অপরিষ্কার: ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডে আবর্জনা। সোমবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
শহরের অনেক বাসস্ট্যান্ডের হালই বেশ খারাপ। কোথাও কোথাও সেখানকার বসার জায়গাগুলি ভাঙাচোরা, অপরিষ্কার। আবার অনেক বাসস্ট্যান্ডে রাতে আলো জ্বলে না। ফলে কিছুটা বাধ্য হয়েই যাত্রীরা বাসস্ট্যান্ড থেকে সরে রাস্তায় এসে দাঁড়ান। ট্র্যাফিক-বিধি না মেনে যাত্রীদের তোলার জন্য বাসও এসে দাঁড়ায় ওই জায়গায়। সব মিলিয়ে তৈরি হয় এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির। সেই পরিস্থিতি দূর করতে এ বার শহরের বাসস্ট্যান্ডগুলির দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থাকে দিতে চাইছে কলকাতা পুরসভা।
ওই সংস্থাই বাসস্ট্যান্ড পরিষ্কার রাখা, পর্যাপ্ত আলো লাগানো-সহ সার্বিক দেখভালের কাজ করবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। পরিবর্তে তারা সেখানে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সুযোগ পাবে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ান বহু যাত্রী। ফলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। বাসস্ট্যান্ডগুলিকে যদি যাত্রী-বান্ধব করে তোলা যায়, তা হলে এই পরিস্থিতি দূর করা যাবে।’’
তবে শুধু বাসস্ট্যান্ড পরিষ্কার করা বা সেখানে পর্যাপ্ত আলো লাগানোই নয়, বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় যাতে পুরুষ-মহিলাদের জন্য অস্থায়ী শৌচাগারের (মোবাইল টয়লেট) ব্যবস্থা করা যায়, সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুর প্রশাসন। পুরকর্তাদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, শহরের অনেক বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকাতেই শৌচাগার নেই। বরং বাসস্ট্যান্ড যেখানে, তার থেকে বেশ কিছুটা দূরে শৌচাগারের অবস্থান। ফলে অনেক বাসস্ট্যান্ডের পিছনেই অলিখিত শৌচাগার তৈরি হয়ে যায়। ক্রমশ পুরো পরিবেশই দূষিত হয়ে ওঠে। তার জন্য সংশ্লিষ্ট বাসস্ট্যান্ডটি কিছু দিনের মধ্যেই পরিত্যক্ত হয়ে যায়। এমনটাই উঠে এসেছে পুর সমীক্ষায়। এই সমস্যার সমাধানেই যেখানে যেখানে সম্ভব, সেখানে বাসস্ট্যান্ডগুলির পিছনে অস্থায়ী শৌচাগার বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তারা। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য তৈরি ওই অস্থায়ী শৌচাগারে পর্যাপ্ত জল, আলোর ব্যবস্থা রাখা হবে।
কিন্তু স্থায়ী শৌচাগার তৈরি না করে অস্থায়ী শৌচাগার কেন? পুরকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, বাসস্ট্যান্ড সম্প্রসারণ বা নতুন বাসস্ট্যান্ড তৈরির ক্ষেত্রে জমির অভাব যেমন মূল সমস্যা, স্থায়ী শৌচাগার তৈরির ক্ষেত্রেও সমস্যা সেই এক। সেখানে অস্থায়ী শৌচাগার তৈরির ক্ষেত্রে বেশি জমির প্রয়োজন পড়ে না। তা ছাড়া বাসস্ট্যান্ডের কোথায় ফাঁকা জায়গা রয়েছে, তা চিহ্নিত করে সহজেই ওই শৌচাগার বসানো সম্ভব। এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘আর একটি বড় বিষয় হল আর্থিক সাশ্রয়। স্থায়ী শৌচাগার তৈরির ক্ষেত্রে ন্যূনতম যে টাকার প্রয়োজন হয়, তার থেকে অনেক অল্প খরচে এই অস্থায়ী শৌচাগার তৈরি করা সম্ভব। সব দিক ভেবেই এটা করা হচ্ছে।’’ ওই কর্তা জানান, এই শৌচাগার তৈরি হবে পুরসভার এন্টালি ওয়ার্কশপে। সেগুলি বাইরে থেকে কেনারও প্রয়োজন নেই।
কতগুলি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী শৌচাগার বসানো যাবে, তা পুর বিজ্ঞাপন দফতরের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করেছেন এন্টালি ওয়ার্কশপের কর্তারা। ওয়ার্কশপের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ সামসুজ্জামান আনসারি বলছেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে ১০০টি অস্থায়ী শৌচাগার তৈরি হবে।’’