ডাঁই: এমনই ই-বর্জ্য পড়ে থাকে যত্রতত্র। ফাইল চিত্র
রাস্তার ধারে স্তূপ করে রাখা বাতিল ইউপিএস, কম্পিউটারের মনিটর এবং অন্য ই-বর্জ্য বা বৈদ্যুতিন বর্জ্য। এমন চিত্র শহরে হামেশাই চোখে পড়ে। অনেকের বাড়িতেও জমতে থাকে এমন সামগ্রী। কোথায় সেগুলি ফেলতে হবে, তা বুঝতে পারেন না নাগরিকেরা। এ বার সেই সমস্যার সমাধানেই এগিয়ে এসেছে কলকাতা পুরসভা।
পুরসভার হেল্পলাইনে কোনও নাগরিক যদি ফোন করে জানান, তাঁর বাড়িতে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ডিভিডি-সহ অন্য বৈদ্যুতিন সামগ্রী পড়ে রয়েছে এবং সেগুলি তিনি সরাতে চান, তা হলে পুরসভার লোক গিয়ে ওই ই-বর্জ্য সংগ্রহ করবেন। ইতিমধ্যেই সেই কাজ শুরু হয়েছে। ই-বর্জ্য রাখার জন্য ধাপার গ্যারাজে একটি আলাদা ঘরও তৈরি করেছে পুরসভা। সংগৃহীত ই-বর্জ্য প্রাথমিক ভাবে সেখানেই রাখা হচ্ছে। পুরসভা সূত্রের খবর, পরবর্তীকালে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ অনুমোদিত সংস্থার মাধ্যমে ওই বর্জ্য পুনর্ব্যবহার (রিসাইকেল) করা হচ্ছে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘কলকাতা পুরসভা প্রথম বার চালু করল এই পরিষেবা। ই-বর্জ্য সংগ্রহের জন্য এ রকম পরিষেবা অন্য পুরসভা চালু করেছে বলে আমাদের জানা নেই।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, টোল-ফ্রি হেল্পলাইন নম্বরে (১৮০০৩৪৫৩৩৭৫) ফোন করে নাগরিকেরা ই-বর্জ্য নিয়ে যাওয়ার কথা জানাতে পারেন। সোম থেকে শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এবং শনিবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ওই লাইন খোলা থাকছে। পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, ই-বর্জ্য সংগ্রহ এবং তা পুনর্ব্যবহারযোগ্য বা নষ্ট করাটা বিশেষজ্ঞ সংস্থার কাজ। তাই কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের জারি করা ‘ই-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুলস, ২০১৬’ অনুযায়ীই সে কাজ করা হচ্ছে। আর পুরসভার নিজস্ব যে ই-বর্জ্য রয়েছে, তা বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলি সরাসরি পুরসভা থেকে সংগ্রহ করে নেয় বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, বৃহত্তর কলকাতায় ই-বর্জ্যের পরিমাণ কত, তা নিয়ে অতীতে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। সে সমীক্ষার আওতায় ছিল ডেস্কটপ কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, টেলিভিশন, ডিভিডি প্লেয়ার ও মোবাইল ফোন। দেখা গিয়েছিল, ২০১০ সালে বৃহত্তর কলকাতায় ই-বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৯৯৯ টন। তার মধ্যে ৯ হাজার ২৯০ টন পুনর্ব্যবহারযোগ্য ছিল। কিন্তু বাস্তবে মাত্র ২ হাজার ২২ টন ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই সমীক্ষার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৯-’২০ সালে বৃহত্তর কলকাতায় ই-বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়ানোর কথা ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮২৩ টন। বর্তমানে ই-বর্জ্যের পরিমাণ তেমনটাই দাঁড়িয়েছে বলে অনুমান পুরকর্তাদের অনেকের। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘প্রতি বছর শহরে প্রায় ২৬ হাজার টন ই-বর্জ্য উৎপন্ন হয়। বর্তমানে সেই পরিমাণ আরও বেড়েছে। ঠিক কতটা বেড়েছে, প্রতি বাড়ি থেকে ই-বর্জ্য সংগ্রহের কাজ চলতে থাকলে তার একটা আন্দাজ পাওয়া যাবে।’’