প্রতীকী ছবি।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে অবশেষে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে হাওড়ার পাশে দাঁড়াল কলকাতা পুরসভা। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে বুধবার হাওড়া পুরসভায় এসে ডেঙ্গি মোকাবিলার জন্য কলকাতা পুরসভার সামগ্রিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। মন্ত্রী জানান, আবর্জনা ও নিকাশি নালা সাফাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেবে কলকাতা পুরসভা। পাশাপাশি তিনি ঘোষণা করেন, যে ৪১৯ জন অস্থায়ী কর্মীকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজে ‘স্পেশ্যাল সুপারভাইজার’ হিসেবে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গত কয়েক দিনে হাওড়া পুর এলাকায় মারাত্মক আকার নিয়েছে ডেঙ্গি। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, আক্রান্ত প্রায় আড়াই হাজার। অথচ অভিযোগ, রোগ নিয়ন্ত্রণে হাত গুটিয়ে রয়েছে পুরসভা। এ দিন খোদ পুর কমিশনার মেনে নেন, পুর স্বাস্থ্য দফতরের অফিসার এবং কর্মীরা ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকাগুলির তথ্য ঠিক মতো দেননি। কাজও করেননি। এমন সব অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরেই এ দিন দুপুরে হাওড়া পুরসভায় এসে হাজির হন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ। পুরসভার কনফারেন্স রুমে কমিশনারের পাশাপাশি তিনি ডেকে পাঠান জেলাশাসক মুক্তা আর্য, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাসকে। বৈঠক চলাকালীন তাতে যোগ দেন কলকাতা পুরসভার কমিশনার খলিল আহমেদও। বৈঠকের শেষ দিকে ফিরহাদ ডেকে পাঠান সদ্য কাজ হারানো ৪১৯ জন কর্মীর মধ্যে পাঁচ জন প্রতিনিধিকে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে পুনর্নিয়োগের কথা জানান।
বৈঠকের পরে মন্ত্রী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন তিনি পরিচ্ছন্ন, সুন্দর হাওড়া দেখতে চান। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। তার জন্যই এ দিন বৈঠক করলাম, যাতে কলকাতা পুরসভার অভিজ্ঞতা ও যন্ত্রপাতি কাজে লাগিয়ে দ্রুত ডেঙ্গি এবং আবর্জনা সংক্রান্ত সমস্যার মোকাবিলা করা যায়।’’ তাঁর দাবি, গত কয়েক দিনে হাওড়ায় ডেঙ্গির
প্রকোপ কমেছে। আগামী কয়েক দিনে আরও কমবে।
পুরমন্ত্রী জানান, সংবাদপত্রে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে নর্দমা এবং খালে ভাসছে আবর্জনা। ওই আবর্জনা সাফ করার জন্য বাইরের সংস্থার মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে যাতে
নিয়ম মেনে কাজ হয়, তা নিয়েও এ দিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ফিরহাদের কথায়, ‘‘হাওড়ায় আবর্জনা সাফ করার জন্য বিশেষ অভিযান চালানো হবে। যেহেতু হাওড়াকে কলকাতার যমজ শহর বলা হয়, তাই হাওড়া পুর এলাকা পরিষ্কার রাখার জন্য সর্বতোভাবে সাহায্য করবে কলকাতা পুরসভা। দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।’’
মন্ত্রী আরও জানান, যেখানে ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে বা যে অঞ্চলের জঞ্জাল পরিষ্কার হয়নি, সেখানে পৌঁছে যাবেন স্পেশ্যাল সুপারভাইজারেরা। তাঁরা সব জায়গা ঘুরে দেখবেন। তার পরে হোয়াটসঅ্যাপে স্বাস্থ্য দফতর ও সাফাই দফতরের আধিকারিকদের রিপোর্ট পাঠাবেন। রিপোর্ট পাওয়ার পরে ওই সব জায়গায় স্পেশ্যাল অফিসারের নেতৃত্বে লরি, ব্লিচিং পাউডার, লার্ভিসাইড অয়েল নিয়ে পৌঁছে যাবে স্বাস্থ্য দফতরের মশা দমন বাহিনী। মন্ত্রী জানান, খোলা নর্দমা সাফাইয়ের জন্য কলকাতা পুরসভা থেকে কয়েকটি মেশিনও পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে জল জমার সমস্যা খানিকটা মেটে।
এ দিকে ডেঙ্গি মোকাবিলার জন্য ইতিমধ্যেই হাওড়ার জেলাশাসক এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছেন, আগামী শুক্র ও শনিবার হাওড়া পুরসভা এলাকায় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং সব সরকারি অফিসে বিশেষ সাফাই অভিযান চলবে। সরকারি অফিসারদের ওই দু’দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।