সংস্কার: এই ঝিলের সৌন্দর্যায়ন শুরু হতে চলেছে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
বিক্রমগড় ঝিল সংস্কারে ফের উদ্যোগী হল কলকাতা পুরসভা।
শুধুমাত্র ঝিলের সৌন্দর্যায়নই নয়, এই ঝিলের সীমানা নির্ধারণ করা এবং ঝিলকে আবর্জনামুক্ত করার উপরে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার বরো মিটিংয়ে এই ঝিলের পুনরুদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেই বৈঠকে স্থানীয় বরো চেয়ারম্যান ছাড়াও টালিগঞ্জের বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন।
দশ নম্বর বরোর অন্তর্গত এই ঝিলটি। বরো চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘দক্ষিণ কলকাতায় রবীন্দ্র সরোবরের পরে বিক্রমগড় ঝিল বিস্তীর্ণ এলাকার অন্যতম ‘ফুসফুস’। কিন্তু এই জলাশয়ের অনেকটাই বাম আমলে ভরাট হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে, তৃণমূল পুর বোর্ড ওই জলাশয়টি পুনরুদ্ধার করার ব্যাপারে সচেষ্ট হয়েছিল। ঝিল কিছুটা সংস্কার হলেও এখনও অনেকটাই বাকি।’’ তিনি জানান, পুরসভার কাছে এই জলাশয়ের যা তথ্য রয়েছে তা থেকে থেকে জানা গিয়েছে, বিক্রমগড় ঝিলের মোট আয়তন প্রায় ১৪ বিঘা। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে ওই ঝিল বিক্ষিপ্ত ভাবে বুজিয়ে ফেলায় তা এখন দাঁড়িয়েছে আট বিঘায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই জলাশয়ের কিছু জমি দখল হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। শুধু তাই নয়, এলাকার আবর্জনা ফেলে কিছুটা বুজিয়েও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের অনেকের দাবি, ঝিল পরিষ্কার করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল পুরকর্মীদের।
কলকাতা পুরসভার এক পদস্থ কর্তা জানান, সবার আগে প্রয়োজন বিক্রমগড় ঝিলের সীমানা নির্ধারণ করা। এই সংস্কার প্রকল্পের জন্য রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতর ২ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল। সেই টাকায় কিছুটা পরিষ্কার করে কয়েকটি শালবল্লা বসানো হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তার পর থেকে আর কোনও কাজ এগোয়নি। সরকারি বরাদ্দের কিছু টাকা এখনও রয়ে গিয়েছে। বর্তমানে, রাজ্যের ‘গ্রিন মিশন’ প্রকল্পে এই জলাশয়ের সংস্কার হওয়ার কথা। তপনবাবু জানান, এর জন্য বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে জমা দেওয়ার পরেই বাকি টাকার সংস্থান হবে।
কলকাতা পুরসভার ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত এই এলাকার বিধায়ক রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার সঙ্গে এই ঝিলের সংস্কারের নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আপাতত ঝিলের ৪০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। বাকি যে অংশের কাজ বাকি, তা শেষ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপাতত একটি সংস্থাকে এই কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হবে।’’ তিনি জানান, ঝিলের ভৌগোলিক সীমানা চিহ্নিতকরণের পরেই জলাশয়ের ধারে প্রাতর্ভ্রমণে আসা স্থানীয়দের দৌড়োনোর ব্যবস্থা করা হবে। তার পরেই ঝিলের সামগ্রিক সৌন্দর্যায়নে নজর দেবে পুরসভা।
ঝিল বোজানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আর এস পি-র দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ঝিল ভরাট যদি কোনও দল করে থাকে, তবে সেই অভিযোগ বর্তমান শাসক দলের বিরুদ্ধে। সেই কারণেই মন্ত্রীর নেতৃত্বে ঝিল সংস্কার নিয়ে বৈঠক করতে হচ্ছে। যদিও কতটা সে কাজ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’’