দেবে। কারণ বর্তমানে চিৎপুর সেতুর মেরামতির কাজ চলছে। তাই কর্তৃপক্ষ এই সেতুর মেরামতির ব্যাপারে সময় চাইছেন।
পঞ্চাশের দশকে তৈরি গজনবি তথা আর জি কর সেতু উত্তর কলকাতার সঙ্গে উত্তর শহরতলির অন্যতম যোগসূত্র। টালা সেতুতে যান নিয়ন্ত্রণের পরে এই সেতুর উপরে যানবাহনের চলাচল অনেক বেড়ে গিয়েছে। সেই কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ে এই সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ কোনওরকম ঝুঁকি না নিয়ে আগেই তা করে ফেললেন। এর আগে কেএমডিএ-র আধিকারিকেরা ওই সেতু পরিদর্শন করে প্রাথমিক ভাবে মেরামতির জন্য পরিকল্পনা করেছিলেন। এর পরে রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন, শহরের সব ক’টি উড়ালপুল এবং সেতুর স্বাস্থ্যের অবস্থা কী, তা খুঁটিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে মেরামতির ব্যবস্থা করা হবে। তার পরে দরপত্র ডেকে ওই সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টে কী বলা হয়েছে?
কেএমডিএ-র আধিকারিকেরা জানান, সেতুটি অনেক পুরনো হওয়ায় সেটির রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। সেতুর উপরের রাস্তা পিচের আস্তরণ দিয়ে উঁচু করতে গিয়ে সেতুটি ভারী হয়ে গিয়েছে। সেই পিচের আস্তরণ তুলে ফেলে তার নীচে ঢাকা পড়ে থাকা ট্রামলাইন তুলে ফেলতে হবে। তা হলে, সেতুটির ভার অনেকটাই কমবে। এ ছাড়াও সেতুর খিলানের কোনও অংশ খালের নোংরা জলের সংস্পর্শে এসে কাঠামোর ক্ষতি করছে কি না, তা দেখা প্রয়োজন। এই ধরনের কোনও সমস্যা থাকলে তা পরিবর্তন করতে হতে পারে। আধিকারিকেরা অবশ্য জানিয়েছেন, নোংরা জলের সংস্পর্শে আসার ফলে সেতুটির কোনও অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, তার রিপোর্ট আগামী ক’দিনের মধ্যেই পাওয়া যাবে। তার পরেই কাঠামো সংক্রান্ত ব্যাপারে কী কী মেরামতি প্রয়োজন তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।